৩৭ দফার ইশতেহারে রেজাউলের নজর চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতায়

অগোছালো আয়োজনে সমন্বয়হীনতার ছাপ

জলাবদ্ধতা নিরসনকে প্রধান অঙ্গীকার ঘোষণা করে ৩৭ দফার ইশতেহার ঘোষণা করছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অধীনে বাস্তবায়নাধীন জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প ঠিকভাবে বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ মনোযোগ দেয়ার কথা ইশতেহারে উল্লেখ করেছেন তিনি।

শনিবার (২৩ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে ইশতেহার ঘোষণা করেন রেজাউল করিম চৌধুরী।

সকাল সাড়ে দশটায় ইশতেহার ঘোষণার কথা থাকলেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজাউল করিম বঙ্গবন্ধু হলে আসেন ঠিক ১১টা ২০ মিনিটে। এছাড়া আগের রাতে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভার ব্যানার দিয়েই ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠান চালিয়ে নেন আওয়ামী লীগ নেতারা। রেজাউলের বক্তব্যের মাঝপথে ইশতেহার ঘোষণার ব্যানার আসলেও পরে সেটি আর লাগানো হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই চসিক নির্বাচনে শাসক দলটির সমন্বয় নিয়ে এসময় কানাঘুষা শোনা যায় সাংবাদিকদের মধ্যে।

৩৭ দফার ইশতেহারে রেজাউলের নজর চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতায় 1

‘রূপসী চট্টগ্রাম আমার-আপনার অহঙ্কার অঙ্গীকার—সবার যোগে সাজবে নগর’ শ্লোগানে দেওয়া এই ইশতেহারে দ্বিতীয় দফাতেও বলা হয়েছে, জলাবদ্ধতা নির্মূল মহাপরিকল্পনা ও নগর উন্নয়নে ডেল্টা প্ল্যান সঠিকভাবে বাস্তবায়নে যাতে ন্যূনতম বাধা ও দীর্ঘসূত্রতা না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থা ও সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সাথে সমন্বয়ের কথা। তবে এক্ষেত্রে ১০০ দিনের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জরুরি কিছু ত্রুটি ও প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে তা নির্মূলে কঠোর আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করবেন বলে জানান রেজাউল।

নয় নম্বর দফাতে আবারও উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে সমন্বয়ের কথা উল্লেখ করে রেজাউল বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার উপহার চলমান প্রকল্প, মেগাপ্রকল্পগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নে বন্দরসহ সব সেবাখাতের উন্নয়ন কাজে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসাবে জোরদার ভূমিকা ও সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবো।

প্রচারণার শুরুর দিকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা খাতকে গুরুত্ব দিলেও ইশতেহারে ১৯ ও ২০ নম্বর দফায় রয়েছে এই দুটি বিষয়। তবে স্বাস্থ্য সেবা চালু রাখতে ৬ টি উদ্যোগ নেয়ার ইচ্ছে রাখার কথা জানিয়েছেন তিনি। এদিকে শিক্ষা খাত প্রসঙ্গে রেজাউল বলেন, যদিও শিক্ষাসেবা সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বে পড়েনা। তবুও এক সময়ের জনপ্রিয় পৌর চেয়ারম্যান নুর আহাম্মদ সাহেব নগরের নগরের শিক্ষা বিস্তারে ব্যাপক অবদান রাখেন। তাঁর পথ ধরে প্রথম নির্বাচিত ও সফল মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে নগরবাসীকে টানা শিক্ষা সেবা দিয়ে গেছেন। যা এখনো চলমান আছে। স্বল্প খরচে শিক্ষার মানসম্মত বিকাশে আমারও সর্বোচ্চ মনোযোগ থাকবে।

হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে তিনি বলেন, ‘নগরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সড়ক বাতিসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধা দেওয়া সিটি করপোরেশনের প্রধান কাজ। আধুনিক চাহিদা ও বাস্তবতায় সিটি করপোরেশনকে আরও অনেক নাগরিক সেবার দায় টানতে হবে। সেবা খাতে আয়ের বড় উৎস হোল্ডিং ট্যাক্স বা গৃহকর। গৃহকর নিয়ে নানা সময়ে বিতর্ক তৈরি হয়। আবার শত শত কোটি টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছে বকেয়া পড়ে আছে। বিতর্ক অবসানে ডিজিটাল গৃহশুমারি করে বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়া যাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হন। ওভাবে যৌক্তিক হারে গৃহকর নির্ধারণ করা হবে। নাগরিক সেবা চালু রাখতে করদাতাদের স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতাও পূর্বশর্ত। কর বিভাগে সর্বোচ্চ নজরদারি ও স্বচ্ছতা দক্ষতা ফিরিয়ে আনা হবে।’

এর বাইরে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, কর্ণফুলী ও হালদার নব্যতা ফেরানোর উদ্যোগ নেয়া, কিশোর গ্যাং নির্মূলসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা ইশতেহারে তুলে ধরেন রেজাউল।

ইশতেহার ঘোষণা শেষে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন রেজাউল করিম চৌধুরী। এ সময় প্রায় সকল প্রশ্নের জবাবেই রেজাউল করিম বলতে থাকেন নির্বাচিত হলে সবাইকে নিয়ে বসে সবার পরামর্শ নিয়ে চসিক পরিচালনা করবেন তিনি। এক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল হোসেন সাংবাদিকদের থামিয়ে দিয়ে বলেন সব প্রশ্নের ওই একই উত্তর। সবাইকে নিয়ে সবার সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সুতরাং আর প্রশ্ন করার প্রয়োজন নেই।

ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. অনুপম সেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, মহানগর আওয়ামী লীগ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এম এ সালাম, সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহামান আতা, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যসহ মহানগর আওয়ামীলীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!