১৭ বছর পর খালি হাতে ফেরা রেমিটেন্সযোদ্ধাকে নিল না পরিবার

চোখের পানিতে ভিজে বৃদ্ধ গেলেন ব্র্যাকের সেফহোমে

দেড় যুগ ধরে সৌদি আরবে অমানুষিক কষ্টে উপার্জিত সব টাকাই পাঠিয়ে আসছিলেন দেশে থাকা পরিবারের কাছে। সেই টাকায় স্ত্রী-ছেলেমেয়ে ঢাকায় সুখের জীবনই যাপন করছিলেন। করোনার বিপর্যয়ে সৌদি আরব থেকে খালি হাতে ফেরা লোকটি যখন ঢাকা বিমানবন্দরে নামলেন, পরিবার তাকে আর গ্রহণ করতে রাজি হল না।

শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল নয়টায় ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অফিসে মাথা নিচু করে বসেছিলেন নাসির উদ্দীন। প্রবীণ এই রেমিটেন্স যোদ্ধার দুচোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিল অশ্রু। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে এই রেমিট্যান্সযোদ্ধার বাড়ি।

পরিবারের ভাগ্য ফেরাতে নাসির উদ্দীন ১৭ বছর আগে পাড়ি জমিয়েছিলেন সৌদি আরবে। ২০১৪ সাল পর্যন্ত বৈধ শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন সেখানে। পরে ইকামার (বিদেশি শ্রমিকদের অবস্থানের অনুমতিপত্র) মেয়াদ বাড়ানো যায়নি অবৈধ শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন বিভিন্ন জায়গায়।

গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে সৌদি আরবের পুলিশ তাকে আটক করে কারাগারে পাঠায়। সেখানে ১৮ দিন থাকার পর বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) দিবাগত রাত দেড়টার ফ্লাইটে দেশে ফিরে আসেন তিনি।

ঢাকায় নেমে জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়টার মুখোমুখি হলেন এই বৃদ্ধ। তাকে গ্রহণ করতে কোনোভাবেই রাজি নয় স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে। ১৮ দিনের কারাভোগ, বিমানযাত্রার ক্লান্তির পর পরিবার থেকে পাওয়া এমন অভাবনীয় ধাক্কার ভার যেন বৃদ্ধ নাসির উদ্দীন আর বহন করতে পারছিলেন না।

নাসির উদ্দীনের আত্মীয়স্বজনদের সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর আগে থেকেই নাসির তার স্ত্রীর বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের কথা জানতে পারেন। গত কয়েক মাসে করোনার কারণেও পরিবারের কাছে টাকাও পাঠাতে পারেননি তিনি। এ কারণে গত কয়েক মাস ধরে ফোনও ধরছিলেন না স্ত্রী। সৌদি আরবে শ্রম দিয়ে নাসিরের সারাজীবনের অর্জিত টাকাপয়সা সবই আছে স্ত্রীর কাছে। নাসিরের দুই সন্তানের বয়স এখনও ১৮ বছর হয়নি।

জানা গেছে, পরিবার গ্রহণ না করায় অনেকটা অসুস্থ হয়ে পড়া নাসির উদ্দিনকে একপর্যায়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে খবর দেওয়া ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের কমর্কর্তাদের কাছে। তারা এসে ওই বৃদ্ধকে সান্ত্বনা দেন। ঢাকায় এসে আশ্রয়হারা রেমিটেন্সযোদ্ধা নাসির শেষপর্যন্ত ব্র্যাকের সেফহোমে যেতে রাজি হন। এরপর এপিবিএন পুলিশ তাকে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেয়।

কিন্তু সেই সকাল ১০টায় বিমানবন্দরেই দুই চোখ বন্ধ হয়ে আসে নাসিরের— ক্লান্তিতে, অপমানের গ্লানিতে। সন্ধ্যায়ও সেই ঘুম ভাঙেনি। ঘুম ভাঙাতে যাননি ব্র্যাকের কর্মীরাও। তারা অপেক্ষা করছিলেন, কখন ভাঙবে ১৭ বছর ধরে মাথার ঘাম পায়ে ফেলা এই রেমিটেন্সযোদ্ধার ঘুম?

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!