৩ হাজার টাকায় রেল কর্মচারীর আয়েশি জীবন, দুর্নীতি তদন্তে ধীরগতি

তিনি মাসিক বেতন তোলেন মাত্র ৩ হাজার ৩০৫ টাকা। কিন্তু তার আয়েশি জীবনযাপন চমক লাগানোর মতো। থাকেন দামি ফ্ল্যাটে। করে এসেছেন হজ। তিনি পূর্ব রেলওয়ের এ ট্রেন কন্ট্রোলার (টিএনএল) রেল শ্রমিক লীগ নেতা মহিউদ্দিন পাটওয়ারী (৪০)। তার বিরুদ্ধে রেল মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গঠিত দুর্নীতির দুটি তদন্তের প্রায় ২ মাস অতিবাহিত হতে চললেও এখনও রিপোর্ট জমা পড়েনি।

রেলওয়ের তেল চুরি সিন্ডিকেটের সাথে যোগসাজশে অর্থের বিনিময়ে তেল চুরিতে সহায়তা, বরাদ্দকৃত বাসা অন্যকে ভাড়া দেওয়া, রেলের জায়গা দখল, বস্তি নির্মাণ, অবৈধ পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস সংযোগসহ আয়ের সাথে ব্যয়ের অসঙ্গতির উৎস খুঁজতেই এ তদন্তের নির্দেশ।

জানা যায়, মহিউদ্দীন পাটওয়ারী ট্রেন কন্ট্রোল অফিস পাহাড়তলীতে চাকরি করছেন ৭-৮ বছর। তার মাসিক বেতন ২৩ হাজার ১৫০টাকা। মাসে জিপিএফ ফান্ডে ১৬ হাজার টাকা, বাসা ভাড়া-গ্যাস-বিদ্যুৎখাতে ৩ হাজার ৮৪২ টাকা কাটার পর অবশিষ্ট ৩ হাজার ৩০৫ টাকা উত্তোলন করেন। এই অল্প টাকায় তার সংসার চলে কিভাবে!

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, টাইগারপাস মাজার কলোনির ৭/এ রেলের বরাদ্দকৃত বাসাটি তিনি ভাড়া দিয়েছেন। বাসার পাশে খালি জায়গায় তুলেছেন কাঁচাঘর। সেখানে পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাসলাইন রয়েছে— যা অবৈধভাবে সংযোগ দেওয়া। তিনি পরিবার নিয়ে থাকেন ডবলমুরিং থানার জোড় ডেবারপাড়ে মিন্টু নামের এক ব্যক্তির ৪ তলা ফ্ল্যাটে। ইতোমধ্যে পরিবার নিয়ে হজ করে এসেছেন, যা তিনি নিজেই স্বীকার করলেন। প্রশ্ন হলো মাত্র ৩ হাজার ৩০০ টাকা বেতন পাওয়া মহিউদ্দীন কিভাবে ফ্ল্যাটবাড়ির ভাড়া, সন্তানদের লেখাপড়া, সংসারের খরচ ইত্যাদি নির্বাহ করেন! কিভাবে এতো আরাম-আয়েশে জীবন কাটান। যেখানে বাসা থেকে অফিসে যাতায়াত খরচই লাগে দৈনিক ১০০ টাকা।

তদন্তকালে রেলওয়ের পূর্ব ডিভিশনাল চিফ অপারেটিং সুপারিন্টেডেন্ট (সিওপিএস) জাকির হোসেন বলেন, ‘মহিউদ্দীন পাটওয়ারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। শীঘ্রই তদন্ত কমিটি হবে।’

তবে তিনি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন কিনা জানতে যোগাযোগ করা হলে, তিনি দেশের বাইরে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।

মস্তান নগর স্টেশন, সিজেএফওয়াইর তেল চুরি সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ, বরাদ্দকৃত বাসা ভাড়া, রেলওয়ের জায়গা অবৈধ দখলসহ নানা অভিযোগ বিষয়ে মহিউদ্দিন পাটওয়ারী বলেন, ‘আমি যে ফ্ল্যাটে থাকি তার ভাড়া সাড়ে ৫ হাজার টাকা। হজ করেছি, মিথ্যা বলি না। আমার প্রতি মাসে চাল-তরকারি গ্রামের বাড়ি থেকে আসে।’

রেল ভবনে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা হলে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেয় রেল মন্ত্রণালয়। অনিয়ম-দুর্নীতি বিষয়ে তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত রেলওয়ে পূর্ব /ডিভিশনাল অফিসার (ডিআরএম) বোরহান উদ্দিন তদন্তের ধীরগতি সম্পর্কে বলেন, ‘আমি ৩ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। আশা করি, শীঘ্রই তারা তাদের প্রতিবেদন জমা দেবেন।’

তবে নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবি, মহিউদ্দীন রেল শ্রমিক লীগ নেতা লোকমানের অনুসারী। গত ৩ সেপ্টেম্বর প্রতিনিধি সম্মেলনে সিরাজপন্থীদের কেউ নেতৃত্বে না আসায় লোকমানপন্থীদের আধিপত্য বেশি। মহিউদ্দীনের দুর্নীতির তদন্তে ধীরগতির কারণ এটাই। তাকে বাঁচাতে ইতোমধ্যেই লবিং শুরু হয়েছে— এমন অভিযোগ সাধারণ রেল শ্রমিকদের।

জেএস/সিআর

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!