৪৮ বছরের অধরা স্বপ্ন এবার ছুঁতে চান খোরশেদ আলম সুজন

সেই নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে রাজনীতিতে শুরু পথচলা। সেই থেকে প্রায় ৫০ বছরের বর্ণিল রাজনীতিক ক্যারিয়ারে অনেকবার সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন লাভের সুযোগ আসলেও তা বারবারই হাতছাড়া হয়েছে। কিন্তু রাজনীতির মাঠে সজ্জন পরিছন্ন পোড় খাওয়া এই নেতা অন্তত জীবনের শেষ বেলাটুকু মানুষের সেবা করেই বাঁচতে চান। এমপি পদের মনোনয়ন হাতের নাগালে এসে ফসকে গেলেও এবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশার পাশাপাশি কথা বলেছেন বর্তমান মেয়রের কর্মকাণ্ড নিয়েও। এছাড়া তিনি শুনিয়েছেন তার বর্ণিল রাজনৈতিক জীবনের নানা বঞ্চনার গল্পও।

মেয়র নির্বাচনে মনোনয়ন চাইবেন জানিয়ে জাতীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘আমি অবশ্যই মেয়র পদে মনোনয়ন চাইব। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে তিনবার এমপি পদে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। প্রতিবারই আমার মনোনয়ন রাতের আঁধারে চুরি হয়েছে রহস্যজনক কারণে। আমি মেনে নিয়েছি। মেনে নিচ্ছি। কারণ এমপি-মন্ত্রীই আমার রাজনীতির একমাত্র ব্রত নয়। রাজনীতি করি জনগণের জন্য, ৪৮ বছর ধরেই জনগণের সুখ-দুঃখ নিয়ে রাজনীতি করছি। তবে এবার শেষটা দেখে ছাড়বো। মনোনয়ন না পেলেও জনগণের জন্য মাঠে আছি থাকবো।’

নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরুর কথা জানিয়ে নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘আমি চট্টগ্রাম ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমানে মহসীন কলেজ) ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের প্রথমে সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করি। চবি থেকে সমাজতত্ত্বে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই লাইব্রেরি সায়েন্সে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে ১৯৮৬ সালে জাতীয় ছাত্রলীগের সভাপতি হই। ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি সদ্য প্রয়াত আবদুল মান্নানসহ তৎসময়ে শীর্ষ ছাত্রনেতারা মিলে সংগ্রাম কমিটি গড়ে তুলি। নেতৃত্ব দিয়েছি জিয়াবিরোধী, এরশাদবিরোধী, খালেদাবিরোধী, জামায়াত-শিবির মৌলবাদবিরোধী, সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী সকল আন্দোলনে।’

৪৮ বছরের অধরা স্বপ্ন এবার ছুঁতে চান খোরশেদ আলম সুজন 1

খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘জনকল্যাণমূলক কাজকে আমি ধ্যান-জ্ঞান করে রাজনীতি করছি। এমপি-মন্ত্রী কিংবা মেয়র হয়তো হতে পারিনি, কিন্তু জনগণের ভালোবাসা পেয়েছি। চোর, ডাকাত, মাস্তান বলে তো অন্তত কেউ গালি দিচ্ছে না— এটাই আমার কাছে পরম প্রাপ্তি। কী পেলাম তার হিসাব আমি খুব একটা করি না। আমার মাঝে কোনো হতাশা নেই। বেদনাও নেই। মাঠেই আমার জন্ম, মাঠেই যেন আমার মরণ হয়— সেটাই আমার বড় প্রার্থনা।’

তিনি বলেন, ‘আমার বয়স এখন ৬২ চলছে। সেই হিসেবে সময় হয়তো আর খুব বেশি নেই। প্রতিটি রাজনীতিক ব্যক্তির মনের মধ্যে একটু-আধটু স্বপ্ন থাকে জনপ্রতিনিধি হওয়ার। জনপ্রতিনিধি সেবা করার একটা বড় প্লাটফরম। এ প্লাটফরম থেকে জনগণের জন্য বৃহত্তর পরিসরে কাজ করার সুযোগ থাকে। তাই শেষ সময়ে এসে আমি সেই সুযোগটি কাজে লাগাতে চাই। নগরজুড়ে আমার বিচরণ। নগরের পথঘাট, মানুষজন সব আমার চেনা।’

