৪০ নারীকে ঘিরেই লালদিঘিতে যুবলীগের সংঘর্ষ, ক্ষুব্ধ নওফেলের মঞ্চত্যাগ

ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ আহত ২০ নেতাকর্মী

যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের সময় মঞ্চের সামনে বসাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল হট্টগোল, চেয়ার ও পাথর মারামারির পর পণ্ড হয়ে গেছে আলোচনা। সভার প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের উপস্থিতিতে মাঝপথে ঘটা এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ নওফেল বক্তব্য না দিয়েই সভাস্থল ত্যাগ করেন। অন্যদিকে রওনা দিলেও সভার বিশেষ অতিথি হিসেবে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন সভায় যাননি। যুবলীগের দুপক্ষের মারামারিতে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোবারক আলীসহ ২০ জনের বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে যুবলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ। ছবি: আজীম অনন।
চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে যুবলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ। ছবি: আজীম অনন।

যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) বিকেলে নগরীর লালদীঘি মাঠে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের উদ্যোগে এ সমাবেশ ও শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছিল। শিক্ষা উপমন্ত্রী প্রধান অতিথি এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন।

বিকেল চারটায় সমাবেশ শুরু হওয়ার পর একে একে বক্তব্য রাখেন নগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ ও দেলোয়ার হোসেন খোকা এবং যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মাহমুদুল হক ও আলতাফ হোসেন বাচ্চু। সাড়ে চারটায় বাচ্চুর বক্তব্যের সময় লালদীঘির সমাবেশস্থলে একটি মিছিল ঢোকে।

চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে যুবলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ। ছবি: আজীম অনন।
চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে যুবলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ। ছবি: আজীম অনন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী যুবলীগের একাধিক নেতাকর্মী জানিয়েছেন, আলতাফ হোসেন বাচ্চু যখন বক্তব্য রাখছিলেন সেই সময়ে নগরীর সিনেমা প্যালেস মোড় থেকে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোবারক আলীর নেতৃত্বে একটি মিছিল লালদীঘির মাঠে প্রবেশ করে। মিছিলের অগ্রভাগে লাল-সবুজ শাড়িতে সজ্জিত ৪০ জনের একটি নারী দলকে মঞ্চের সামনে পৌঁছে দিতে তৎপর ছিল ওই মিছিলের স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্বে থাকা কয়েকজন যুবলীগকর্মী। এ সময় মঞ্চের সামনে আগে থেকে অবস্থান নেওয়া নগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও এমইএস কলেজের ভিপি ওয়াসিম উদ্দীনের অনুসারীরা তাদের বাধা দেন। তাদের বক্তব্য ছিল পেছন থেকে হঠাৎ করে কেন সামনের দিকে নারীকর্মীদের এগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে মোবারক আলীর অনুসারী ও ওয়াসিম উদ্দীনের অনুসারীদের মধ্যে তুমুল হট্টগোল বাঁধে।

চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে যুবলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ। ছবি: আজীম অনন।
চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে যুবলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ। ছবি: আজীম অনন।

একপর্যায়ে মঞ্চে উপস্থিত প্রধান অতিথি শিক্ষা উপমন্ত্রীর সামনেই আগে থেকে মাঠে অবস্থান নেওয়া ওয়াসিমের কর্মীরা মিছিল নিয়ে আসা মোবারকের কর্মীদের ওপর চেয়ার ছুঁড়তে থাকে। মোবারকের কর্মীরাও পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুললে উভয়পক্ষের মধ্যে মিনিট দশেকের মত চেয়ার মারামারি ও পাথর ছোঁড়াছুঁড়ির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কাউন্সিলর মোবারকসহ অন্তত ২০ জনের অধিক নেতাকর্মী আহত হন। পরে পুলিশ এসে উভয়পক্ষকে ধাওয়া দিয়ে মাঠ থেকে বের করে দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এরই মাঝে মঞ্চে থাকা প্রধান অতিথি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সভাস্থল ত্যাগ করেন। অন্যদিকে আলোচনা সভার বিশেষ অতিথি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন সভায় আসার জন্য রওনা দিলেও আর আসেননি।

সভা পণ্ড হওয়ার পর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ মাইকে বলেন, ‘আজকের এই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করছি। কিছু বহিরাগত দুস্কৃতিকারীই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ প্রসঙ্গে কাউন্সিলর মোবারক আলী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা বিশাল মিছিল নিয়ে সভাস্থলে যাওয়ার পর যখন নারী কর্মীদের মঞ্চের সামনে এগিয়ে দিচ্ছি তখনই আগে থেকে অবস্থান নেওয়া ওয়াসিম ভাইয়ের ছেলেরা আমাদের ওপর চেয়ার দিয়ে হামলা করতে থাকে। একপর্যায়ে আমি সামনে গেলেও আমার ওপরও তারা হামলা করে। এতে আমিসহ অনেকে আহত হয়েছি। সম্পূর্ণ বিনা উস্কানিতেই এই ধরনের হামলা করা হয়েছে।’

চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে যুবলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ। ছবি: আজীম অনন।
চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে যুবলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ। ছবি: আজীম অনন।

তবে একাধিকবার চেষ্টা করেও এ ঘটনার ব্যাপারে ওয়াসিম উদ্দীনের বক্তব্য জানা যায়নি। তবে নগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘লালদীঘির ঘটনা নিয়ে আমরা একটি সভায় বসেছি। তবে আজকের এ ঘটনার সময় প্রধান অতিথি শিক্ষাউপমন্ত্রী ক্ষোভে সভাস্থল ত্যাগ করেছেন বক্তব্য না দিয়েই। অন্যদিকে মেয়র রওনা দিয়েছেন শুনেছি, তবে তিনি আসেননি।’

কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘যুবলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সামনে বসাকে কেন্দ্র করে চেয়ার মারামারি ঘটনা ঘটেছিল। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনায় বড় কোনও অঘটন ঘটেনি। তবে কারা করা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে চিহ্নিত করা যায়নি।’

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!