৪৪ মাইক্রোবাস ভাড়ার বিল ২১ কোটি টাকা, চট্টগ্রাম বন্দরে হরিলুটের নমুনা

চট্টগ্রাম বন্দরে মাইক্রোবাস ভাড়ার বিল নিয়ে চলছে নজিরবিহীন হরিলুট। সরকারি সমস্ত নিয়মকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বিলের অর্ধেক টাকাই করা হচ্ছে লুটপাট। গত তিন বছরে ৪৪টি মাইক্রোবাস ভাড়ায় নিয়ে সেগুলোর বিল পরিশোধ করা হয়েছে ২০ কোটি ৪১ লাখ ৩৫ হাজার ২৭৫ টাকা। এর মধ্যে ১০ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার ২৯৫ টাকাই পরিশোধ করা হয়েছে বাড়তি— যা অনেকটা দিনেদুপুরে ডাকাতির মতোই। অথচ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এই ভাড়া আসে মাত্র ৯ কোটি ৫০ লাখ ৩৯ হাজার ৯৮০ টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই হরিলুট রীতিমতো অস্বাভাবিক। এক্ষেত্রে সরকারি টাকা খরচের জন্য জেনারেল ফিনান্সিয়াল রুলসের বিধি ১০ (১-৪) যেমন মানা হয়নি, তেমনি উপেক্ষা করা হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এ সংক্রান্ত আদেশও।

জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত মোট ৪৪টি মাইক্রোবাসের জন্য ২০ কোটি ৪১ লাখ ৩৫ হাজার ২৭৫ টাকায় চুক্তি করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সরকার নির্ধারিত চট্টগ্রামের জন্য প্রতি মাসে ৬০ হাজার এবং ঢাকার জন্য প্রতি মাসে ৯০ হাজার টাকা হিসেবে তিন বছরে ভাড়া বাবদ ব্যয় হওয়ার কথা মোট ৯ কোটি ৫০ লাখ ৪০ হাজার টাকা। অথচ তিন বছরে পরিশোধ করা হয়েছে অতিরিক্ত আরও ১০ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার ২৭৫ টাকা।

দেখা গেছে, ২০টি মাইক্রোবাসের ভাড়ার জন্য ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২ কোটি ৩১ লাখ ১২ হাজার ২৪০ টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ কোটি ৪৭ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪৯ টাকা ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩ কোটি ৩৮ লাখ ২৪ হাজার ৭৮০ টাকা মিলিয়ে মোট ৮ কোটি ১৭ লাখ ১৫ হাজার ৮৬০ টাকার চুক্তি করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এই তিন বছরে ২০টি মাইক্রোবাসের জন্য ৬০ হাজার টাকা করে ৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয় করা যায়। এখানেও ভাড়া বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে অতিরিক্ত আরও ৩ কোটি ৮৫ লাখ ১৫ হাজার ৮৬০ টাকা।

অন্যদিকে আরেকটি চুক্তির মাধ্যমে ১৬টি মাইক্রোবাসের তিন বছরের ভাড়া হিসেবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩ কোটি ২৯ লাখ ৬ হাজার ৭০ টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ কোটি ৪৭ লাখ ৩৪ হাজার ২৬০ টাকা এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২ কোটি ৯৮ লাখ ২৭ হাজার ৮৮৫ টাকার চুক্তি করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সবমিলিয়ে এই বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৮ কোটি ৭৪ লাখ ৬৮ হাজার ৮২৫ টাকা। সরকারি নিয়ম অনুসারে ৬০ হাজার টাকা মাসিক ভাড়া ধরে মোট ভাড়া আসে মাত্র ৩ কোটি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। অথচ বাস্তবে ভাড়া বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে অতিরিক্ত আরও ৫ কোটি ২৯ লাখ ৮ হাজার ৮২৫ টাকা।

একইভাবে আরও ৮টি মাইক্রোবাসের জন্য ২৪ মাসের ভাড়া হিসেবে মোট ৩ কোটি ৪৯ লাখ ৫০ হাজার ৫৯০ টাকার চুক্তি করা হয়েছে— যাতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১ কোটি ৭০ লাখ ৭২ হাজার ৯৯০ টাকা ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার ৬০০ টাকা ধরা হয়েছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রতি মাসে ৯০ হাজার টাকা হিসেবে ২৪ মাসে মোট পরিশোধ করার কথা ১ কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অথচ সেখানে ভাড়া বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে অতিরিক্ত আরও ১ কোটি ৭৬ লাখ ৭০ হাজার ৫৯০ টাকা।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!