৩ দিনে মিয়ানমার সীমান্তে ট্রলারে লুকিয়ে এসেছে সহস্রাধিক সেনা

মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ঢাকায় তলব

গত তিন দিন ধরে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক সীমান্তে মিয়ানমারের সেনাদের সন্দেহজনক গতিবিধি দেখতে পাচ্ছে বাংলাদেশ। শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর) ভোরে এক দিনেই মিয়ানমারের এক হাজারেরও বেশি সৈন্যকে আনা হয়েছে আন্তর্জাতিক সীমান্তের অন্তত তিনটি পয়েন্টে। এভাবে হঠাৎ সেনাসমাবেশে ক্ষোভ জানিয়েছে বাংলাদেশ। ইতিমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছে ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে।

জানা গেছে, শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর) ভোর থেকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকার অন্তত তিনটি পয়েন্টে মিয়ানমারের সেনাদের সন্দেহজনক গতিবিধি দেখতে পায় বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক সীমান্তের এ তিনটি পয়েন্ট হল কা নিউন ছুয়াং, মিন গা লার গি ও গার খু ইয়া। শুক্রবারেই সেখানে এক হাজারেরও বেশি সেনাকে আনা হয়েছে বলে খবর পেয়েছে বাংলাদেশ। মাছ ধরার ট্রলারের কাঠের নিচে বসিয়ে সৈন্যদের ওই তিন পয়েন্টে নামানো হয়।

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে গণহত্যা শুরুর শুরুতে এভাবেই সেখানে সৈন্যদের জড়ো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। শুক্রবার থেকে হঠাৎ এমন সেনাসমাবেশের কারণে রাখাইনে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে বিভিন্ন সূত্রে। মুসলিমদের পাশাপাশি বৌদ্ধরাও সেখানে সেনাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। গত মার্চ থেকে রাখাইনে বৌদ্ধপ্রধান অন্তত ১০টি গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে মিয়ানমারের সেনারা।

কোনো কারণ ছাড়াই সীমান্তে এভাবে সেনাসমাবেশ ঘটানোয় বাংলাদেশও এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। রোববার (১৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে। এ সময় তার হাতে একটি কূটনৈতিক চিঠি তুলে দেওয়া হয়। মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশ জানিয়ে দিয়েছে, সন্দেহজনক তৎপরতা বন্ধ করে দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটাতে মিয়ানমারকেই পদক্ষেপ নিতে হবে দ্রুত।

মিয়ানমারের দুই সেনা সম্প্রতি দেশটি থেকে পালিয়ে নেদারল্যান্ডসে গিয়ে রাখাইনে ২০১৭ সালের আগস্টে সেনা অভিযানে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের হত্যার স্বীকারোক্তি দেন। ওই দুই সেনা রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত উত্তরাঞ্চলে ডজনেরও বেশি গ্রামবাসীকে হত্যার পর গণকবর দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযানের সময় মিয়ানমার যুদ্ধাপরাধ করেছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে গত বছর নভেম্বরে তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)।

স্বীকারোক্তির এ ঘটনায় বিশ্বজুড়ে তোলপাড় তৈরি হলে নড়েচড়ে বসে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। জানা গেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) দুই সেনার জবানবন্দি রেকর্ডের পর থেকে পুরোনো সেনাদের মিয়ানমার সরকার সীমান্ত থেকে ফেরত নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। কোনো সৈন্য যাতে আর পক্ষ ত্যাগ করে দেশটির বাইরে যেতে না পারে সে ব্যাপারেও মিয়ানমার সেনাবাহিনী খুবই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সীমান্তে নতুন করে সেনা সমাবেশ তারই একটি অংশ হতে পারে ধারণা করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা গণহত্যায় যুক্ত সেনাদের সরিয়ে নিয়ে নতুন আসা সেনাদের তাদের স্থানে মোতায়েন করা হতে পারে বলেও জানা যাচ্ছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!