২৯ কোটি টাকার ভ্যাট মেরে চট্টগ্রামে মামলার জালে রিজেন্ট, ৫০০ কোটি পাবে দুই সংস্থা

২৯ কোটি টাকা শোধ না করায় রিজেন্ট এয়ারওয়েজের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে চট্টগ্রামে। গত তিন বছর ধরে ভ্যাট পরিশোধ করছে না চট্টগ্রামভিত্তিক হাবিব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠানটি।

ভ্যাটের টাকাই শুধু নয়, রিজেন্ট এয়ারওয়েজের কাছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) পাবে ৩০০ কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ‘এনবিআর’ও পাবে ২০০ কোটি টাকা।

এখানেই শেষ নয়, গত দুই বছর ধরে পাইলটসহ প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের বেতনও বকেয়া রয়ে গেছে।

চট্টগ্রামের কাস্টমস এক্সাইজ ভ্যাট কমিশনার মোহাম্মদ আকবর হোসেন বলেন, রিজেন্ট এয়ারওয়েজের কাছে ভ্যাট পাওনা রয়েছে ২৯ কোটি টাকা। গত তিন বছর ধরে ভ্যাটের এই টাকা পরিশোধ না করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

জানা গেছে, বেশ কয়েকবার তারিখ নির্ধারণ করেও আকাশে উড়তে পারছে না দুই বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকা বেসরকারি উড়োজাহাজ সেবাদানকারী কোম্পানি রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনা পরিস্থিতির কারণেই এ অবস্থা। গত বছর করোনা সংক্রমণের একদম শুরুতে সব ধরনের ফ্লাইট চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করে বেসরকারি উড়োজাহাজ কোম্পানিটি। তখন থেকেই প্রতিষ্ঠানটির পাইলট ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আছেন অবৈতনিক ছুটিতে।

রিজেন্ট এয়ারওয়েজ বাংলাদেশি বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থা। এই এয়ারলাইন্সের মালিক এইচজি এভিয়েশন লিমিটেড— যা হাবিব গ্রুপের অধীনস্থ একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পরিচালনা করা হয়। কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১০ সালে এবং এর প্রথম যাত্রা শুরু হয় একই বছর ১০ নভেম্বরে।

এদিকে, বন্ধ থাকা সময়ের মধ্যে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও এনবিআরের কাছে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০০ কোটি টাকা।

জানা গেছে, বন্ধ হওয়ার আগে যাত্রীদের কাছে বিক্রি করা টিকিটের টাকাও ফেরত দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। বিভিন্ন সরকারি ফি বাবদ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) রিজেন্টের কাছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা পায়।

এছাড়া তাদের কাছে এনবিআরের পাওনার পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি টাকা। ফ্লাইটে ফিরতে বেবিচককে ধীরে ধীরে পাওনা পরিশোধের কথা বলা হলেও কয়েক মাস ধরে কোনো টাকাই পরিশোধ করছে না রিজেন্ট। তবে বন্ধ থাকা সময়ের মধ্যেই বেশ কয়েকবার কার্যক্রম চালু করার ঘোষণা দিয়েছিল রিজেন্ট কর্তৃপক্ষ। সবশেষ চলতি বছরের মার্চে ফ্লাইট শুরুর কথা জানালেও বাস্তবায়ন করা হয়নি সে উদ্যোগও।

এয়ারলাইন্সটির বহরে বর্তমানে রয়েছে দুটি বোয়িং সেভেন থ্রি সেভেন ও একটি ড্যাশ-৮ মডেলের উড়োজাহাজ। কোনো উড়োজাহাজই বর্তমানে ওড়ার মতো অবস্থায় নেই।

এর মধ্যে গত বছরের ডিসেম্বরে একটি বোয়িং সেভেন থ্রি সেভেন উড়োজাহাজের পরীক্ষামূলক উড়াল সম্পন্ন করা হয়েছে। বাকি দুটির ইঞ্জিন এখনও দেশে আসেনি। বিগত এক বছরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোনো বেতনও দেয়নি এয়ারলাইন্সটি। পাইলটদের অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করার ছাড়পত্রও দেওয়া হয়নি।

জানা গেছে, রিজেন্টে কর্মরত রয়েছেন ২০ পাইলট। তাদের মধ্যে ১১ জন ক্যাপ্টেন আর ৯ জন ফার্স্ট অফিসার। গত এক বছরে একেকজন পাইলটের বেতন জমেছে গড়ে এক কোটি টাকারও বেশি, আর একেকজন ফার্স্ট অফিসার বেতন পাওনা রয়েছে অর্ধ কোটি টাকারও বেশি।

বকেয়া শুধু বেতনই নয়, বন্ধ হওয়ার পর পাইলটদের সক্রিয় রাখতে বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণগুলোও শেষ করেনি রিজেন্ট। আন্তর্জাতিক বেসমারিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নিয়ম অনুসারে প্রত্যেক পাইলটকে নির্দিষ্ট সময় পর পর বাধ্যতামূলকভাবে সিম্যুলেটরে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করতে হয়।

আকাশপথের নিয়ন্ত্রক এ সংস্থার চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান বলেন, রিজেন্টের এয়ারক্রাফট রেডি করছে বলে জানিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তাদের অগ্রগতিতে আমি সন্তুষ্ট নই।

রিজেন্টের কাছ থেকে বেবিচকের পাওনা টাকাও আদায় করা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।

কেএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!