৩ কর্তার ‘খেয়ালখুশি’, পদ্মা অয়েলের তেল পরিবহনে এক প্রতিষ্ঠানই

জ্বালানি তেল পরিবহনের জন্য বিনা দরপত্রে নিজেদের পছন্দের ঠিকাদারকে নিয়োগ দিয়ে আসছে পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড। দুই বছর পরপর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দরপত্র আহবানের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করার নিয়ম থাকলেও তা বাস্তবায়ন করছে না প্রতিষ্ঠানটি। এ প্রতিষ্ঠানের তিন কর্মকর্তার পছন্দের ঠিকাদার বছরের পর বছর ধরে তেল পরিবহন সরবরাহের কাজ পাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে বিনা দরপত্রে তেল পরিবহনে প্রতিষ্ঠান নিযুক্ত করায় ঠিকাদারদের মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ।

অভিযোগ রয়েছে, পদ্মা অয়েলের নিজস্ব তেলের ভাউচার রয়েছে প্রায় ৮টি। এসব গাড়ির জন্য রয়েছে চালকও। কিন্তু গাড়িগুলো নানা সমস্যার অজুহাতে অকেজো করে রাখা হয়েছে। বেকার বসে আছে একজন এসব গাড়ির চালকরা। কিন্তু এসব গাড়ি ও চালকদের পেছনে প্রতি মাসে ব্যয় হচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

পদ্মা অয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাসুদুর রহমান, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) মো. আবদুস সোবহান ও টার্মিনাল ম্যানেজার মাহমুদের আগ্রহেই এ অনিয়ম চলছে বলে অভিযোগ করেছে ঠিকাদাররা।

জানা যায়, বিনা দরপত্রে ২০১৫ সালের ১২ মে থেকে পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে দুই বছরের চুক্তি হয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইসহাক বাদশা এন্ড কোম্পানির। দুই বছরের এ চুক্তিপত্রে পেট্রোল, ডিজেল, জেডওয়ান ও কনডেনসেট পরিবহন সরবরাহের চুক্তি করা হয়। ওই সময় চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন পদ্মা অয়েলের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আবুল খায়ের।

সূত্র বলছে, ২০১৭ সালের ১৪ মে তারিখে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আলহাজ মোহাম্মদ ইসহাক বাদশা এন্ড কোম্পানির একটি বিলের কপিতে দেখা যায়, লোডিং ডিপো পদ্মার অয়েলের গুপ্তখাল থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রতি বিশহাজার লিটারের ভাউচারে ৪০ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্য শূন্য দশমিক ৪৬ টাকায় পরিবহন ভাড়া নির্ধারণ করে পদ্মা অয়েল কর্তৃপক্ষ। এ হিসেবে সেখানে প্রতি চালানে ভাউচারে ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৯ হাজার ২০০ টাকা। অথচ গুপ্তখাল থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দূরত্ব মাত্র ৫ কিলোমিটার। এ ৫ কিলোমিটারে দূরত্বে প্রতি চালানে পরিবহন ভাড়া নেয়ার কথা ছিল বাজারমূল্য হিসেবে ৪-৫ হাজার টাকা। সেখানে নিয়মবর্হিভূত ৮ গুন বেশি অতিরিক্ত দূরত্ব দেখিয়ে ভাউচার প্রতি চালানে আদায় করা হচ্ছে বিল ৫ হাজার টাকা।

একাধিক ঠিকাদারের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশ করে এ খাত থেকে প্রতিমাসে নিয়মবর্হিভূত অতিরিক্ত বিল দেখিয়ে আদায় করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অবৈধ এই টাকা ভাগবাটোয়ারা যাচ্ছে সেখাকার বড়বড় কর্মকর্তাদের পকেটে।

এ ব্যাপারে আলহাজ মোহাম্মদ ইসহাক বাদশা এন্ড কোম্পানির (ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান) স্বত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ ইসহাক বাদশা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে দরপত্র ছাড়াই পদ্মা অয়েলের পরিবহন সাপ্লাই দিচ্ছে বিভিন্ন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। গত একযুগ ধরে সেখানে দরপত্র হয়েছে আমার চোখে পড়েনি। পদ্মার সঙ্গে চুক্তি হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে পরিবহন সরবরাহ করছি। প্রতি দুই বছর পর চুক্তিপত্রটি নবায়ন করা হয়।’

দরপত্র আহবান না করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পদ্মা অয়েল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে যেটা সিদ্ধান্ত নেবে, তা আমি মানতে বাধ্য। দরপত্র নিয়ম চালু হলেও সবার যা হবে আমার একই পরিস্থিতি হবে।’

পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের চট্টগ্রামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিলের বিষয়ে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। নিয়ম অনুসারে ওই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের চুক্তিপত্র বহাল রাখা আছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের নির্ধারিত রেট অনুসরণ করে বিল দেওয়া হচ্ছে নিয়োজিত ঠিাকাদার প্রতিষ্ঠানকে।’

একই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বারবার চুক্তির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!