১ হাজার টাকায় মামাতো বোনকে ধর্ষকের হাতে তুলে দেয় ১৯ বছরের স্মৃতি

চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিংয়ে ধর্ষণের শিকার হওয়া কিশোরীকে তার ফুফাতো বোন স্মৃতিই মাত্র এক হাজার টাকার বিনিময়ে ধর্ষক চান্দুর বাসায় দিয়ে এসেছিল বলে আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেি নিজেই জানিয়েছে ওই ধর্ষক।

মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট খায়রুল আমীনের আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন চান্দু মিয়া। এর পরপরই ভিকটিমের ফুফাতো বোন স্মৃতিকে (১৯) নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে ডবলমুরিং থানা পুলিশ।

মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ডবলমুরিং থানার উপ পরিদর্শক নুরুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘আদালতে চান্দু এই ঘটনায় তার সাথে ৪ জন সহযোগী থাকার কথা জানিয়েছে। যাদের তিনজনকেই আমরা আগে গ্রেপ্তার করেছি। চতুর্থ জন হচ্ছে ভিকটিমের ফুফাতো বোন স্মৃতি। সন্ধ্যার পর তাকেও আমরা হেফাজতে নিয়েছি। তবে এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করছে স্মৃতি।’

তিনি বলেন, ‘স্মৃতি দাবি করছে তাকে ফাঁসানোর জন্য চান্দু জবানবন্দিতে তার নাম উল্লেখ করেছে। যেহেতু স্মৃতি ভিকটিম পরিবারের সদস্য এবং এখনও ভিকটিমের জবানবন্দি নেওয়া হয়নি, সেহেতু আমরা এক্ষুণি তাকে গ্রেপ্তার দেখাচ্ছি না। আজ বুধবার ভিকটিমের জবানবন্দি নেওয়া হবে। এর পরেই আমরা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো।’

এর আগে ঘটনার দিনই ধর্ষিত কিশোরী স্বপ্নার ফুফা, যিনি স্মৃতির বাবাও, চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি জানান, ওই ভবনে নিয়ে গিয়ে নুরী বেগম কৌশলে স্বর্ণা ও স্মৃতিকে আলাদা দুই রুমে আটকে রাখে। একপর্যায়ে তার মেয়ে স্মৃতিকে নিয়ে নুরী বেগমের স্বামী অন্তর (২৫) ‘বাইরে’ চলে যান। এরপর ভবনের কলাপসিবল গেট লাগিয়ে দিয়ে ওই ভবনেই স্বর্ণাকে ধর্ষণ করেন চান্দু মিয়া। ধর্ষণ শেষে সন্ধ্যা ৭টার দিকে স্বর্ণাকে তার ফুফুর বাসার পাশে এনে ফেলে রেখে যান নুরী বেগম।

চট্টগ্রাম প্রতিদিনের অনুসন্ধানে জানা যায়, নুরী বেগমের স্বামী অন্তরের সঙ্গে সেই বিকেলে ‘বাইরে’ চলে গেলেও ধর্ষিত কিশোরীর ফুফাতো বোন স্মৃতি বাসায় ফেরেন রাত সাড়ে ১০টার দিকে। মাঝের এই সময়টায় স্মৃতি কোথায় ছিল— এই বিষয়ে কোন স্পষ্ট জবাব জানা যায়নি স্মৃতির পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে। সেস ময় চট্টগ্রাম প্রতিদিনের প্রতিবেদকের প্রশ্নের উত্তরে ধর্ষিত কিশোরী স্বপ্নার ফুফা ও স্মৃতির বাবা নিজেও ছিলেন নিরুত্তর।

গত রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ডবলমুরিং থানার সুপারিওয়ালা পাড়ার ১ নম্বর গলিতে চান্দু মিয়ার বাসায় ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীকে আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয়। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় স্বর্ণার (ধর্ষিত কিশোরীর ছদ্মনাম) ফুফাতো বোনের বান্ধবী নুরী বেগমের (২০) দাওয়াতে সুপারিওয়ালাপাড়ার একটি বাসায় যান স্বর্ণা ও তার ফুফাতো বোন স্মৃতি। নুরী বেগম নিজের বাসায় নেওয়ার কথা বলে বিকেল ৫টার দিকে তাদের দুজনকে যে ভবনে নিয়ে যান, সেটি মূলত চান্দু মিয়া নামের এক ‘পুলিশ সোর্সে’র বাসা।

ধর্ষণের শিকার কিশোরী স্বর্ণা (ছদ্মনাম) বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি রয়েছেন। এই ঘটনায় ভিকটিম স্বর্ণার মা বাদি হয়ে ডবলমুরিং থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। চান্দু মিয়া ছাড়াও এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হওয়া ৩ আসামি হলেন নুরী আক্তার (২০) ও তার স্বামী মো. অন্তর (২২) এবং রাজিব হোসেন (২২)। এর মধ্যে প্রথম দুজনকে ধর্ষণের শিকার হওয়া কিশোরীর পরিবারের সদস্যরা আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরে রাজিব হোসেনকে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে ডবলমুরিং থানা পুলিশ।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!