২৩ দিন ধরে মা-ছেলে খুনের মামলা ঘুরপাক খাচ্ছে আলামত ঘিরেই

পুলিশের ঢিলেমিতে হতাশ মামলার বাদিও

ঘটনার ২৩ দিন পার হয়ে গেলেও চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁওয়ের রমজান আলী সেরেস্তাদারের বাড়ি এলাকায় জোড়া খুনের মামলার তদন্তে কোনো অগ্রগতিই নেই। গ্রেপ্তার হয়নি এমনকি প্রধান আসামি। এমন একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনায় পুলিশের এমন ঢিলেঢালা মনোভাবে হতাশ মামলার বাদিও।

গত ২৪ আগস্ট চান্দগাঁওয়ে নিজের বাসায় খুন হন গুলনাহার বেগম ও ছেলে রিফাত। তখন নগর পুলিশ, নগর গোয়েন্দা পুলিশ, সিআইডি, পিবিআইয়ের পাশাপাশি র‌্যাবও নামে। ওই ঘটনার পর সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট আলামত সংগ্রহ করে যেভাবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করেছে, এখন পর্যন্ত অগ্রগতি বলতে ওইটুকুই। এর বাইরে এই মামলার কোনও অগ্রগতি নেই এখনও।

এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও চান্দগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সজল দাসের সঙ্গে কথা বলে এসব বিষয় জানা গেছে।

খুনে ব্যবহৃত ছুরি কী কসাইয়ের ছুরি নাকি বাসায় ব্যবহৃত ছুরি জানতে চাইলে এসআই সজল দাস চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সিআইডি থেকে আমরা যেসব আলামত বুঝে পেয়েছি, তা সেই অবস্থাতেই আছে। আসামি আটক হলে তার স্বীকারোক্তির সাথে মিলিয়ে সত্যতা যাচাই করা হবে। ছুরি গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার হতো নাকি অন্য কাজে তখন বলা যাবে। তবে মামলার আলামতে মেলামাইনের ভাঙ্গা প্লেটের টুকরোও ছিল।’

উল্লেখ্য, এই মামলার প্রধান আসামি মো. ফারুক বহদ্দারহাট খাজা রোড এলাকার সিরাজ কসাইয়ের ছেলে।

মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার আতাউর রহমান বলেন, ‘আমরা আসামি ধরায় সচেষ্ট আছি। শিগগিরই অভিযুক্ত আসামিকে আইনের আওতায় আনা হবে।’

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, ‘প্রতিটি মামলাই আমাদের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ব্যবহৃত প্রযুক্তি সম্পর্কে যদি অপরাধী সচেতন হয়, তখন সে প্রযুক্তির আওতায় থাকে না। এই মামলার আসামির ক্ষেত্রেও অনেকটা তাই। তবুও আমাদের একাধিক ইউনিট কাজ করছে। একটু সময় লাগলেও আসামি আইনের আওতায় আসবে।’

প্রসঙ্গত, ২৪ আগস্ট নিজের বাসায় খুন হন গুলনাহার বেগম ও ছেলে রিফাত। তখন নগর পুলিশ, নগর গোয়েন্দা পুলিশ, সিআইডি, পিবিআইয়ের পাশাপাশি র‌্যাবও নামে।

ঘটনার ২৩ দিন পার হওয়ার পরও আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় হতাশ মামলার বাদি ও গুলনাহার বেগমের মেয়ে ময়ুরী বেগম। তিনি বলেন, ‘পুলিশ ওয়ান-টুতে আসামি ধরে ফেলে। কিন্তু আমার মা-ভাইয়ের খুনি ধরতে এতোদিন কেন লাগছে কিছু বুঝতেছি না। আমরা হতাশ।’

লাশের সুরতহাল প্রতিবেদনে ওঠে আসে, নিহত গুলনাহার বেগমের পুরো শরীরজুড়ে ধারালো ছুরির ১৮টি আঘাত ছিল। পেটের বামপাশে করা দুটি আঘাতের স্থানে শরীর থেকে বেরিয়ে যায় নাড়িভুঁড়ি। বাকি আঘাতগুলো দুই উরু, তলপেট আর হাতে। যা দেখে তদন্ত সম্পৃক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, খুনির হাত থেকে জীবন বাঁচাতে প্রাণপণ লড়েছেন গুলনাহার বেগম (৩৩)। আর মায়ের হত্যাকাণ্ড দেখে ফেলায় তার মাত্র দুই ফুট দূরত্বে পড়ে ছিল ৯ বছরের শিশু রিফাতের লাশও। মায়ের লাশ বাথরুমের ভেতরে, রিফাতের লাশটি দরজার সাথে লাগোয়া বেসিনে উপুড় হয়ে পড়ে ছিল। শিশু রিফাতের কণ্ঠনালী কেটে ফেলা হয়েছে। তার হাতেও ছুরির দুটি কাটা দাগ ছিল। যা থেকে অনুমান করা হচ্ছে খুনির ছুরির আঘাত ঠেকাতে চেয়েছিল রিফাত তার কচি দুই হাতে।

মামলায় অভিযুক্ত ফারুকের সাথে গুলনাহার বেগমের পাতানো ভাই-বোনের সম্পর্ক ছিল। পেশায় ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি ফারুক অবসর সময়ে গুলনাহারের বানানো নাস্তা বিক্রি করতো। লকডাউনের সময়েই একইভাবে বিরিয়ানি বিক্রি করছিল ফারুক। ফারুক বিভিন্ন সময়ে টাকার লেনদেন নিয়ে গুলনাহারকে হত্যার হুমকি দিতো।

প্রতিবেশীরা জানান, গুলনাহারের স্বামী আরেক বিয়ে করে গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরে থাকেন। এই সংসারে তার এক মেয়ে দুই ছেলে ছিল। এক ছেলেকে তার বাবা সাথে নিয়ে গেলে তিনি গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। মেয়ে আজিম গ্রুপের পোশাক কারখানায় চাকরি পাওয়ার পর তিনি ঘরে নাস্তা বানাতেন। পাতানো ভাই ফারুক তা বিক্রি করতো। তবে তাদের ঝগড়া ছিল নিত্যসঙ্গী।

ঘটনার পর সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) এসএম মোস্তাক আহমেদ খান, উপ-কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক, গোয়েন্দা দক্ষিণ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আসিফ মহিউদ্দিন, র‌্যাবের মেজর মুশফিকুর রহমান, সহকারী পুলিশ সুপার তারিক আজিজ, সিএমপির উত্তর জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার দেবদূত মজুমদার, ডিবির সহকারী কমিশনার জাহেদ মাহমুদসহ পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছিলেন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!