৩৫ হাজার টাকা খাটিয়ে ৮০ দিনেই ৭ লাখ, তরমুজের দুই জাত আশা জাগাচ্ছে পাহাড়ে

খাগড়াছড়ি শহর থেকে কিছুটা দূরে দুই একর জায়গায় চাষ হচ্ছে বিদেশি নতুন জাতের তরমুজ। নাম তার বাল্ক জ্যাম ও পাকিজা। দুই জাতের আগাম বিদেশি তরমুজ দেখতে দূরদুরান্ত থেকে মানুষ আসছেন সেখানে।

খাগড়াছড়ি শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের বাজারের পূর্ব দিকে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ২ নম্বর প্রকল্প গ্রাম বানছড়া এলাকা। এলাকায় টিলার মধ্যে দুই একর জায়গায় বাল্ক জ্যাম ও পাকিজা নামের বিদেশি দুই নতুন জাতের তরমুজ চাষ হচ্ছে।

তরমুজ ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, শীতের সকালে বাল্ক জ্যাম ও পাকিজা দুই জাতের তরমুজের গায়ে ও পাতায় শিশিরবিন্দু লেগে আছে। যেন বরফের দেশে তরমুজ চাষ। টিলার মধ্যে দুই জাতের তরমুজের ফলন হয়েছে চোখজুড়ানো। যেদিকে চোখ যায় তরমুজ আর তরমুজ। পাহাড়ে নতুন সম্ভাবনা জাগিয়েছে এই দুই জাতের তরমুজ।

তরমুজ চাষী সুজন চাকমা বলেন, পাঁচ একর জায়গাতে আমের চারা রোপণ করার পর চিন্তা করলাম খালি পড়ে রয়েছে। সিদ্ধান্ত নিলাম তরমুজ লাগাব। বিদেশী জাতের বাল্ক জ্যাম ও পাকিজা দুই জাতের তরমুজ লাগিয়েছি। এর মধ্যে ভালো ফলন হয়েছে। দেখে আমি অবাক হয়েছি।

তিনি বলেন, আশ্বিন মাসের এক তারিখে লাগিয়েছি। অগ্রহায়ণ মাসে ফল পরিপক্ক হয়েছে। বিক্রি শুরু করেছি। দুই একর জায়গায় চারা লাগিয়েছি। ১৪০০ গর্ত আছে। সাত হাজারের বেশি তরজুম পাবো বলে আশা করি। কেজি ৬০ দরে বিক্রি করি। ছয় থেকে সাত লাখ টাকা পাব।

সুজন চাকমা জানান, ফলন দেখে খুব খুশি। তাই সামনে বার এককর তরমুজ চাষ করার পরিকল্পনা আছে। পাকিজা সাত থেকে আট কেজি ও বাল্ক জ্যাম তরমুজ তিন কেজি পর্যন্ত ওজনের হচ্ছে।

তিনি বলেন, এ পর্যন্ত তিন জন ব্যবসায়ী ক্ষেত দেখে এসেছেন। ব্যবসায়ীরা দরদাম করছেন। জেলা থেকে অনেকে ফোন করে খোঁজ খবর নিচ্ছে। ভালো দাম পেলে বিক্রি করব।

খাগড়াছড়ির কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবার খাগড়াছড়িতে ১৫ থেকে ২০ মেট্রিক টন তরমুজ আবাদ হয়েছে।

খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বর এলাকায় তরমুজ বিক্রি করেন তপন। তিনি বললেন, শীতেও বাজারে বাল্ক জ্যাম জাতের তরমুজের চাহিদা ভালো। প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি করছি। ভালো বিক্রি হচ্ছে।

খেজুরবাগান হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-সহকারী র্কমর্কতা সুজন চাকমা বলেন, নতুন নতুন জাতগুলো পাহাড়ে সম্ভাবনাময়। আগাম জাতের তরমুজ চাষ করে কৃষকরা লাভবান হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মুক্তা চাকমা বলেন, পাহাড়ে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় তরমুজ চাষ হচ্ছে। পাহাড়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু তরমুজ চাষের উপযোগী।

খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুন্সী রাশীদ আহমেদ তরমুজ চাষী সুজন চাকমার উদাহরণ টেনে বলেন, ‘উনি খুবই উদ্যোগী ও আদর্শ কৃষক। নতুন জাতের তরমুজ চাষ করে তিনি খুবই আশাবাদী। ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ করেছেন। আশি দিনের মধ্যে পাঁচ- সাত লাখ টাকা পাবেন তরমুজ ক্ষেত থেকে। ওনার অন্য চার একর জমির ফসল কাটা হলে সেখানে আবার তরমুজ ক্ষেত করবেন।’

ড. মুন্সী রাশীদ আহমেদ বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের জমিগুলো তরমুজ চাষের জন্য বেশ উপযোগী। উচু উঁচু জমিতে পানি দাঁড়ানোর সম্ভাবনা কম থাকে। ফলে তরমুজ চাষটা এখানে খুবই উপযোগী।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!