২ মানসিক রোগী নিয়ে হঠাৎ মুশকিলে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর

উঠেছে ঢাকার মতো ‘সাপোর্ট শেল্টারের’ দাবি

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদেশ থেকে আসা দুই প্রবাসী মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী নিয়ে বেকায়দায় পড়ে গিয়েছিল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। মানসিক ভারমাস্যহীন হওয়ায় তারা নিজের ঠিকানা ও কোথায় যাবেন কিছুই বলতে পারছিলেন না।

মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) পৃথক দুটি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে আসেন একজন মহিলা ও একজন পুরুষ। এ দুজনকে নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। বিদেশ থেকে পাঠিয়ে দেওয়া (মানসিক রোগী) কর্মীর সাপোর্ট শেল্টার না থাকায় এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে।

জানা গেছে, প্রায়ই এ ধরনের রোগী প্রবাস থেকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে চলে আসেন। আত্মীয়-পরিজনেরা তাদের নিতে না আসায় বিমানবন্দরেই অবস্থান করেন তারা। অন্যদিকে আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারহীন এ ধরনের বাংলাদেশি রোগী বিদেশ থেকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছলে এদের সহায়তা দেয় বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক। শাহজালালে ব্র্যাকের একটি সাপোর্ট শেল্টার রয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ ধরনের কোন সাপোর্ট শেল্টার না থাকায় প্রায়ই বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে।

চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে সালাম এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ওমান থেকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে আসেন এক মহিলা। তিনি মানসিক ভারমাস্যহীন হওয়ায় নিজের ঠিকানা ও কোথায় যাবেন কিছুই বলতে পারছিলেন না। তাকে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিমানবন্দরে একটি রুমে রাখা হয়েছিল। ওখানে থাকা অবস্থায় তিনি অদ্ভূত ও ভারসাম্যহীন আচরণ করছিলেন। তাকে নিতে কোন আত্মীয়-স্বজনও বিমানবন্দরে উপস্থিত হননি। এদিকে তাকে সামাল দিতে পারছিল না বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

পরে ওই মহিলাকে পরিবারের কাছে পৌঁছানোর জন্য জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের জানানো হয়। তারা মহিলার স্বামীর সাথে যোগাযোগ করেন।

সালাম এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে ওমান থেকে আসা মহিলার পাসপোর্ট থেকে জানা গেছে— তার নাম নাছিমা, স্বামী কোব্বাত, বাড়ি ঢাকার জামালপুর। ওই মহিলাকে নিয়ে যেতে তার স্বামীকে খবর দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) রাতেই তার স্বামীর চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কথা। মহিলাকে আপাতত নগরীর ডবলমুরিং ভিকটিম সাপোর্ট শেল্টারে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে, মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) সকালে এয়ার এরাবিয়ার ‘জি ৯ ৫২৮’ ফ্লাইটে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ থেকে আসেন ফারুক আহমেদ। তার বাড়ি সিলেটের জয়পুরের পানায়ঘাট থানা এলাকায়। বিকেলে তাকে স্থানীয় এক ইউপি সদস্য এসে নিয়ে যান। ফারুকও মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। সিলেটে তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে পরিবারের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটে শাহ আমানত বিমানবন্দরে। স্বেচ্ছায় দেশে ফেরা মানুষগুলো নিয়ে হিমশিম খেতে হয় কর্তৃপক্ষকে। বিদেশে থেকে আত্মীয়-স্বজন বা অন্য কেউ এয়ারলাইন্সের টিকিট কেটে ফ্লাইটে তুলে দেন তাদের। কিন্তু দেশে তাদের গ্রহণ করার কেউ থাকে না। ফ্লাইট থেকে এয়ারপোর্টে নামিয়ে দেওয়ার পর এ ধরনের মানুষগুলো নিয়ে বেকাদায় পড়ে যায় সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ।

এদিকে ডিপোর্ট বা নির্বাসিত হয়ে যারা দেশে ফেরত আসে তাদের সাপোর্ট দেওয়ার জন্য ঢাকার মতো চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরেও সাপোর্ট শেল্টার স্থাপনের তাগিদ দিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের চিঠি দিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জহিরুল আলম মজুমদার। তিনি চিঠিতে ঢাকার মতো বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাককে ‘মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম’ চট্টগ্রামের শাহ আমানতেও চালু করার অনুরোধ জানান। তিনি অসুস্থ প্রত্যাগত কর্মীর জন্য খাবার ও বাড়ি যাওয়ার গাড়ি ভাড়াসহ প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের জন্যও অনুরোধ জানান।

এ বিষয়ে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জহিরুল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমাদের জানানোর পর আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করি। কিন্তু মাঝে মাঝে সমস্যায় পড়তে হয়। মানসিক রোগীদের সামাল দেওয়া খুবই ঝামেলার। শাহ আমানতেও একটি সাপোর্ট শেল্টার থাকলে সুবিধা হতো।’

এএস/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!