২০০ টাকার জিনিস গায়ে লেখা ৪৫০, বিক্রি ৬০০ টাকায়

হ্যান্ড স্যানিটাইজারের উপকরণেও ভেজাল

আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল বা আইপিএ হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির প্রধান উপকরণ। ২০ দিন আগেও এ পণ্যটির লিটারপ্রতি দাম ছিল ২০০ টাকা। এখন পণ্যটির বোতলের গায়ে লেখা হয়েছে ৪৫০ টাকা। কিন্তু বিক্রি করা হচ্ছে ৬০০ টাকা করে। চট্টগ্রাম নগরীর আন্দরকিল্লা এলাকায় তাজ সাইন্টিফিক নামের প্রতিষ্ঠানে চিত্র এটি। শুধু তাই নয়, উচ্চমূল্য নিলেও এ পণ্য বিক্রির পর ক্রেতাদের কোন রশিদও দিচ্ছে না তারা!

জানা গেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের সাথে সাথে চাহিদা বেড়েছে হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ জীবাণুনাশক অন্যান্য পণ্যের। দাম বেড়ে যাওয়ায় ঘরে বসেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি শুরু করে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন। এরই মধ্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির প্রধান উপকরণ আইপিএর দাম বাড়ানো হয়েছে তিন গুণ।

সরেজমিনে চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা ও আনসার ক্লাব এলাকার ক্যামিক্যালের পাইকারি ও খুচরা দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, অতিরিক্ত দাম নিলেও হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির উপকরণ— আইসোপ্রোপাইল, গ্লিসারিন, হাইড্রোজেন পার অক্সাইডসহ জীবাণুনাশক অন্যান্য কেমিক্যাল কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন ক্রেতারা।

ক্রেতাদের অভিযোগ, ২০ দিন আগের বাজারমূল্যের চেয়েও তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে আইপিএ। সেই সাথে এসব উপকরণের সাথে মেশানো হচ্ছে পানি। বাজারে এসব ভেজাল জীবাণুনাশক ছড়িয়ে পড়ায় বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে দেওয়া হ্যান্ড স্যানিটাইজার জীবাণু নিধনে কতটা ভূমিকা রাখবে তা নিয়েও প্রশ্ন ক্রেতাদের। এ পর্যন্ত জেলা প্রশাসনও এই জায়গায় কোন অভিযান পরিচালনা করেনি। ফলে ইচ্ছেমতোই বাড়ানো হয়েছে সব ধরনের হ্যান্ড সেনিটাইজার তৈরির উপকরণের দাম।

নগরীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইমজামাম আকিব চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘গত ২২ মার্চ বাকলিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের পক্ষে আমরা নিজেদের তৈরি হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়েছিলাম। সেদিন নগরীর আন্দরকিল্লা এলাকার তাজ সাইন্টিফিক নামের প্রতিষ্ঠানটিতে আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহলের দাম ছিল লিটার প্রতি ৫০০ টাকা। আজ (২৪ মার্চ) একই জিনিস লিটার প্রতি ৬০০ টাকা করে নিলো। অথচ প্রায় ২০ দিন আগে ল্যাবের কাজের জন্য নিয়েছিলাম প্রতি লিটার ২০০ টাকা করে।’

বিক্রেতাদের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে তাজ সাইন্টিফিকে গেলে দেখা যায়, দেয়ালে একটি প্ল্যাকার্ড ঝোলানো রয়েছে। তাতে লেখা আছে— ‘আপনার অভিযোগ আমাকে জানান।’ অতিরিক্ত দামের বিষয়ে প্ল্যাকার্ডে ঝোলানো নম্বরটিতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট রসায়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. জাকির হোসাইন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কয়েকদিন আগেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করে সহকর্মীদের দিয়েছিলাম। ১০ দিনের ব্যবধানে এই সব উপকরণের দাম এতই বেড়েছে দ্বিতীয় দফায় তৈরি করে জনসাধারণের মাঝে দেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও তা সম্ভব হয়নি।’

অন্যদিকে চট্টগ্রামের কেমিক্যাল পণ্যের অন্যতম পাইকারি বাজার জেল রোড এলাকায়ও লেগেছে জীবাণুনাশক উপকরণ কেনার ভীড়। তবে ক্রেতাদের দাবি, তাদের চাহিদা অনুযায়ী হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির উপকরণের সংকট দেখিয়ে কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে রেডিমেইড হ্যান্ড স্যানিটাইজার। পানির সাথে নামমাত্র আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল মিশিয়ে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের নামে। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী জীবাণুনাশক হ্যান্ড স্যানিটাইজার মিশ্রণে থাকতে হবে অন্তত ৬০ ভাগ আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল।

পাইকারি বিক্রেতাদের দাবি, বাজারে সংকট সৃষ্টি হয়েছে এই উপকরণের। তবে এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির উপকরণের দাম বাড়ানো হলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব।’

এমএফও/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!