২২ ভরির হার, বউকে গরিব ইয়াবা ব্যবসায়ীর উপহার!

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলার রঙ্গিয়াখালীর সৈয়দ নুর (৩৬), পেশায় একজন টমটমচালক। বসবাস করতেন মাটির ঘরে। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে সেই ঘরে টাঙ্গানো আছে পলিথিনও। জীর্ণশীর্ণ এই অবস্থা দেখে বোঝার উপায় নেই এ ঘরের মালিকও কোটিপতি। তার সাজানো এই ছদ্মবেশ প্রকাশ হয় ‘থার্টিফার্স্ট নাইটে’ প্রিয়তমা স্ত্রীকে ২২ ভরি স্বর্ণের হার উপহার দেওয়ার খবরে। টমটম চালকের ছদ্মবেশে সৈয়দ নুর বড় মাপের ইয়াবা কারবারি বলে দাবি করেছে পুলিশ।

২২ ভরি স্বর্ণ উপহারের খবর পেয়ে টেকনাফ থানা পুলিশ তদন্তে নেমে প্রথমে হতচকিত হয়ে যায়। তারপর নিবিড় তদন্তে জানতে পারে সৈয়দ নুর একটা সময় নুর হাফেজের চিংড়ি ঘেরের কর্মচারী ছিল। নুর হাফেজ ডিসেম্বরে সাড়ে ৮ লাখ ইয়াবাসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে পুলিশের ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছিলেন।

টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘স্ত্রীকে ২২ ভরি স্বর্ণের অলঙ্কার উপহার দেওয়ার খবরে আমরা তদন্তে নেমে অবাক হই। সৈয়দ নুরের লাইফ স্ট্যাইল দেখলে কোনভাবেই বোঝা যাবে না সে এত টাকার মালিক! মূলত ডিসেম্বরে ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত নুর হাফেজের ইয়াবা পরিবহন করতো সৈয়দ নুর। কোটি টাকা থেকে কমিশন পেতো। আবার পরিবহনের খরচ তো পেতোই।’

ঘরের জীর্ণশীর্ণ এই অবস্থা দেখে বোঝার উপায় নেই এ ঘরের মালিকও কোটিপতি!
ঘরের জীর্ণশীর্ণ এই অবস্থা দেখে বোঝার উপায় নেই এ ঘরের মালিকও কোটিপতি!

ওসি প্রদীপ আরো জানান, বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) রাতের অভিযানে সৈয়দ নুরের ঘর থেকে ১০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি উদ্ধার করা হয়েছে সেই স্বর্ণের হার ও ক্রয় রশিদ।

সৈয়দ নুরের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় অস্ত্র, মাদক ও পুলিশের উপর হামলা অভিযোগে তিনটি মামলা রয়েছে বলেও জানান ওসি প্রদীপ চন্দ্র দাস।

পুলিশের ধারণা, ইয়াবা কারবারিদের প্রাসাদসম বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়ায় তারা ছদ্মবেশে জীবনযাপন করছেন। এই ঘটনায় নড়েচড়ে বসছে কক্সবাজারের প্রশাসন।

কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘কক্সবাজার জেলার টেকনাফের বেশিরভাগ ইয়াবা ব্যরবসায়ীর একসময়কার পেশা ছিল টমটম চালনা, অটোরিক্সা ড্রাইভার, ভ্যা নচালক, জেলে, চাষী, বাসের হেলপার ড্রাইভার বা ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যাবসায়ী। ইয়াবা ব্যনবসা করে রাতারাতি কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা এবং বানিয়েছেন আলিশান বাড়ি। এসব তথাকথিত ব্যনবসায়ীদের এখন দিনকাল খুব খারাপ যাচ্ছে। কেউ আত্নসমর্পণ করেছে, কেউ গ্রেপ্তার হয়ে জেলখানায় আছে, কেউ ক্রসফায়ারে দুনিয়া থেকে চলে গেছে কেউ বা পলাতক জীবনযাপন করছে। তাদের অনেকের আলিশান বাড়ি ঘর স্থানীয় সচেতন জনতা ভেঙ্গে দিয়েছে। ফলে নতুন করে এই ঘৃণ্য পেশায় আসা কিছু ইয়াবা ব্যিবসায়ী জনগণের চোখকে ধোকা দেওয়ার কৌশল হিসেবে এখন আর আলিশান বাড়ি বানাচ্ছে না। ভিন্ন কৌশলে টাকা জমানো শুরু করেছে। তাদেরই একজন টেকনাফের হ্নীলা এলাকার সৈয়দ হোসেনের পুত্র সৈয়দ নুর। পেশায় একজন টমটম চালক সৈয়দ নুরের বাড়িঘর দেখে উপায় নাই যে তিনি কত টাকার মালিক! স্ত্রীর জন্য কিনেছেন লাখ লাখ টাকার অলংকার। তার মধ্যে একটিরই ওজন ২২ ভরি! অবশেষে ধরা পড়েছেন তথাকথিত এই নিরীহ টমটম চালক।’

এফএম/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!