দুর্ধর্ষ বন্দিতে ঠাসা চট্টগ্রাম কারাগার, বাড়ছে আরও ৩২ সেল

৪২ সেলে ৫৭ জঙ্গির সঙ্গে ৫২ ফাঁসির আসামিও

চট্টগ্রাম কারাগারে চার শতাধিক ভয়ংকর ও দুর্ধর্ষ বন্দিকে রাখার জন্য সেল আছে মাত্র ৪৭টি। এসবে থাকছে ১২০ থেকে ১৪৫ জন বন্দি— যা ধারণক্ষমতার তিনগুণ। দিন দিন ভয়ংকর বন্দির সংখ্যা বাড়তে থাকায় ২১ বছর পর অবশেষে সেলের সংখ্যা বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার। নতুন করে ৩২টি নতুন সেল তৈরির কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। এ জন্য দেওয়া হয়েছে পৌনে তিন কোটি টাকা বরাদ্দ।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ৫৭ জঙ্গি ও ৫২ জন ফাঁসির আসামি মিলে ১০৯ জন অতি স্পর্শকাতর (হাইলি সেনসেটিভ) বন্দি রয়েছে। খুনসহ গুরুতর অপরাধে দণ্ডিত যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া আসামি আছে ২৪৯ জন। তার সঙ্গে বিচারাধীন আরও দুই ডজন ভয়ংকর শীর্ষ সন্ত্রাসী বন্দি রয়েছেন কারাগারে।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে দিন দিন জঙ্গি, দুর্ধর্ষ ও ভয়ংকর বন্দির সংখ্যা বাড়ছে। কারাগারে সেই তুলনায় সেলের সংখ্যা অনেক কম ছিল। তাই জঙ্গি ও ভয়ংকর বন্দিদের নিরাপদে রাখতে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছিল। সরকার নতুন করে ৩২টি সেল তৈরির অনুমোদন ও অর্থ বরাদ্দ করেছে। খুব শিগগির এ নতুন চার তলা সেল ভবন তৈরির কাজ শুরু হবে।’

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সর্বশেষ ১৯৯৮ সালে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, কণফুলী, হালদা ও সাঙ্গু নামে পাঁচতলা বিশিষ্ট নতুন ছয়টি বন্দি ভবন ও একটি দ্বিতল সেল ভবন নির্মাণ করে সরকার। বর্তমানে এই চট্টগ্রাম কারাগারে ৭ হাজার ২৩৬ জন আসামি বন্দি রয়েছে। এর মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি রয়েছে ৫৭০ জন। এদের মধ্যে সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত কয়েদি ৪৫৪ জন এবং বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত ৪৯ জন। আর সাধারণ হাজতি রয়েছে ৫ হাজার ২৮০ জন এবং দায়রা হাজতি রয়েছে এক হাজার ৯৫৪ জন। তার মধ্যে কারাগারে জঙ্গি, ফাঁসির আসামি, দাগী যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নিরাপদ হেফাজতে রাখতে পুরুষদের জন্য ৪২ সেল ও মহিলাদের জন্য পাঁচটি সেল রয়েছে।

বর্তমানে পুরুষদের ৪২টি সেলে রয়েছে ১২৫ থেকে ১৪০ জন জঙ্গি, দুর্ষর্ধ শীর্ষ সন্ত্রাসী, দাগী ও খুনের আসামি কয়েদি। কারণ এসব ভয়ংকর অপরাধীদের সাধারণ বন্দিদের ওয়ার্ডে রাখলে তারা অন্য বন্দিদের বিপদগামী করার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি কারাগারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য ইন্ধন দিয়ে থাকে এসব দাগী অপরাধী। কারাগারে দাগী অপরাধীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকায় সেলের সংখ্যা বাড়াতে ওপরমহলে গত কয়েক বছর ধরে চিঠি চালাচালি করে আসছিল চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ।

সম্প্রতি সরকার ৪২ সেলের দ্বিতল পুরুষ সেল ভবনটির জায়গায় চারতলা সেল ভবন তৈরির অনুমোদন দেয়। নতুন করে ৩২টি সেল তৈরি করার প্রশাসনিক অনুমোদন পায় চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ। এ জন্য দুই কোটি ৮২ লাখ ৭১ হাজার ৯৪৫ টাকা অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগ চার তলা সেল ভবন তৈরি করতে টেন্ডার আহবান করতে যাচ্ছে চলতি ডিসেম্বরেই।

জেলার মো. নাশির আহমেদ বলেন, নতুন সেল ভবনটি তৈরি হলে দাগী অপরাধীদের এক ছাদের নিচে নিয়ে আসতে পারবো আমরা। তাদের এক ছাদের নিচে আনতে পারলে নিরাপদ ও ঝামেলাহীন ভাবে রেখে নজরদারি করা সহজ হবে আমাদের।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!