৩ প্রশ্নের উত্তর দিয়ে উঠতে হবে বিমানে, তৈরি হল নতুন গাইডলাইন

করোনাভাইরাসে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে বিমানচলাচল বন্ধ। কয়েক দফায় বাড়িয়ে এই সময়সীমা এখন রয়েছে ১৬ মে পর্যন্ত। এরপর সীমিত আকারে বিমান চলাচল শুরু করার চিন্তাভাবনা চলছে। এমন অবস্থায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বিমান চলাচলে একটি গাইডলাইন তৈরি করেছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, ফ্লাইট চালু করলে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চালু করা হবে।

ফ্লাইটে যাওয়ার আগে চেক-ইন করার সময় একজন যাত্রীকে তিনটি প্রশ্ন সম্বলিত একটি ফরম দেওয়া হবে। এই তিন প্রশ্নের একটিরও উত্তর যদি ‘হ্যাঁ’ হয়, তাহলে ওই যাত্রীকে আর ফ্লাইটে চড়ার অনুমতি দেওয়া হবে না। আর যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা ৯৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার চেয়ে বেশি থাকলেও বিমানে ওঠার অনুমতি দেওয়া হবে না।

দেশের বিমান চলাচল নিরাপদ করতে এমন ৩৫টি নির্দেশনা দিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) একটি সার্কুলার জারি করেছে।

প্রশ্ন সম্বলিত ফরমে একজন যাত্রীকে তার নাম, বয়স, লিঙ্গ, জন্মতারিখ, বর্তমান ঠিকানা, এয়ারলাইন্সের নাম, ফ্লাইট নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, শরীরের তাপমাত্রা, মোবাইল ও ই-মেইল ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে। সেই ফরমে থাকবে তিনটি প্রশ্ন। এর মধ্যে প্রথম প্রশ্ন— আপনার কি জ্বর বা কফ হচ্ছে? দ্বিতীয় প্রশ্ন— আপনার কি জ্বর এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে? তৃতীয় প্রশ্ন— গত ১৪ দিনে কোভিড-১৯ বা এই রোগের কোনো উপসর্গ থাকার কারণে আপনাকে কোনো বিমানবন্দরে বোর্ডিং থেকে রিফিউজ (ফেরত পাঠানো) করা হয়েছে কিনা?

‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ সূচক বক্সে এই তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। এর মধ্যে কোনো একটি প্রশ্নের উত্তরও যদি ‘হ্যাঁ’ হয় তাহলেই ওই যাত্রীকে আর বিমানে উঠতে দেওয়া হবে না।

চেক-ইনের সময় যেসব নির্দেশনা মানতে হবে

  • চেক-ইনের সময় কাউন্টার ও আশপাশের সহযোগীদের সার্বক্ষণিক মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, ডিস্পোজেবল ক্যাপ পরতে হবে। এছাড়া কাউন্টারের পাশে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে।
  • সামাজিক দূরত্ব মেনে যাত্রীকে চেক-ইনের লাইনে দাঁড়াতে হবে। চেক-ইনের আগে যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা মাপা হবে। তাপমাত্রা ৯৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট হলে তাকে বোর্ডিং পাস বা বিমানে ওঠার অনুমতি দেওয়া যাবে না।
  • প্রতিবার যাত্রার আগে ডিসইনফেকট্যান্ট ছিটিয়ে ফ্লাইট জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
  • চেক-ইনের সময় যাত্রীকে নিরাপত্তা ব্রিফ দিতে হবে, সাথে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিতে হবে।
  • প্যাসেঞ্জার হেলথ কার্ড জমা নিতে হবে। কার্ডের তিনটির মধ্যে যে কোনো প্রশ্নের ‘হ্যাঁ’ হলে বোর্ডিং বাতিল করতে হবে।

ইন-ফ্লাইট সার্ভিসে যেসব নির্দেশনা মানতে হবে

  • দেড় ঘণ্টার নিচে কোনো ফ্লাইটে খাবার পরিবেশন করা যাবে না। তবে ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য সীমিত আকারে পানি ও জুস থাকবে, যা আগে থেকেই ইনটেক রাখতে হবে।
  • প্লেনে ওঠার আগেই দেড় ঘণ্টা থেকে তিন ঘণ্টার ফ্লাইটের যাত্রীদের শুকনা খাবার দিতে হবে।
  • ফ্লাইটের সময় যদি চার ঘণ্টার বেশি হয় তবে ফ্লাইটের মধ্যে তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র রাখতে হবে। প্রতি ২-৩ ঘণ্টা পরপর যাত্রীদের দেহের তাপমাত্রা মাপতে হবে। কারও তাপমাত্রা যদি ৯৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি হয় তবে ক্রুরা আগে থেকেই গন্তব্যের এয়ারপোর্টকে জানাবে, যাতে প্লেন অবতরণ করার সঙ্গে সঙ্গে তারা ব্যবস্থা নিতে পারে।

বিমান ক্রুদের যেসব নির্দেশনা মানতে হবে

  • ফ্লাইটের ক্রুদের সার্জিক্যাল মাস্ক অথবা মানসম্মত মাস্ক, ক্যাপ পরতে হবে। কেবিন ক্রুদের এন-৯৫ মাস্ক, চশমা, রাবারের হ্যান্ড গ্লাভস ও ফেসিয়াল মাস্ক পরতে হবে। হ্যান্ড গ্লাভস ও মাস্ক প্রতি চার ঘণ্টায় পরিবর্তন করতে হবে।
  • ক্রুদের ককপিটে প্রবেশ যত সম্ভব কমাতে হবে। যোগাযোগ বাড়াতে হবে ইন্টারকমে।
  • ফ্লাইটে কেবিন ক্রু দুজন থাকলে উভয়েই একসঙ্গে খাবার সার্ভ করতে পারবেন না।
  • কেবিন ক্রুরা যাত্রাবিরতিতে কোনো হোটেলে অবস্থান করলে সেখানকার রুমেই খাবার খেতে হবে। প্রয়োজনে হোটেলের ভেতরের রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে পারবেন। তবে কোনোমতেই হোটেলের বাইরে যেতে পারবেন না।
  • যদি কোনো ক্রু’র কোভিড-১৯ এর লক্ষণ বা উপসর্গ থাকে তাহলে তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া এবং তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। তাদের প্রাতিষ্ঠানিক বা হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠাতে হবে।
  • ফ্লাইটে যাত্রীর আসন বিন্যাস করতে হবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্লেনের শেষের দুই সারিতে সিট খালি রাখতে হবে। ফ্লাইটে যদি কোনো করোনা আক্রান্ত সন্দেহে রোগী পাওয়া যায় তাহলে একজন কেবিন ক্রু তাকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ফ্লাইটের ওই সিটগুলোতে নিয়ে বসাবেন।
  • সর্বোপরি ক্রু ও পাইলটদের মানসিকভাবে শক্তিশালী করতে হবে।

বিমানবন্দর ও এয়ারক্রাফট বিষয়ে যেসব নির্দেশনা মানতে হবে

  • প্রতিটি বিমানবন্দরে স্যানিটাইজার ছিটিয়ে ডিসইনফেক্টেড বা জীবাণুমুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি ফ্লাইট ছাড়ার আগে প্লেনকেও জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
  • সবাইকে ফ্লাইট ছাড়ার আগে ‘সার্টিফিকেট অব ডিসইনফেকশন’ নিতে হবে। প্রতিবার জীবাণুমুক্ত করার পর বেবিচকের প্রতিনিধিরা এই প্রক্রিয়াটি দেখে সার্টিফাই করবেন, এরপরই ফ্লাইটটি ছাড়বে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!