৩৪ ডাক্তারের মৃত্যু করোনার শিকার হয়ে, চট্টগ্রামেই চার

চট্টগ্রামসহ সারা দেশেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত চিকিৎসকের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসকদের মৃত্যুর ঘটনাও বাড়ছে দিনের পর দিন। চিকিৎসকদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি রাইটস অ্যান্ড রেসপনসিবিলিটি বা এফডিএসআরের হিসাব মতে, শনিবার (১৩ জুন) পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন সারা দেশের ১ হাজার ১৫৩ জন চিকিৎসক।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) তথ্য অনুসারে অন্তত তিন শতাধিক চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি সর্বশেষ শনিবার (১৩ জুন) পর্যন্ত মারা গেছেন ৩৪ জন চিকিৎসক। এদের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন চট্টগ্রামে।

এই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন ঢাকার বিআরবি হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের প্রধান ডা. মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন শনিবার (১৩ জুন)। ডা. সাজ্জাদ হোসেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে (২০তম ব্যাচ) এমবিবিএস সম্পন্ন করেন।

এর আগে গত ২৫ মে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. এসএম জাফর হোসাইন। ৩ জুন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান চট্টগ্রাম মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. এএসএম এহসানুল করিম। ৪ জুন একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা (ইএমও) ডা. মুহিদুল হাসান। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১২ জুন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ডা. আরিফ হাসান

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকের মৃত্যুর প্রথম ঘটনা ঘটে গত ১৫ এপ্রিল। ওই দিন সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দীন রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে ও উপসর্গ নিয়ে যেসব চিকিৎসক মৃত্যুবরণ করলেন, তাদের মধ্যে ৩ মে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হেমাটোলজিস্ট অধ্যাপক কর্নেল (অব.) ডা. মো. মনিরুজ্জামান।

১১ মে করোনার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন রাজধানীর নদার্ন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ এবং ফরেনসিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আনিসুর রহমান।

১২ মে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের একাদশ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও রেডিওলজিস্ট মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) ডা. আবুল মোকারিম মো. মোহসিন উদ্দিন।

১৮ মে রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ত্রয়োদশ ব্যাচের শিক্ষার্থী ডা. মো. আজিজুর রহমান রাজু।

২২ মে করোনার উপসর্গ নিয়ে সিলেট শামসুদ্দিন আহমেদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান স্বাস্থ্য অধিদফতরের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক ডা. এম এ মতিন। একই দিন করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ডা. কাজী দিলরুবা।

২৬ মে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি) ডা. আমিনা খান। একইদিন করোনার উপসর্গ নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন অ্যানেস্থেসিয়া ও আইসিইউ বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুর রহমান।

২৭ মে বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের অর্থোপেডিক বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. মোশাররফ হোসেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২৮ মে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন (আর্মি মেডিকেল কোর) ডা. এএফএম সাইদুল ইসলাম।

৩১ মে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের চতুর্দশ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. ওয়াহিদুজ্জামান আকন্দ বাবলু।

২ জুন রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কনসালট্যান্ট ডা. মনজুর রশিদ চৌধুরী।

৩ জুন রাজধানীর হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন রাজধানীর ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবিয়াল বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. মহিউদ্দিন। একই দিন করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান স্বাস্থ্য অধিদফতরের অবসরপ্রাপ্ত ইভালুয়েশন অফিসার ডা. কে এম ওয়াহিদুল হক।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৪ জুন প্রাইমেট জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন ফরেনসিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান। একই দিন মারা যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান (মেডিসিন) অধ্যাপক ডা. এন আই খান। ওইদিনই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোলজি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এস এ এম গোলাম কিবরিয়া করোনা আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়া ৪ জুন রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন রংপুর মেডিকেল কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ডা. এহসানুল কবির চৌধুরী।

৬ জুন করোনার উপসর্গ নিয়ে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র মেডিকেল অফিসার (সাভার ইপিজেড) ডা. আবুল কাশেম খান।

৭ জুন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও পরিচালক (মেডিকেল সার্ভিসেস) ডা. মির্জা নাজিম উদ্দিন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

৮ জুন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ডা. রাজিয়া সুলতানা রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। একই দিন করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ময়মনসিংহের ল্যাবএইড হাসপাতালের কনসালট্যান্ট (অ্যানেস্থেসিয়া) ডা. সাখাওয়াত হোসেন।

৯ জুন বরিশালের রাহাত আনোয়ার হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. আনোয়ার হোসেন করোনা আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। একই দিন রাজধানীর ইমপালস হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ ও সিনিয়র কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ডা. জলিলুর রহমান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইমপালস হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

১০ জুন ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন রাজধানীর জেডএইচ শিকদার ওমেন্স মেডিকেল কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ডা. তানজিলা রহমান।

১২ জুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. গাজী জহিরুল হাসান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। একই দিন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক (কার্ডিওলজি বিভাগ) ডা. মাহমুদ মনোয়ার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ওইদিনই করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাজধানীর জেড এইচ শিকদার ওমেন্স মেডিকেল কলেজের চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. একেএম ফজলুল হক।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!