আকবরশাহের নুরু যেন সাক্ষাৎ ‘গব্বর সিং’!

আসামি ২২ মামলার, তবু ধরাছোঁয়ার বাইরে

বলিউডের ‘শোলে’ ছবির গব্বর সিংয়ের বসবাস ছিল গহীন অরণ্যে। আর ২২ মামলার আসামি শীর্ষ সন্ত্রাসী নূরে আলম নুরু ও তার বাহিনীর বসবাস চট্টগ্রাম নগরীর জনবহুল আকবরশাহ এলাকায়। এটুকু ছাড়া বাকি অনেক কিছুতেই নাকি দুজনের বেশ মিল!

২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ২২ মামলার আসামি নুরু ও তার বাহিনীর হাতে বেশ ক’বার হামলার স্বীকার হয়েছে খোদ পুলিশই। আকবরশাহ এলাকার পূর্ব ফিরোজশাহ ১নং ঝিল, বেলতলি ঘোনা, নাছিয়া ঘোনা এলাকা দাবড়ে বেড়াচ্ছে নুরু (৩০) ও তার বাহিনী। নুরু কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম থানার ধনা মিয়ার ছেলে।

জানা যায়, ২০১৪ সালে বন্দুক, এলজি, গুলিসহ বিপুল অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন নুরু। গুলি ও এলোপাথাড়ি কিরিচ চালনায় পারদর্শী তিনি। তাই শোনা যায়, তার বাহিনীকে অনেক ক্ষেত্রে এড়িয়ে চলে পুলিশ। কারণ বেশ ক’বার পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আর এ পথে এগোয় না তারা। ইট-পাথরের শহরে আরো এক গব্বর সিংয়ের আবির্ভাব যেন নুরু— বললেন ঝিলপাড় এলাকার জমিলা খাতুন (৫০)।

একের পর এক অপরাধ করেও নুরু ও তার বাহিনী রয়ে যায় অধরা। পূর্ব ফিরোজশাহ ১ নম্বর ঝিলপাড়, নাছিয়া ঘোনা, বেলতলী ঘোনায় সরকারি পাহাড় কেটে স্বল্পমূল্যে বিক্রি, চাঁদাবাজি, মাদক, জুয়া, অপহরণ, মাছ শিকার গাছ কাটা, ভূমিদস্যুতাসহ নানা অপরাধে জড়িত তারা। নুরু একসময় বিএনপির রাজনীতি করতেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার হাত ধরে হয়ে ওঠে বেপরোয়া। বাড়তে থাকে তার অপরাধের পরিধি, বাড়তে থাকে মামলাও। ২০১৪ সালের ৭ জুলাই ১৭টি মামলায় চালান হলেও, এখন এ সংখ্যা ২২। স্থানীয় যুবলীগ নেতা নিশান ও পাভেলের সাথে আধিপত্যের দ্বন্দ্বে কয়েকবার গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে।

রাতে বিদ্যুৎ তারে সংযোগ দিয়ে বেষ্টনী দেওয়ায় বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসে এক পুলিশ কনস্টেবল। দিনের বেলায় তিন রাস্তার মুখে পাহারা ও ভেতরে অস্ত্র হাতে পাহারায় থাকে তার লোকজন। সোর্সের মাধ্যমে জেনে যায় যে কোনো অভিযানের ব্যাপারে। আকবরশাহ এলাকার সব জায়গায় ইয়াবার পাইকারি হাট এখন এই নাছিয়া ঘোনা, বেলতলি ঘোনা, ঝিলপাড় এলাকা। তিনটি রাস্তা থাকায় সহজে হামলা চালিয়ে সটকে পড়া যায়।

জানা গেছে, নুরু সব সময় অস্ত্র বহন করেন। তবে কিরিচ নাকি তার প্রিয় অস্ত্র। তাই কিরিচ হাতে ফটো শ্যুটও করতে দেখা গেছে তাকে। দুর্ধর্ষ এ ক্যাডারকে ধরতে ছবি সহকারে সাবেক এক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার লিফলেট বিতরণেও কাজ হয়নি।

আকবরশাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের টিম তাকে ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’

এলাকাবাসীর প্রশ্ন, এরকম একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে কী করে?

জেএস/সিআর

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!