৩০ বছরে অঢেল সম্পদ চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলীর

প্রাইভেট কারে লাগিয়েছেন চসিকের মনোগ্রামও

৩০ বছর ধরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে (চসিক) চাকরি করছেন মির্জা ফজলুল কাদের। যান্ত্রিক শাখার এই নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে রয়েছে লাখ লাখ টাকা জ্বালানি তেল চুরির অভিযোগ। রয়েছে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়ার তথ্যও।

জানা গেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আগের সময়ে চসিকের অস্থায়ী কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করা হতো সরাসরি। ফজলুল কাদেরের বিভাগে পাঁচ শতাধিক কর্মচারীর বেতন পরিশোধের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, সেখানে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বানিয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ।

জানা গেছে, দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া অঢেল টাকা ‘বৈধ’ করতে পার্বত্য রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় জমি কিনে করেছেন বাগান। সম্প্রতি এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ জমা পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)।

অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার ব্যক্তিগত প্রাইভেট কারে ব্যবহার করছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মনোগ্রাম। তার ব্যক্তিগত দুটি প্রাইভেট কারেই এ লোগো ব্যবহৃত হচ্ছে।

চলতি বছরের ২২ সেপ্টেম্বর চসিকের যান্ত্রিক শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী মির্জা ফজলুল কাদেরের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতি একটি অভিযোগ জমা পড়ে দুদকে। সেখানে তার দীর্ঘ চাকরিজীবনের একাধিক অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়।

দুদকে জমা হওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সিটি কর্পোরেশনের যান্ত্রিক শাখার পুল সহকারী হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় তেল সরবরাহে অনিয়ম করে ৬০ লাখ টাকা অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। একইসঙ্গে কর্পোরেশনের নিজস্ব ফিলিং স্টেশনের সাধারণ গাড়ির ভাউচার দিয়ে জ্বালানি তেল চুরি করে দীর্ঘ সময় ধরে হাতিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। ওই সময় সহকারী অডিটরের নামে সহকারীদের মাধ্যমে চালকদের কাছ থেকে তিনি উত্তোলন করতেন নিয়মবর্হিভূত টাকা।

মির্জা ফজলুল কাদেরের গ্রামের বাড়ি রাঙ্গুনিয়ায়। সেখানে রয়েছে তার একাধিক দোকানপাট ও স্থাপনা। চট্টগ্রাম শহরে তার রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট ও প্লট। তার মেয়ের জামাইয়ের সঙ্গে অংশীদারি ভিত্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও রাঙ্গুনিয়ায় গড়েছেন একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করা শত শত কোটি টাকা বৈধ করতে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ির পাহাড় এলাকায় জমি কিনে গাছের বাগানও করেছেন তিনি।

জানা গেছে, ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য মির্জা ফজলুল কাদেরের রয়েছে দুটি কার। এ দুটি কারের নম্বর ঢাকা মেট্রো-গ-১২-৪৫২৫ ও চট্টমেট্রো-গ-১১-১৭৩৯। এসব গাড়িতে ব্যবহার করছেন তিনি সিটি কর্পোরেশনের মনোগ্রাম।

তবে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সূত্রে জানা যায়, মির্জা ফজলুল কাদের ব্যবহৃত দুটি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দুই ব্যক্তির নামে। এর মধ্যে চট্টমেট্রাে-গ-১১-১৭৩৯ নম্বরের প্রাইভেট কারটি সৈয়দ আব্দুল গনির নামে এবং ঢাকামেট্রো-গ-১২-৪৫২৫ নম্বরের গাড়িটি মোছাম্মত নাঈমার নামে রেজিস্ট্রেশন রয়েছে।

অভিযোগ বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের যান্ত্রিক শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী মির্জা ফজলুল কাদের কল রিসিভ করার পর ব্যস্ততা দেখিয়ে প্রতিবেদককে পরে কল করার পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে আবার কল করা হলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, ‘চসিকের মনোগ্রাম কেউ ব্যক্তিগত গাড়িতে ব্যবহার করতে পারেন না। কেউ যদি এ ধরনের কাজ করে থাকেন তাহলে তিনি অন্যায় করছেন। মির্জা ফজলুল কাদের ব্যক্তিগত গাড়িতে লোগো ব্যবহারের বিষয়টি দেখছি।’

এমএফও/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!