চট্টগ্রামের পটিয়ায় সদ্য সমাপ্ত চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চারটি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের ভরাডুবি হয়েছে। এ নিয়ে এখনও উপজেলাজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এমপির নির্বাচনী এলাকার ১৭টি ইউনিয়নের ৪টিতেই দলীয় প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে। এ চারটি ইউনিয়নে ভোটারের কাছে গুরুত্ব পায়নি দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলের প্রতীক নৌকা। দলীয় প্রতীক ছাড়াই এসব ইউপিতে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
ভোটে জয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন কুসুমপুরা ইউনিয়নের জাকারিয়া ডালিম, জঙ্গল খাইন ইউনিয়নের শাহাদাত হোসেন সবুজ, কোলাগাঁও ইউনিয়নের মাহবুবুল হক চৌধুরী ও হাইদগাঁও ইউনিয়নের বি এম জসিম।
এ চারটি ইউনিয়নে দল মনোনীত প্রার্থীদের এমন বিপর্যয়ে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে যেমন তোলপাড় চলছে, তেমনি ক্ষুব্ধ পরাজিত দলীয় প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মাঝে।
এসব ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থীর হারের পর্যালোচনা শুরু হয়েছে, কারণ খুঁজছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারাও। আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের ভরাডুবির কারণ খুঁজতে গিয়ে দলীয় নেতাকর্মী, ভোটার, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এবং রাজনৈতিক সচেতন মহলের সঙ্গে কথা হয়। তাদের বিশ্লেষণে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের পরাজয়ের পেছনে পাঁচটি কারণ উঠে এসেছে। কারণগুলো হচ্ছে— সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী না দেওয়া, বিদ্রোহ দমাতে ব্যর্থতা, নৌকার বিরোধিতায় বিএনপি এবং বিগত সময়ের অপেক্ষায় সুষ্ঠু ভোট হওয়া। এই কারণগুলোর সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাও।
তারা জানিয়েছেন, দলের প্রতি তৃণমূল নেতাকর্মীদের আনুগত্য না থাকায় এবং বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণেই ফল বিপর্যয় হয়েছে। এছাড়া বিএনপি ও তাদের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কৌশলী প্রচারণাও ভোটারদের প্রভাবিত করেছে।
তারা বলছেন, পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের আরও ঐক্যবদ্ধভাবে ভোটের প্রচারণায় সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি উন্নয়নের পরিকল্পনা তুলে ধরার মাধ্যমে ভোটারদেরও কাছে টানতে হবে। এক্ষেত্রে গুরুত্ব ভূমিকা পালন করতে হবে স্থানীয় নেতাকর্মীদের। এছাড়া অর্থের বিনিময়ে তৃণমূলে কোনো প্রার্থী বাছাই করা হয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখার দায়িত্ব নিতে হবে উপজেলা কমিটিগুলোকে।
পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশীদ বলেন, ইউপি নির্বাচনে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই ভোট হয়েছে। শেখ হাসিনার অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে এই নির্বাচনে আবারও প্রমাণিত হয়েছে।
নির্বাচনে চারটি ইউনিয়নে নৌকার ভরাডুবির বিষয়ে তিনি বলেন, তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে নমিনেশন বোর্ড প্রার্থী দিয়েছে। তৃণমূলের এরা তো আর ফেরেস্তা নয় যে শতভাগ যাচাই করতে পারবে, কার অবস্থান ভালো। আর স্থানীয় সরকার নির্বাচনে গোষ্ঠীগত, পাড়া-প্রতিবেশীর প্রভাব থাকে সেটাই হয়েছে। তৃণমূল সংগঠন যারা করে, তাদের রাজনীতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে প্রতীকে নির্বাচন দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলে কষ্ট করে রাজনীতি করে, তারাও নৌকায় নির্বাচন করা এবং ভোট দেওয়ার আশা রাখে।
বিদ্রোহীদের বিষয়ে সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জেলা-উপজেলা থেকে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। দলের বিদ্রোহীরা বিজয়ী হলেও তাদের ফেরার সুযোগ নেই। তাদের স্থায়ীভাবে দল থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত কেন্দ্র নেবে।
সাবেক ছাত্রনেতা ও পটিয়া পৌরসভার ৪ নং ওয়াডের কাউসন্সিলর গোফরান রানা জানান, এই বিদ্রোহীদের জেতানোর জন্য এবং নৌকার প্রার্থীদের পরাজয়ের জন্য আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতারা দায়ী। কারণ তারা বিদ্রোহীদের পক্ষে কাজ করেছেন— এটা দিবালোকের মত সত্য কথা। কারণ আওয়ামী লীগের যারা প্রার্থী ছিলেন, তাদের বিপক্ষে ইউনিয়ন পর্যায়ের অনেক সভাপতি ও সেক্রেটারি নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছেন, ফলে নৌকার পরাজয় হয়েছে। এই বিদ্রোহীদের যেন কখনও আওয়ামী লীগে স্থান না হয়।
উপজেলার আরেক সাবেক ছাত্রনেতা ও পৌর যুবলীগের সভাপতি নুর আলম সিদ্দিকী বলেন, প্রথমত প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো। দ্বিতীয়ত, উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যারা আছে তাদের সাংগঠনিক নেতৃত্ব স্থবির হয়ে পড়েছে। নৌকার সমর্থিত নেতাকর্মীদের মাঠে নামাতে পারিনি। দীর্ঘ সময় দল ক্ষমতায় আছে কিন্তুু তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়নের কারণে আজ নৌকার ভরাডুবি এই সুযোগটি বিরোধী দলের লোকেরা ভোটের মাঠে কাজে লাগিয়েছে।
সিপি