৪৫ বছর বয়সী বউকে খুন করে ২৭ বছরের স্বামী পালিয়ে আসেন চট্টগ্রামে, আড়াই বছর পর ধরা

নাম-ঠিকানা-এনআইডি সবই ছিল ভুয়া

দুই বছর আগে ঢাকায় স্ত্রীকে খুন করার পর পালিয়ে আসেন চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে। সেখানে আসার পর করেন দ্বিতীয় বিয়ে। দুই বিয়ের ক্ষেত্রেই আসল পরিচয় গোপন রাখেন তিনি। ফলে ঢাকার স্ত্রীকে খুন করার পরও পুলিশ এই খুনির হদিস পাচ্ছিল না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আড়াই বছর পর একটি মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে চট্টগ্রাম থেকে খুনিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

২০১৯ সালের ১৬ মে দিবাগত রাতে ঢাকার পল্লবীতে খুন হন গৃহবধূ মুনিয়া ইসলাম। সেই থেকে তার স্বামীর হঠাৎ উধাও হয়ে গেলেও প্রায় আড়াই বছর পর শনিবার (১৩ নভেম্বর) চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে স্বামী আহসান উল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এরপর মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) স্ত্রী হত্যার দায় স্বীকার করে নিয়ে ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন আহসান উল্লা।

সেই জবানবন্দিতে আহসান উল্লা বলেছেন, স্ত্রী মুনিয়া ইসলামের চেয়ে বয়সে ১৭ বছরের ছোট ছিলেন তিনি। বয়সের এই তফাৎ নিয়ে তার মধ্যে অস্বস্তি ছিল। অন্যদিকে স্ত্রী সন্দেহ করতেন, তার সঙ্গে অন্য কারও সম্পর্ক ছিল। এসব কারণে পারিবারিক কলহ চরমে পৌঁছে। এর একপর্যায়ে ওয়াইনের বোতল দিয়ে স্ত্রীর মাথায় আঘাত করে তাকে হত্যা করেন।

পুলিশ জানিয়েছে, প্রথম বিয়ের সময় আহসান উল্লা তার আসল পরিচয় গোপন রেখেছিলেন। মিরপুরে একটি মোজার কারখানায় কাজ করতেন তিনি। ২০১৯ সালের শুরুর দিকে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে মুনিয়ার সঙ্গে আহসান উল্লার পরিচয় হয়। তখন নিজেকে হাসান বলে পরিচয় দিয়ে গ্রামের বাড়ি উল্লেখ করেছিলেন বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ। বিয়ের আগে মুনিয়ার পরিবার আহসান উল্লার বিষয়ে কোনো খোঁজই নেয়নি।

তবে কিছুদিন পরই তারা বিয়ে করেন। বিয়ের সময় আহসান উল্লার বয়স ছিল ২৭ বছর এবং মুনিয়ার বয়স ছিল ৪৫ বছর। মুনিয়া নিজের পছন্দেই বিয়ে করেন আহসানকে। তবে বয়সের এই তফাত আহসান উল্লা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না।

ধরা পড়ার পর আহসান উল্লা পুলিশকেও জানিয়েছেন, ওই বিয়েতে তার মত ছিল না। তিনি বাধ্য হয়ে মুনিয়াকে বিয়ে করেন।

আহসান উল্লা দাবি করেছেন, বিয়ের পর থেকে মুনিয়া তাকে নানাভাবে নির্যাতন করতেন। খুনের ঘটনার দিন রাতেও তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। ঝগড়ার একপর্যায়ে ওয়াইনের বোতল দিয়ে মুনিয়ার মাথায় আঘাত করে তাকে হত্যা করেন আহসান উল্লা।

খুনের পরই আসামি আহসান উল্লা চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে চলে আসেন। সেখানে তিনি একটি পোশাক কারখানায় কাজ নেন।

কিছুদিন পর হাটহাজারীর এক মেয়েকে তিনি বিয়েও করেন। সেই ঘরে এখন আড়াই মাস বয়সী একটি শিশুসন্তান রয়েছে।

এদিকে ঢাকায় মুনিয়া খুনের তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ভুয়া নাম-পরিচয় দিয়ে বিয়ে করেছিলেন স্বামী হাসান ওরফে আহসান উল্লা। তার জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সব তথ্যও ছিল ভুয়া। তবে ধরা পড়ার পর আহসান উল্লা দাবি করেছেন, জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির সময় তিনি ঢাকার কদমতলীতে থাকতেন। ওই ঠিকানা দিয়েই জাতীয় পরিচয়পত্র করেন। ফরম পূরণকারী অস্থায়ী ঠিকানাকেই স্থায়ী ঠিকানা লিখে দিয়েছেন। এটি তিনি পরে জানতে পেরেছেন।

সবমিলিয়ে এই খুনিকে ধরার কোনো সূত্রই খুঁজে পাচ্ছিল না পুলিশ। শেষপর্যন্ত আড়াই বছর পর একটি মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) শনাক্ত করতে সক্ষম হয় যে, ঢাকার খুনি চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে আছে। এরপরই ধরা পড়েন আহসান উল্লা।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!