৪৫ মিনিটের বৃষ্টি/ চট্টগ্রামের পথঘাট ছেড়ে জলাবদ্ধতা উড়ালসড়কের বুকেও (ভিডিও)

পথঘাট ছেড়ে জলাবদ্ধতা এখন উড়ালসড়কের বুকে। আষাঢ়স্য মাসের প্রথম দিনের ২২ মিলিমিটার বৃষ্টিতেই প্লাবিত নগরীর নিম্নাঞ্চল। হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে সড়কের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি-দোকান। ৪৫ মিনিটের বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা ঠাঁই করে নেয় উড়ালসড়কেও।

শনিবার (১৫ জুন) সকাল থেকেই চট্টগ্রামের আকাশ ছিল মেঘলা। দুপুর দেড়টার পর থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়তে শুরু করে। আর পৌনে ২টার দিকে শুরু হয় ভারী বাতাসসহ বৃষ্টিপাত। ৪৫ মিনিটের বৃষ্টিতে ২২ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

নগরীর পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শেখ ফরিদ আহমেদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, দুপুর পৌনে ২টা থেকে ২টা পর্যন্ত ঘন্টায় ৬০ থেকে ৬৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যায়। এ সময় মাঝারি বৃষ্টিপাতও হয়, যা প্রায় ৪৫ মিনিটের মতো স্থায়ী ছিল।

আবহাওয়া নিয়ে তিনি আরও বলেন, আগামী ২৪ ঘন্টা আকাশ মেঘলা থাকতে পারে। সেই সঙ্গে ঝড়ো হাওয়ার সাথে মাঝারি আকারের বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনাও রয়েছে।

হাঁটু থেকে কোমর পানি, দুর্ভোগে নগরবাসী
ঈদের ছুটির পর আজ থেকেই বিভিন্ন স্কুল কলেজের ক্লাস শুরু হয়েছে। ৪০ মিনিটের বৃষ্টিতেই নগরীর বিভিন্ন এলাকা হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে। স্কুল ছুটির পর বাচ্চাদের নিয়ে বিপাকে পড়েন অভিভাবকরা। জোহুরা জুহি নামে এক অভিভাবক জানান, ‘ব্যাঙের ছাতার মতো বৃষ্টিতে যদি নগরের এই অবস্থা হয় তাহলে পুরো বর্ষায় কী হবে!’

ছোট-বড় নালাগুলোর আবর্জনা অপসারণ না করায় সামান্য বৃষ্টিতেও এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ নগরবাসীর।

ব্যাংক কর্মকর্তা আতিকুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘লাঞ্চে এসে আটকা পড়লাম পথে, যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে এখন থেকে নৌকা নিয়ে নামতে হবে পথে!’

সরেজমিনে দেখা যায়, বৃষ্টিতে নগরীর দুই নম্বর গেইট থেকে মুরাদপুরের দিকে সড়কের দুই পাশ এবং জিইসি মোড়ের দিকে সড়কের বড় অংশ পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়া নগরীর ওয়ারল্যাস গেইট এলাকায়ও নালা উপচে হাঁটু পানি জমে ছিল।

জলাবদ্ধতায় হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে নগরীর অনেক নিম্নাঞ্চল। শুলকবহর, কাতালগঞ্জ এলাকায় বিভিন্ন অলিগলিতেও হাঁটু পানি মাড়িয়ে পথ চলতে দেখা গেছে সেখানকার বাসিন্দাদের। এছাড়া বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, চকবাজার, কাপাসগোলা, পশ্চিম বাকলিয়া এলাকায় জলাবদ্ধতার পাশাপাশি নগরীর জামালখান, বাগমনিরাম, আন্দরকিল্লা, শুলকবহর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায়ও জলাবদ্ধতার খবর পাওয়া গেছে।

উড়ালসড়ক যখন হাঁটু পানির গভীরে
বর্ষা এলেই বৃষ্টি পড়বে আর বৃষ্টি হলে পানি জমবে। সামান্য বৃষ্টিতে পানি জমে গেছে আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার। ফলে বেকায়দায় পড়েন ব্যবহারকারীরা। এতে জনদুর্ভোগের পাশাপাশি জীবন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়েছে চালকদের।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সামান্য বৃষ্টিতে দুই নম্বর গেট থেকে বায়েজিদমুখী র‌্যাম্প ও লুপের ওঠানামার স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। অন্যান্য অংশের মতো পাইপ থাকলেও সেখানে পানি জমে থাকছে দীর্ঘক্ষণ। এ ছাড়া মূল ফ্লাইওভারের অনেক স্থানে জমে গেছে পানি।নিষ্কাশনের জন্য লাগানো পাইপগুলো সরু হওয়ায় দ্রুত পানি সরতেও সময় লাগছে।

এ প্রসঙ্গে সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও উড়ালসড়ক প্রকল্পের পরিচালক মাহফুজুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বৃষ্টি হলে তো পানি জমবে। এটা স্বাভাবিক। বৃষ্টি থামার ১০-১৫ মিনিটের ভেতরেই পানি নেমে যাবে। যদি না নামে তবে আমাকে বলবেন।’

এর সাথে যোগ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমি যখন চীনে গিয়েছি সেখানেও বৃষ্টির সময় পানি জমে থাকতে দেখেছি।’

জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ‘বৃষ্টি হলে কিছু কিছু নালায় পানি জমে যায়। আবার সেগুলো গড়িয়ে আবার রাস্তায় চলে আসে। আমরা ছোট ছোট নালা সংস্কার ও ময়লা অপসারণ করেছি। বড় নালাগুলো জলাবদ্ধতা প্রকল্পের আওতায় পরিস্কার করা হবে। বাস্তবে যেটা হয়েছে বড় নালা এবং খালে আবর্জনা আটকে আছে। সুতরাং বৃষ্টি হলেই কিন্তু জলাবদ্ধতা ঠেকানো কঠিন হয়ে যায়।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!