২০ বছরেই স্বার্থক শাহাদাত-বক্কর

২০ বছরেই স্বার্থক শাহাদাত-বক্কর 1এহসান আল-কুতুবী : সিনিয়র নেতাদের ব্যর্থতাকে পেছনে ফেলে স্বার্থক হতে চলেছেন নগর বিএনপির শাহাদাত-বক্কর নেতৃত্বাধীন কমিটি । এর আগে ২০ বছরে বিএনপির চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি পাঁচবার ঘোষণা করা হলেও কোনো কমিটিই পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। ১৯৯৭ সালে মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনকে সভাপতি, দস্তগীর চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক ও এফএইচ খান ফজুকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে নগর বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে ২০০৪ সালে সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমকে আহ্বায়ক করে এক সদস্য বিশিষ্ট কমিটি এবং ২০০৮ সালে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৪ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এর পর ২০০৯ সালে ‘সুপার ফাইভ’ নামে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরী কমিটি গঠন করা হলেও এসব কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া যায়নি।

সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৬ আগস্ট ডা. শাহাদাতের নেতৃত্বে নগর বিএনপির সর্বশেষ যে কমিটি গঠন করা হয়, সেই কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পর দল পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়। এরই অংশ হিসেবে ওই বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে মহানগর বিএনপির ৪১টি ওয়ার্ড কমিটির মধ্যে ৩৯টি ওয়ার্ডের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। কিন্তু দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দূরত্ব ও সিনিয়র নেতাদের বিরোধের কারণে কমিটি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া থমকে যায়। প্রায় এক বছরে চারটি ওয়ার্ড কমিটি গঠন করতে সক্ষম হয় বর্তমান কমিটি।

তবে, এতদিনের ব্যর্থতাকে পেছনে ফেলে বর্তমান কমিটি স্বার্থক হতে যাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন নগর বিএনপির এক সিনিয়র নেতা । তিনি দাবী করেন, বর্তমান শাহাদাত-বক্কর কমিটি স্বার্থক । তাদের নেতৃত্বে আমরা পরিপূর্ণ কমিটির রূপ পাচ্ছি । মূল্যায়িত হচ্ছেন তৃণমূলের দীর্ঘদিনের অবহেলিত, ত্যাগী নেতারাও। এটা বর্তমান কমিটির কৃতিত্ব বলে মনে করছেন তিনি ।

এদিকে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে চট্টগ্রামের বিএনপি নেতাদের দফায় দফায় রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর রোববার রাতেই কমিটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। বিএনপি গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটির আকার ১৫১ জনের হওয়ার কথা থাকলেও এবার মহানগরীর পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পাচ্ছেন ২৫২ জন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছ থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে কমিটি ঘোষণা করা হবে।

অন্যদিকে আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশজুড়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করতে বিভিন্ন জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের তৎপরতা চালাচ্ছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে নগর কমিটির পাশাপাশি চট্টগ্রামের থানা পর্যায়ের কমিটিগুলোও ঘোষণা করা হচ্ছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের একটি সূত্র জানায়, রোববার বিকেল পর্যন্ত নগরীর আটটি থানা কমিটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। আপাতত থানা কমিটিগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নাম চূড়ান্ত হয়েছে। খালেদা জিয়ার কাছ থেকে ওই কমিটি অনুমোদন নেওয়ার জন্য কমিটি গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানের হাতে তালিকা জমা দিয়েছেন চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর। অনুমোদনের পর আজকালের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে ওই কমিটি ঘোষণা করা হবে। জানা যায়, কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পাওয়া নেতাদের মধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর অনুসারীই বেশি।

চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি ঘোষণার সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান শামীম জানান, চট্টগ্রাম নগর কমিটি নিয়ে আর কোনো ঝামেলা নেই, চূড়ান্ত হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় নেতৃত্বের জট সৃষ্টি হয়েছিল। তাই যোগ্য, ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের স্থান করে দিতে কলেবর বাড়ানো হয়েছে। নগর কমিটির সঙ্গে ঘোষণার জন্য থানা পর্যায়ের কমিটিগুলো চূড়ান্ত করা হয়েছে। নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর বলেন, নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে নগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
নগরের গুরুত্বপূর্ণ পদ পাচ্ছেন যারা: সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ২৫২ সদস্য বিশিষ্ট নগর কমিটির উল্লেযোগ্য পদের মধ্যে সহসভাপতি পদে ২৮ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ১৪ জন, সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে ১৬ জন ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে তিনজন রয়েছেন। সভাপতি ডা. শাহাদাত ও সিনিয়র সহসভাপতি আবু সুফিয়ানের পরেই দ্বিতীয় সহসভাপতি হিসেবে নাম রয়েছে এমএ আজিজের। তিনি বিএনপি নেতা আমীর খসরুর সমর্থক হিসেবে পরিচিত। প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে সাইফুল আলমকে। তিনিও খসরু সমর্থক হিসেবে পরিচিত। তিন সাংগঠনিক সম্পাদকের পদে রয়েছেন মনজুরুল আলম মনজু, ছাত্রদলের সাবেক নেতা কামরুল ইসলাম ও হাজি মো. তৈয়ব।
থানা কমিটির সভাপতি-সম্পাদক যারা: জানা যায়, ছগীর আহমদকে সভাপতি ও আতাউর রহমান শাহীনকে সাধারণ সম্পাদক করে বাকলিয়া থানা বিএনপির কমিটি করা হয়েছে। মো. আজমকে সভাপতি ও ফরিদ খানকে সাধারণ সম্পাদক করে চান্দগাঁও থানা, মো. মঞ্জুরুর রহমান চৌধুরীকে সভাপতি ও জাকির হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে কোতোয়ালি থানা, সাইফুল ইসলাম বাবুলকে সভাপতি ও নুর হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে চকবাজার থানা, সেকান্দর হোসেনকে সভাপতি ও বাদশা মিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে ডবলমুরিং থানা, আবদুল্লাহ আল হারুনকে সভাপতি ও আবদুল কাদের জসিমকে সাধারণ সম্পাদক করে বায়েজিদ থানা, হুমায়ুন কবিরকে সভাপতি ও মনির আহমদকে সাধারণ সম্পাদক ও জাকির হোসেনকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে পাঁচলাইশ থানা বিএনপির কমিটি করা হয়েছে। চট্টগ্রাম নগরীতে ১৫টি থানা রয়েছে। গতকাল রাতেই আরও দু-একটি থানা কমিটি চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!