সুজন আরও বলেন, ‘১৭ বছরের মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছায়াসঙ্গী হিসেবে আমি তার পুরোটা সময় সঙ্গে ছিলাম। নগর উন্নয়নে কাছ থেকে দেখেছি তিনি কীভাবে কাজ করেছেন। মানুষকে কাছে টেনেছেন, নাগরিক-কল্যাণ সাধন করেছেন। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর জন্য, মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্বপ্ন পূরণের জন্য আমি এবার মেয়র পদে মনোনয়ন চাইব। এবারও যদি বঞ্চিত হই, কিছু করার নেই। তখন আমি জনগণের ভালোবাসা নিয়ে বাকি জীবন কাটিয়ে দেব।’

নগরবাসীর যেকোনো সংকটে পাশে ছিলেন জানিয়ে খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘চট্টগ্রামের প্রায় প্রতিটি পাড়াই আমার চেনা। মানুষের অন্তরে অবস্থান নিতে সক্ষম হয়েছি। রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করে জনগণের জন্য যে কল্যাণকর অনেক কিছুই করা যায় তা পূরণ করতেই আমি এবার অবশ্যই মনোনয়ন চাইবো। গত মেয়র নির্বাচনেও আমাকে মনোনয়ন দেওয়ার কথা উঠেছিল। চট্টগ্রাম থেকে যে ৬ জনকে নেত্রী ডেকে নিয়েছিলেন তার মধ্যে আমিও ছিলাম।’

বর্তমান মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন সম্পর্কেও কথা বলেছেন সহ সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। তিনি বলেন, ‘নাছির মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর গত ৫ বছরে যেভাবে সিটি করপোরেশনের কাজে সময় দেওয়ার দরকার ছিল সেভাবে সময় দিতে পারেননি। তাছাড়া তার অভিজ্ঞতার ঘাটতি ও সরকারি বিভিন্ন সেবা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়হীনতার কারণে নগরবাসী তার কাছ থেকে প্রত্যাশিত সেবা পাননি। একজন মেয়র নাগরিক সুযোগ সুবিধা নিয়ে যেভাবে যে স্পিডে কাজ করার কথা ছিল তিনি পুরোপুরি তা পারেননি।’

সমন্বয়হীনতা দূর করতে সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর উদাহরণ টেনে বলেন, ‘মহিউদ্দিন ভাই অফিসিয়ালি কিছু করতে না পারলেও চট্টগ্রামের সকল সেবা সংস্থার প্রধানগণকে বাসায় ভাতের দাওয়াত দিয়ে একসঙ্গে বসতেন। ভাত খেতে খেতেই তিনি ওয়াসা, সিডিএ, বন্দরসহ নানা সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের কাছ থেকে কাজ আদায় করে নিতেন। কিন্তু মেয়র নাছির কি কখনও এই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন? সে কারণে নগরীর অনেক মানুষ মনে করছেন নাছির নগরবাসীর প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। আমি আরবান প্ল্যানিং নিয়েও পড়ালেখা করেছি। আমি আপাদমস্তক একজন রাজনৈতিক কর্মী। তাই আমাকে মেয়র পদে মনোনয়ন দিলে আমি যদি নির্বাচিত হই তাহলে নগরবাসীর জন্য শেষ জীবনটা উৎসর্গ করতে চাই।’

মুক্তিযুদ্ধকালের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করেছি। বঙ্গবন্ধু যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়ে চট্টগ্রাম আসেন তখন আমি সামনে থেকে দেখেছিলাম। একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী যখন জালালাবাদ পাহাড়ে আক্রমণ করে তখন পাহাড় বেয়ে অনেক আহত বাঙালি সৈন্য আসেন, তাদের সেবা করি আমরা। পঁচাত্তরের পর রাজনৈতিক দুর্যোগের সময় প্রতিনিয়ত বঙ্গবন্ধুর কর্মীদের জাগিয়ে তুলতে কাজ করেছি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ঘরোয়া রাজনীতির সুযোগ নিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি ও ছাব্বিশে মার্চে কর্মসূচি পালন করেছি।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!