শিক্ষকমন্ডলী এবং প্রশাসনের দায়িত্বপালনকারী ব্যক্তিদের সমন্বয়ে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) এগিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভী।
শনিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কুমিরা ক্যাম্পাস অডিটোরিয়ামে শিক্ষকদের সঙ্গে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি এ সময় বলেন, ‘শিক্ষকদের গবেষণামুখী হতে হবে। আমরা র্যাংকিংয়ে এগিয়ে যেতে চাই। এ দুটি কাজের জন্য আমরা ৫০ লক্ষ টাকা বাজেট দিয়েছি। শিক্ষকরাই পারেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুনাম বৃদ্ধি করতে। একাডেমিক পর্যায়ে কিভাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তা শিক্ষকদেরই ঠিক করতে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগের চেয়ারম্যান ও প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত সকলের সঙ্গে শিক্ষকদের সমন্বয় করে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এসেছি মার্চের ৬ তারিখ। কোনো টাকা আর ছিল না ১৭টি একাউন্টে। আমরা এসে কোনো মাসের বেতন বকেয়া রাখিনি। শিক্ষকদের বিল বাকি ছিল প্রায় তিন কোটি টাকা। ইতোমধ্যে আমরা ২ কোটি টাকা দিয়ে দিয়েছি। প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে লোনও চালু করে দেব আমরা অচিরেই। অতীতের প্রশাসন ২৭ মাসে ১৩ কোটি টাকা জমা দেয়নি। আমাদের প্রশাসনের আমলের সব টাকা আমরা জমা রেখে দিচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ কেউ বলেছেন, আমরা ইসলাম থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। আপনারাই বলেন, এখানে কি ইসলামের রীতি ভাঙা হচ্ছে? কোনোভাবেই না। শরীয়াহ ফ্যাকাল্টির উন্নয়ন আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর যেভাবে হয়েছে তা অতীতে কখনোই হয়নি। শরীয়াহ ফ্যাকাল্টিকে তারা অস্তিত্বের সংকটে ফেলেছিল, সেই শরীয়াহ ফ্যাকাল্টিকে আমরা শক্ত ভিত্তিতে দাঁড় করিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মেয়েদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হতে বাধা দিয়েছিল তারা। আমি এ জন্য অনেক ঝগড়া করেছিলাম। আমার দেওয়া যুক্তির উপর দাঁড়িয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের জন্য ক্যাম্পাস হয়েছে। আজকে হাজারও নারী এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে দেশ-বিদেশে ভূমিকা রাখছে।’
বিওটি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের ৮ থেকে ৯ মাসের বেতন জমা আছে। আমরা অচিরেই ২০০ কোটি টাকার ফান্ড দেখার অপেক্ষায় আছি। সৌদি আরবসহ মুসলিম বিশ্বের সেরা সেরা ব্যক্তিত্বরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো কিছুর অভাব থাকবে না। আমরা নতুন বেতন কাঠামো ঠিক করবো। পুরনো বেতন কাঠামো থাকবে না। গ্র্যাচুইটি যাচাইয়ের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী জানুয়ারি থেকে ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা প্রদান করা হবে। নতুন পে-স্কেল কমিটিও গঠন করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি ভাল থাকলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ক্যাম্পাসে আসবেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি এখন সরকারের সুদৃষ্টি আছে। সৌদি আরবের ওয়ামি থেকে অনেক স্কলারশিপ আসছে। চিঠিও দিয়েছে তারা।’
আবু রেজা নদভী বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষার আগে একটি অপশক্তি ষড়যন্ত্র করেছিল যেন শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে না আসে। কিন্তু অন্য বছরের তুলনায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার ২৫ কোটি টাকা দিয়ে রাস্তা করে দিচ্ছে আইআইইউসির ভেতরে-বাইরে। এটি আমাদের অনেক বড় অর্জন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর আনোয়ারুল আজিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য প্রফেসর কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, রিজিয়া রেজা চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার ড. রশীদ আহমেদ চৌধুরী, উপ উপাচার্য প্রফেসর ড. মছরুরুল মওলা, ট্রেজারার প্রফেসর ড. মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির, বিওটি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের প্রফেসর ড. শাহাদাত হোসেন, আইআইইউসি’ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর ড. গিয়াস উদ্দিন হাফিজ, বঙ্গবন্ধু রিসার্চ সেন্টার ফর ইসলাম এন্ড ইন্টাররিলিজিয়াস ডায়ালগের (বিআরসিআইআইডি) পরিচালক মো. ছরওয়ার আলম, ইনস্টিটিউট অব মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজেসের (আইএমএল) পরিচালক মুহাম্মদ ইফতেখার উদ্দিনসহ আইআইইউসি’র বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও বিভাগের চেয়ারম্যানবৃন্দ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ শফিউর রহমান।