৩০০০ শ্রমিককে বেতন নিয়ে ঘোরাচ্ছে চট্টগ্রামের ফ্রাংক গ্রুপ

চট্টগ্রামে পোশাক উৎপাদনকারী ফ্রাংক গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠানে তিন হাজার শ্রমিক বেতন পাচ্ছেন না। বেতন পরিশোধ না করে আজ দেবে কাল দেবে বলে হয়রানি করা হচ্ছে শ্রমিকদের।

জানা গেছে, ফ্রাংক গ্রুপের ছয়টি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান পোশাক তৈরির কাজ করে। এতে কমপক্ষে তিন হাজার শ্রমিক কাজ করেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় বন্ধ রয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও ১৬ এপ্রিলের মধ্যে মার্চের বেতন পরিশোধ করার জন্য সর্বশেষ সময় বেঁধে দেয় তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। কিন্তু এর মধ্যে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ না করায় চরম অসন্তোষ দেখা দেয় ফ্রাংক গ্রুপের শ্রমিকদের মাঝে।

ফ্রাংক গ্রুপ বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর তালিকাভুক্ত সদস্য। ফ্রাংক গ্রুপের অ্যাপারেল ম্যানুফেকচারিং এন্ড এক্সপোর্ট ডিভিশনে ছয়টি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলো হচ্ছে আনোয়ারা ড্রেস মেকার লিমিটেড, ফ্রাংক অ্যাপারেল লিমিটেড, ফ্রাংক গার্মেন্টস প্রাইভেট লিমিটেড, মুনটেক্স পিএন্ডডব্লিউ লিমিটেড, ইউনিক ওয়াশিং ইন্ড্রাস্ট্রি ও প্যাকেজিং ইউনিট। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের বেতনভাতা না দিয়েই গড়িমসি করছে কর্তৃপক্ষ।

এমন পরিস্থিতিতে শনিবার (১৮ এপ্রিল) চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ মোড়ে ফ্রাংক অ্যাপারেলের নিরুপায় শ্রমিকরা বেতনের দাবিতে সড়কে বিক্ষোভ করে। সকাল ১১ টা থেকে ১২টা পর্যন্ত তারা সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে। পরে পুলিশের মধ্যস্থতায় ২৮ এপ্রিল বেতন পরিশোধের পরবর্তী তারিখ দেয় মালিকপক্ষ।

বিজিএমইএর এক পরিচালক বলেন, ফ্রাংক গ্রুপের কারণে বিজিএমইএর সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। দেশের সব গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করলেও চট্টগ্রামের কিছু কারখানার জন্য আমাদের সুনামহানি হচ্ছে।

ফ্রাংক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আনোয়ারা ড্রেস মেকার লিমিটেডের অবস্থান নগরের বায়েজিদ এলাকায়। এখানে রয়েছে ফ্রাংক গার্মেন্টস প্রাইভেট লিমিটেডের অপর কারখানা এবং হেড অফিসও। জানা গেছে, রোববার (১৯ এপ্রিল) সকালে ওই কারখানায়ও বেতন ভাতা দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেছে শ্রমিকরা। সকালে শ্রমিকরা রাস্তায় বিক্ষোভ শুরু করলে ২ নম্বর গেইট থেকে অক্সিজেন সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ তাদেরকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়।

ফ্রাংক অ্যাপারেল লিমিটেডের কর্মচারী আয়েশা আক্তার বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার আমাদের বেতন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেয়নি কোম্পানি। আমরা তাও মেনে নিয়েছিলাম। এরপর এসেও দেখছি বেতন দিচ্ছে না। এ দুর্যোগের সময়ে আমরা কোথায় যাবো, কী খাবো? কিভাবে বাসা ভাড়া দেবো?’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফ্রাংক গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন বলেন, ‘বেতন দেওয়ার বিষয়টি আমাদের এইচআর (মানবসম্পদ বিভাগ) দেখছে। কারখানা বন্ধ। আমরা বেতন কোত্থেকে দেবো?’

বিজিএমইএ পক্ষ থেকে ১৬ এপ্রিলের মধ্যে বেতন পরিশোধের নির্দেশনার ব্যাপারে দৃষ্টি আর্কষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিজিএমইএ বেতন দিতে পারে না। কোম্পানির মালিককেই শ্রমিকদের বেতন দিতে হয়। বেতন দেওয়ার সামর্থ্যও থাকতে হবে।’

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আল আমিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ফ্রাংক গ্রুপসহ যেসব কারখানা শ্রমিকদের বেতন দেয়নি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!