‘২৭ ধরণের নতুন রোগ’—করোনা সেরে ওঠার পরও দেখা দিতে পারে

মহামারি করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ চলছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে। এতে প্রথমবার আক্রান্ত হওয়ার পরও দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। আবার করোনামুক্ত হওয়ার পরও অনেকের শরীরে দেখা দিচ্ছে ২৭ ধরণের নতুন রোগ। সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠার পরও শারীরিক সমস্যা থেকে যাচ্ছে অনেকের। মৃত্যুও হচ্ছে। সংক্রমিত ব্যক্তি ও সংক্রমণ হয়নি এমন ব্যক্তিদের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সংক্রমণ থেকে বেঁচে যাওয়াদের মধ্যে মৃত্যু বেশি ৬০ শতাংশ।

করোনা–পরবর্তী শারীরিক সমস্যা ও জটিলতা নিয়ে এই গবেষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের গবেষকেরা। গবেষণায় ৮৭ হাজার করোনা আক্রান্ত রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গবেষকেরা এসব তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ লাখ সাধারণ মানুষের তথ্যের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ২২ এপ্রিল এ নিয়ে বিজ্ঞান সাময়িকী নেচার-এ একটি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে।

সংক্রমণের ফলে দীর্ঘ মেয়াদে শরীরের কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কীভাবে আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তারও বর্ণনা আছে গবেষণা প্রবন্ধে। তালিকাটি এ রকম:

শ্বাসতন্ত্র: কাশি, শ্বাসকষ্ট, রক্তে অক্সিজেনের স্বল্পতা
স্নায়ুতন্ত্র: স্ট্রোক, মাথাব্যথা, স্মরণশক্তি কমে যাওয়া, স্বাদ ও ঘ্রাণের সমস্যা
মানসিক স্বাস্থ্য: উদ্বেগ, ঘুমের সমস্যা,
বিপাকতন্ত্র: নতুন করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, স্থূলতা, কোলেস্টেরল বৃদ্ধি
রক্তসঞ্চালন পদ্ধতি: তীব্র হৃদ্‌যন্ত্রের রোগ, হার্ট ফেইলিওর, ধড়ফড়ানি, অনিয়ন্ত্রিত হৃৎস্পন্দন
পরিপাকতন্ত্র: কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া
কিডনি: তীব্র কিডনি সমস্যা, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ
ত্বক: শরীরে র‌্যাশ ওঠা, চুল পড়া

এসব ছাড়াও পায়ে ও ফুসফুসে রক্ত জমাট বাঁধা, অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, অবসাদের কথাও গবেষকেরা বলেছেন। সবাই যে এসব সমস্যার মুখোমুখি হবেন, তা নয়। তবে একসঙ্গে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ার নজির আছে, যা স্বাস্থ্য ও জীবনমানের ওপর প্রভাব ফেলছে।

গবেষকেরা বলছেন, এটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে করোনার প্রাথমিক সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠার পর নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। করোনায় আক্রান্ত হলেও অনেকের হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা করার প্রয়োজন হয়নি। ছয় মাস পর দেখা যাচ্ছে, তাঁদের মধ্যে মৃত্যুঝুঁকি বেশি। গবেষকেরা করোনার সঙ্গে সম্পর্কিত আরও বেশ কিছু রোগ শনাক্ত করেছেন। এতে করোনার দীর্ঘ মেয়াদি জটিলতার একটি চিত্র পাওয়া যায়। আগামী বছরগুলোতে বৈশ্বিক জনসংখ্যার ওপর রোগের বড় ধরনের বোঝা চেপে বসবে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

গবেষকেরা সংক্রমণের পরবর্তী ছয় মাসকে সময়ের মাপকাঠি ধরেছেন। এই সময়ে এক হাজার সুস্থ হওয়া ব্যক্তির মধ্যে আটজনের মৃত্যু হতে দেখা গেছে। অন্যদিকে যেসব ব্যক্তি কোভিডে আক্রান্ত হয়ে ৩০ দিনের বেশি হাসপাতালে ছিলেন, তাঁদের ১ হাজার জনের মধ্যে ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে ছয় মাসের মধ্যে। কোভিডে আক্রান্ত হননি তাঁদের তুলনায় এঁদের মৃত্যু ৬০ শতাংশ বেশি।

এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এম এ ফয়েজ একটি জাতীয় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কোভিডে আক্রান্ত হলে দীর্ঘ মেয়াদে জটিলতা হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে আমাদের দেশে রোগের গতিপ্রকৃতি বা ধরন বুঝতে গেলে পর্যাপ্ত তথ্য–উপাত্ত দরকার। তা আমাদের নেই।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!