২০ লাখ টাকায় যমুনা অয়েলে সভাপতির পদ!

কাশেম মোল্লা। ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে তিনি এখন বড় নেতা। দেশের রাষ্ট্রায়াত্ত তেল সেক্টর যমুনা অয়েল কোম্পানির (টার্মিনাল) সি-ইউনিট জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি। চলতি বছরের শুরুর দিকে জাতীয় শ্রমিক লীগের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে যমুনা অয়েল কোম্পানি লেবার ইউনিয়ন (সিবিএ) নির্বাচনে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। যমুনা অয়েলের সি-ইউনিট কমিটির সভাপতি হওয়ার পর তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও জাতীয় শ্রমিক লীগ নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে সভাপতির পদটি কিনেছেন— এমনটাই দাবি করছেন শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরা।

অভিযোগ রয়েছে, জাতীয় শ্রমিক লীগের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে চলতি বছরের ১৫ জুলাই যমুনা অয়েল টার্মিনাল সি-ইউনিটে কাশেম মোল্লাকে সভাপতি ও আবুল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে ৪৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিকে অর্থের বিনিময়ে অনুমোদন দেয় শ্রমিক লীগ পতেঙ্গা-হালিশহর অঞ্চল। চট্টগ্রাম নগরের উত্তর পতেঙ্গা গুপ্তখাল এলাকায় যমুনা অয়েল কোম্পানির ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত এই কাশেম মোল্লা প্রকাশ বিহারী কাশেম। ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন। অভিযোগ রয়েছে, কাশেম মোল্লা ও আবুল হোসেন দুজনই বিএনপির সক্রিয় কর্মী ছিলেন।

পদ্মা অয়েল, মেঘনা, যমুনা, এসোসিয়েল, এলপিজি, মবিল যমুনা, ইস্টার্ন রিফাইনারি, টিএসপি, ইস্টার্ন ক্যাবল, হাইডেলবার্গ সিমেন্টসহ মোট ১৩টি ইউনিট রয়েছে জাতীয় শ্রমিক লীগের পতেঙ্গা-হালিশহর অঞ্চলের।

জাতীয় শ্রমিক লীগ পতেঙ্গা-হালিশহর অঞ্চলের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল আবছার বলেন, কাশেম মোল্লা ও আবুল হোসেন কখনও জাতীয় শ্রমিক লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২০১৩ সালের কমিটি ও মহানগর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে পরামর্শ না করেই যমুনা অয়েল কোম্পানির টার্মিনালে নতুন একটি ইউনিট করে বিএনপিতে সক্রিয় এই দুই নেতাকে সভাপতি ও সম্পাদক করা হয়েছে। এই কমিটির কোনো ভিত্তি নেই। ২০১৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত কখনও এই দুজনকে শ্রমিক লীগের কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায়নি।

একটি সূত্র জানায়, কাশেম মোল্লা সিবিএ নেতা হওয়ার পর যমুনা অয়েল কোম্পানিতে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে মাস্টাররোলে বেশ কয়েকজনকে চাকরি দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, চলতি বছর সিবিএ নির্বাচনকালীন প্রতিপক্ষের একাধিক কর্মচারীকে চাকরিচ্যূত করাসহ অনেককে বদলিও করিয়েছেন। চাকরিচ্যূতরা সবাই মাস্টাররোলে কর্মরত ছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যমুনা অয়েল টার্মিনাল ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন বলেন, বিষয়টি সঠিক না। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে দলের কয়েকজন ব্যক্তি।

ফোনে কথা হলে কাশেম মোল্লা বলেন, আমার শ্বশুর আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। আমি কিভাবে বিএনপির রাজনীতি করব?

পরে তিনি ফোনে কথা না বলে তার অফিসে যাওয়ার অনুরোধ জানান।

জানতে চাইলে জাতীয় শ্রমিক লীগ পতেঙ্গা-হালিশহর অঞ্চলের সভাপতি মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, পতেঙ্গা-হালিশহর অঞ্চলের যুগ্ম-সম্পাদক ও দপ্তর সম্পাদকের সঙ্গে পরামর্শ করে ১৫ জুলাই যমুনা অয়েল কোম্পানি সি-ইউনিটে নতুন একটি কমিটি দেওয়া হয়। যারা এই কমিটির বিরোধিতা করছেন, তারা জাতীয় শ্রমিক লীগের কেউ না।

তবে জাতীয় শ্রমিক লীগ চট্টগ্রাম মহানগর সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল হক এটলি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, যমুনা অয়েল টার্মিনাল সি-ইউনিট কমিটির অনুমোদন সম্পূর্ণ অবৈধ। জাতীয় শ্রমিক লীগের গঠনতন্ত্র অনুসারে লোকাল সংগঠন বা মহানগরের ওই কমিটির অনুমোদন দেওয়ার এখতিয়ার নেই। কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন অবশ্যই লাগবে। কমিটি বাতিলের জন্য মহানগর সভাপতি বখতিয়ার সাহেবের সঙ্গে পরামর্শ করে পকেট কমিটি ভেঙ্গে দিতে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছিল। অবৈধ কমিটি বিষয়ে বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিবৃতিও দেওয়া হয়েছিল।

তিনি আরো বলেন, জাতীয় শ্রমিক লীগ পতেঙ্গা-হালিশহর অঞ্চলের সভাপতি ইউনুস ও সাধারণ সম্পাদক হোসেন দলের গঠনতন্ত্র বহির্ভূত সিদ্ধান্তে এই কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন। যা তাদের এখতিয়ার বহির্ভূত। অর্থের বিনিময়ে ও অসৎ উপায় অবলম্বন করে কমিটি দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সেখানে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি একটি নতুন কমিটির অনুমোদন দেয়। কেন্দ্রের দেওয়া কমিটিকে বিতর্কিত করতে বিএনপি-জামায়াতের লোকেরা এসব করেছে।

মুআ/সিআর

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!