৩৫ হাই ফ্লো ক্যানোলাই চট্টগ্রামের দুই হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার সম্বল, ৪৫টিই অকেজো

বেশি প্রেসারে রোগীকে অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়াটাই করোনার চিকিৎসায় এই মুহূর্তে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হিসেবে দেখছেন চট্টগ্রামের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। আর এই কাজটি সবচেয়ে সফলভাবে করতে ব্যবহার করা হয় হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা। মিনিটে প্রায় ৬০ লিটার করে অক্সিজেন সরবরাহ করার ক্ষমতা রাখা এই হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলাই করোনা যুদ্ধে চিকিৎসকদের এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। কিন্তু চট্টগ্রামের দুটি সরকারি হাসপাতালে এই মুহূর্তে বড়জোর ৩৫টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা ব্যবহারের সক্ষমতা রয়েছে। অন্যদিকে অন্তত ৪৫টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা অব্যবহৃতই পড়ে থাকছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইনে ৩৫টির বেশি ক্যানোলার লোড নেওয়ার অবস্থা নেই।

চট্টগ্রামের দুটি সরকারি হাসপাতাল— চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সবমিলিয়ে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা আছে ৮০টি। তবে এর মধ্যে ব্যবহার হচ্ছে ৩৩টি। করোনার অবস্থা যখন প্রতিদিনই খারাপ হচ্ছে সেখানে কেন হাতে থাকা সবগুলো হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা ব্যবহার করা হচ্ছে না— এই প্রশ্নের জবাবে ভিন্ন ভিন্ন উত্তরই মিললো সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে।

কেউ বলছেন, হাতে থাকলেও এই মুহূর্তে যে পরিমাণ হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা ব্যবহার করতে হচ্ছে, সেটাই ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রয়োজনে বাকিগুলো ব্যবহার করার সার্বিক প্রস্তুতিও রয়েছে তাদের। অন্যদিকে কেউ বলছেন, যে পরিমাণ হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা ব্যবহার করার সক্ষমতা রয়েছে সেই পরিমাণই ব্যবহার করা হচ্ছে। ইচ্ছে থাকলেও এর বেশি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা ব্যবহারের সুযোগ নেই তাদের। সেই হিসেবে চট্টগ্রামের দুটি সরকারি হাসপাতালে বড়জোর ৩৫টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা ব্যবহারের সক্ষমতা রয়েছে। অন্যদিকে অন্তত ৪৫টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে।

এক্ষেত্রে বাকি মেশিনগুলোকে ব্যবহারের সক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার কথাও বলছেন কেউ কেউ। আবার কেউ বলছেন হাতে থাকা এসব হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা তাদের কাজেও লাগছে। যেমন হঠাৎ করে একটি মেশিনে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিক হাতে থাকা মেশিনের মধ্য থেকে আরেকটি নিয়ে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন তারা।

চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা আছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাণ্ডারে। এই হাসপাতালে মোট মেশিন আছে ৫০টির মতো। এর মধ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে মাত্র ১৫টি।

বাকি মেশিনগুলো ব্যবহার করার সক্ষমতা নেই নাকি ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ছে না— এই বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালটির পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের এখন যতগুলো ব্যবহার করতে হচ্ছে আমরা তাই ব্যবহার করছি। প্রয়োজন হলে সবগুলো মেশিন ব্যবহার করার প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত তেমন পরিস্থিতি আসেনি।’

পরিচালক প্রস্তুতি থাকার কথা বললেও সাম্প্রতিক এক ঘটনায় দেখা গেছে উল্টো চিত্র। গত ১ এপ্রিল চট্টগ্রামের সাংবাদিক মিজানুল ইসলামের বাবা নুরুল ইসলাম তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হলেও অন্তত ২৪ ঘন্টায় তার জন্য হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা চেয়ে পাওয়া যায়নি। হাসপাতাল থেকে রোগীর স্বজনদের ক্যানোলা সংকটের কথা জানানো হয়েছে বারবার। পরে এই রোগীকে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে সেখানে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার ব্যবস্থা করা হলেও শেষ পর্যন্ত তাকে আর বাঁচানো যায়নি।

হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা নিয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রব বলেন, ‘আমরা এক সাথে ১৮টি পর্যন্ত ব্যবহার করছি এখন। এর চেয়ে বেশি ব্যবহার করলে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইনে লোড নেবে কিনা সেটাও দেখতে হবে। প্রতিটি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা মিনিটে ৬০ থেকে ৭০ লিটার প্রেসারে অক্সিজেন সরবরাহ করে। এবার ভাবুন একসাথে কতগুলো মেশিন আমরা ব্যবহার করতে পারি।’

তবে হাতে থাকা বাকি মেশিনগুলোকে ব্যবহার উপযোগী করতে কী করা উচিত— এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এগুলো আমাদের কাজে একেবারেই আসে না— তা না। মাঝে মাঝে কোনো মেশিনে সমস্যা দেখা দিলে স্টকে থাকা মেশিনগুলো দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়। তবে চাইলে এখন উপজেলা পর্যায়ে এগুলো ব্যবহারের উপায় খোঁজা যায়। তবে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন না থাকলে এসব মেশিন ব্যবহারের সুযোগ নেই।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!