৪ আসামিই বললেন ওইদিন তারা ঘটনাস্থলে ছিলেন না

চট্টগ্রামে গণহত্যা মামলা

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যার অপরাধে অভিযুক্তদের ৪ জন আদালতে সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষ্য গ্রহণ ও রাষ্ট্র পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে ৪ আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

রোববার (১৯ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ মো. ইসমাইল হোসেনের আদালত এই আদেশ দেন। সোমবার আসামি পক্ষ তাদের যুক্তি উপস্থাপন করার দিন ধার্য করা হয়েছে। যুক্তি উপস্থাপন শেষে ধার্য হবে দীর্ঘ প্রতিক্ষিত রায়।

সাফাই সাক্ষ্য দিয়ে কারাগারে যাওয়া ৪ আসামি হলেন- পুলিশের তৎকালীন হাবিলদার প্রদীপ বড়ুয়া, কনস্টেবল মমতাজ উদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান ও মো. আব্দুল্লাহ। এ মামলার অপর ৪ আসামির মধ্যে প্রধান আসামি চট্টগ্রামের তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদা, কনস্টেবল বশির উদ্দিন ও আব্দুস সালাম মৃত্যুবরণ করেছেন। ইন্সপেক্টর গোপাল চন্দ্র (জেসি) মণ্ডল ঘটনার পর থেকে নিরুদ্দেশ। তিনি ছিলেন কোতোয়ালী অঞ্চলের পেট্রোল ইন্সপেক্টর।

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলী এডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ১৯ জানুয়ারি এই মামলায় অভিযুক্ত চার আসামি আদালতে সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছে। আমরা আমাদের যুক্তি উপস্থাপন করেছি। আগামী কাল (২০ জানুয়ারি) আসামি পক্ষ তাদের যুক্তি উপস্থাপন করবেন। আমরা আশা করছি এ মামলার রায় হয়তো ২৪ জানুয়ারির আগেই ঘোষণা হতে পারে। উক্ত মামলায় ৫৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।

সাফাই সাক্ষ্য ও যুক্তি উপস্থাপনের সময় আসামি পক্ষে অংশ নেন এডভোকেট আহসানুল হক হেনা, ব্যারিস্টার সাইয়্যেদ মঈনুল আহসান।

আদালত সূত্রে জানা যায়, চার আসামিই নির্দোষ দাবি করে সেদিন ঘটনাস্থলে কেউ উপস্থিত ছিলেন না বলে দাবি করেন।

১৪ জানুয়ারি ৫৩ নম্বর সাক্ষি এডভোকেট সম্ভুনাথ নন্দি আদালতে তার সাক্ষ্যে বলেন, ‘ঘটনার দিন লালদিঘী ময়দানে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশ ছিল। পাশাপাশি চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী মিলনায়তনে আইনজীবীদের সাথে মতবিনিময় সভা ছিল। আমরা তাঁর আগমনের অপেক্ষায় ছিলাম। নেত্রীর গাড়ি নিউমার্কেট মোড় অতিক্রম করে জিপিওর সামনে পৌঁছানো মাত্রই মামলার প্রধান আসামি রকিবুল হুদার নির্দেশক্রমে অন্যান্য আসামিরা নেত্রীর গাড়ি বহর লক্ষ করে নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করেছিল। এতে ২৪ জন নেতাকর্মী মৃত্যুবরণ করেন। আহত হন অসংখ্য।’

এর আগে ২০ নভেম্বর সাংবাদিক কামরুল ইসলাম আদালতে বলেন, ‘তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রীর সমাবেশ কভারের দায়িত্ব ছিল আমার উপর। আমি তখন দৈনিক খবরের প্রতিবেদক ছিলাম। চোখের সামনে পুলিশের গুলিতে আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মীকে হতাহত হতে দেখলাম। তাৎক্ষণিকভাবে ২৪ জন নিহত হওয়া নিশ্চিত হয়েছিলাম আমরা। এই খবরের ফলোআপ প্রতিবেদন করার জন্য পরের দিন যখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই, তখন পুলিশ আমাকেসহ আমাদের গণমাধ্যমে কর্মরত কোনও সাংবাদিককে হাসপাতালে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।’

প্রসঙ্গত, ২৪ জানুয়ারি ১৯৮৮ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা লালদিঘীতে জনসভা ও চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করতে আসার পথে নিউ মার্কেট মোড় অতিক্রম করে জিপিওর সামনে আসলেই আচমকা গর্জে উঠেছিল চট্টগ্রাম নগর পুলিশের রাইফেল। এলোপাথাড়ি গুলিতে একে একে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন মো. হাসান মুরাদ, মহিউদ্দিন শামীম, এথলেবার্ট গোমেজ কিশোর, স্বপন কুমার বিশ্বাস, স্বপন চৌধুরী, পঙ্কজ বৈদ্য, বাহার উদ্দিন, চান্দ মিয়া, অজিত সরকার, রমেশ বৈদ্য, বদরুল আলম, ডি কে চৌধুরী, পলাশ দত্ত, আব্দুল কুদ্দুস, গোবিন্দ দাশ, শাহাদাত, সাজ্জাদ হোসেন, আব্দুল মান্নান, সবুজ হোসেন, কামাল হোসেন, বি কে দাশ, সমর দত্ত, হাসেম মিয়া ও মো. কাসেম।

৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ আইনজীবী মো. শহীদুল হুদা বাদি হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মামলাটি পুনরায় প্রাণ ফিরে পায়। আদালতের আদেশে মামলাটি তদন্তের ভার পড়ে সিআইডির ওপর। সিআইডি ১৯৯৭ সালের ১২ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে আদালতে। আবারও আদালতের নির্দেশে অধিকতর তদন্ত শেষে ১৯৯৮ সালের ৩ নভেম্বর পুলিশের আট সদস্যকে আসামি করে দ্বিতীয় দফায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

এফএম/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!