১ পুলিশের বিপরীতে ৯০০ জনকে সেবা দিচ্ছে সিএমপি

১৯৭৮ সালের ৩০ নভেম্বর একজন পুলিশের অনুপাতে ২৭৬ জনসংখ্যার নিরাপত্তা ও সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে যাত্রা শুরু হয়েছিল চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি)। ১২৮ বর্গমাইল এলাকা ও ১০ লাখ জনসংখ্যা নিয়ে যাত্রা শুরু হওয়া সিএমপিতে তখন থানার সংখ্যা ছিল ৬টি। কিন্তু বর্তমানে থানার সংখ্যা আরও ১০টি বেড়ে হয়েছে ১৬টি। ২৭৬ জনসংখ্যার বিপরীতে একজন পুলিশ সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে সেই অনুপাত দাঁড়িয়েছে একজন পুলিশ সদস্যের বিপরীতে ৯০০ জনে। এরকম নানা সংকট, চাপ ও প্রত্যাশার মধ্য দিয়ে ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনেকটাই নীরবেই পার করলো সিএমপি।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কোনও আয়োজন না থাকলেও পরে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার আয়োজনের কথা রয়েছে। ৪১তম বছরে এসে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই নগরীর বাসিন্দাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশের এই ইউনিটটি সাম্প্রতিক সময়ে নানা ভালো কাজ করে যেমন মানুষের আস্থা অর্জন করেছে। তেমনি এখনও কতিপয় পুলিশ সদস্যের অপেশাদার আচরণের কারণে পুরোপুরি ভাবমূর্তি সংকট থেকে উত্তরণ করতে পারেনি। তবে খারাপের চেয়ে ভালো কাজের সংখ্যাই বেশি সিএমপির।

থানায় জিডি করতে বা মামলার তদন্তকালে কিংবা পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের সময় টাকা নেওয়ার কোনও নিয়ম না থাকলেও স্পিড মানির নামে এখনও অনেক পুলিশ সদস্য টাকা আদায় করেন। তবে এসবকে ছাপিয়ে বর্তমানে মানবিক ও জনবান্ধব পুলিশিংয়ের জন্য পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমানের নেতৃত্বাধীন সিএমপি এখন দেশজুড়ে আলোচিত। কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীনের চালু করা ‘হ্যালো ওসি’ প্রোগ্রামটিও প্রশংসা কুড়িয়েছে নগরবাসীর। যেটি এখন সিএমপিজুড়ে চলমান।

তেমনি সাম্প্রতিক সময়ে সরাসরি পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে ‘হ্যালো কমিশনার’ নামেও একটি ফেসবুক পেজ চালুর মাধ্যমে পুলিশি সেবায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে সিএমপি। তেমনি কমিউনিটি পুলিশিং, স্টুডেন্ট পুলিশিং, মসজিদ ভিত্তিক কাউন্সিলিং কার্যক্রম জনগণের সঙ্গে পুলিশের দূরত্ব কমিয়েছে। এছাড়া ২০১১ সাল থেকে নিজেদের উদ্যোগে অসহায় ভবঘুরে মানুষদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কাজটি করছিলেন সিএমপির কনস্টেবল মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বে সাত পুলিশ সদস্য। পুলিশের এই ধরনের মানবিক কাজগুলো নতুন করে পুলিশ সম্পর্কে ধারণা তৈরি করছে জনগণের মাঝে।

১ পুলিশের বিপরীতে ৯০০ জনকে সেবা দিচ্ছে সিএমপি 1

বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে তথ্য নিয়ে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসা ও ফেসবুকের মাধ্যমে পুলিশিং কার্যক্রম করার দিক দিয়েও সিএমপি পুলিশের অন্য ইউনিটের চেয়ে এগিয়ে। এছাড়া সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ দমন আইন শৃংখলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রেও সিএমপি পেশাদারিত্বের পরিচয় দিচ্ছে।

জানা যায়, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) ১৯৭৮ সালের ৩০ নভেম্বর যাত্রা শুরু করেছে। সিএমপি তার প্রাথমিক যাত্রা শুরু করেছে ১২৮ বর্গমাইল এবং ১০ লাখ জনসংখ্যা নিয়ে। সিএমপির প্রথম পুলিশ কমিশনার ছিলেন এমএম শরীফ আলী। প্রাথমিক পর্যায়ে, সিএমপি ছয়টি থানা, ৩০টি পুলিশ ফাঁড়ি ও ছয়টি পুলিশ বাক্স দিয়ে পরিচালিত হতো। প্রধানত সিএমপির বিভাগ ছিল, উত্তর, বন্দর, সদর দফতর, নগর বিশেষ শাখা (সিটি এসবি) এবং ট্রাফিক বিভাগ। এরপরে গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) এবং সুরক্ষা ও প্রোটোকল বিভাগ তাদের যাত্রা শুরু করেছে।

১৯৮৪ সালে সিএমপি বিভিন্ন স্তরে ৩ হাজার ২৩৮ পুলিশ সদস্য নিয়োগের অনুমতি পায়। ১৯৮৮ সালে দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ বিভাগ (আরসিডি) নামে সিএমপিতে একটি নতুন বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। পুলিশ কর্মীদের জন্য ৫৯১টি বিভিন্ন পদ তৈরি করে। ২০০০ সালে লোকবৃদ্ধির দাবিতে সিএমপি তার ছয়টি থানাকে ১২টিতে বিভক্ত করে। সিএমপিতে বর্তমানে ১৬টি থানা, ৩১ টি ফাঁড়ি, ৫টি আইসি (তদন্ত কেন্দ্র) এবং ৬টি পুলিশ বক্স রয়েছে।

সিএমপির বর্তমানে মোট কর্মচারী প্রায় ৫ হাজার ৭৮৫ জন। একজন পুলিশ কমিশনার (ডিআইজি) ২ অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের সহায়তায় সিএমপিকে পরিচালনা করা হয় সিএমপিকে। তাদের অধীনে ১০ জন উপ-পুলিশ কমিশনার, ১৫ জন অতিরিক্ত উপ কমিশনার ও ২৩ সহকারী পুলিশ কমিশনার রয়েছেন। এছাড়া ৬২ জন নিরস্ত্র পরিদর্শক, ২১ জন টিআই ও সস্বস্ত্র পরিদশক রয়েছেন ২০জন।

সিএমপিতে বর্তমানে ৭টি আলাদা বিভাগ রয়েছে। সদর দফতর, পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, অপরাধ ও অপারেশন বিভাগ, গোয়েন্দা ও ফৌজদারি গোয়ান্দা বিভাগ, ট্রাফিক বিভাগ, প্রোটোকল এবং সুরক্ষা বিভাগ, মিডিয়া এবং পাবলিক রিলেশন বিভাগ।

সিএমপির ওয়েবসাইটে পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান এক বার্তায় বলেছেন, ‘বন্দরনগরী চট্টগ্রামের নাগরিকদের প্রতি আমার বিশেষ ধন্যবাদ ও আন্তরিক অভিনন্দন জানাতে চাই। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ তার ডিজিটাল যাত্রা শুরু করেছে। সিএমপি ইতিমধ্যে মোবাইল অ্যাপ (হ্যালো সিএমপি), সিসিটিভি চালু করেছে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ নামে সিএমপির নিজস্ব ফেসবুক পেজ রয়েছে। এখন সিএমপির নিজস্ব ওয়েবসাইটও চালু রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দৃষ্টি হলো শহরটি সকলের জন্য নিরাপদ করা এবং আমাদের লক্ষ্য আরও ভাল এবং নিরাপদ চট্টগ্রামের জন্য কাজ করা। আমাদের প্রতিশ্রুতি হলো জীবন ও সম্পত্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং শহরে শান্তি ও প্রশান্তি বজায় রাখা। সিএমপির একটি মূল কাজ হলো অপরাধ প্রতিরোধ, অপরাধীদের চিহ্নিত করা এবং তাদের আইনের প্রক্রিয়াধীন করার জন্য সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ নেওয়া।’

পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, ‘অপরাধ ও বিপত্তি মুক্ত নগর জীবন বজায় রাখা আমাদের স্বপ্ন। পুলিশ-বন্ধু সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা আমাদের পর্যায়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। কমিউনিটি পুলিশিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে আমরা ইতিমধ্যে জনগণকে আমাদের মূলধারার পুলিশিংয়ের সাথে সংযুক্ত করেছি। সম্প্রতি আমরা হ্যালো পুলিশ কমিশনার ফেসবুক পেজ এবং হ্যালো ওসি প্রোগ্রামটি শুরু করেছি।’

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!