১৬ বছর বয়সেই দক্ষ মোটরসাইকেল চোর, রয়েছে হাফডজন মামলা

নাম তার মো. আবিদ হোসেন শ্রাবণ। বয়স ১৬ বছরের দোরগোড়ায়। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়ার পর মা-বাবার বিচ্ছেদের কারণে আর স্কুলের গণ্ডি মাড়ানো হয়নি। তবে প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যায় শিক্ষিত হতে না পারলেও চুরিবিদ্যায় সে উচ্চশিক্ষিত। নিমিষেই চুরি করে ফেলতে পারে মোটরসাইকেল। চুরিবিদ্যায় সে এতটাই পোক্ত যে, মাত্র সাত মাসে চুরি করেছে ৭টি মোটরসাইকেল।

এছাড়া শ্রাবণের নামে রয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন থানায় প্রায় হাফডজন চুরির মামলাও।

শ্রাবণের চুরিবিদ্যায় বাধা হয়ে দাঁড়ায় বন্দর থানা পুলিশ। তথ্য-প্রযুক্তির সহযোগিতায় এই চোরকে আটক করে বন্দর থানা পুলিশ। এ সময় শ্রাবণের আরও দুই সহযোগীকে আটক করা হয়।

শনিবার (১৮ জুন) দুপুরে বন্দর থানার নিমতলা পানামা টার্নিমাল থেকে একটি বাইসাইকেলসহ আটক করা হয় মো.আবিদ হোসেন শ্রাবণকে (১৬)। এরপর তার তথ্য অনুসারে পটিয়া থেকে অপর দু’জনকে আটক করে পুলিশ।

অপর দুই আসামি হলেন পটিয়ার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বেলখাইন ময়েজ উদ্দীন চৌধুরীর বাড়ির মৃত আবু বক্করের ছেলে মো. আমান (২৫) ও কলিয়াইশ নয়াহাট নূর বাড়ির এখলাস মিয়ার ছেলে মো. সাজ্জাদ হোসেন (৩১)। তাদের তিনজনের কাছ থেকে ৭টি চোরাই মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়।

জানা যায়, একটি মোটরসাইকেল চুরির সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শ্রাবণকে শনাক্তের পর তাকে ধরতে মাঠে নামে বন্দর থানা পুলিশ। এরপর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে যে, শ্রাবণ একটি চোরাই বাইসাইকেল বিক্রির জন্য নিমতলা এলাকায় এসেছে। সেই সংবাদের ভিত্তিতে তাকে আটক করে পুলিশ।

আটকের বিষয়ে পুলিশের বন্দর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার আবুল কালাম সাহিদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বয়সে ছোট হলেও চুরিবিদ্যাতে সে পোক্ত। এই বয়সেই নগরীর বিভিন্ন থানায় শ্রাবণের নামে রয়েছে প্রায় ৬টি মামলা। এরআগেও সে সাইকেল চুরি করতে গিয়ে কোতোয়ালী থানা পুলিশের হাতে আটক হয়। কিন্তু আবারও সে চুরির পথেই ফিরে এলো।’

তবে আটক শ্রাবণ জানায়, শখের বশেই চুরি করে সে। প্রথমদিকে ছোটখাটো চুরি করতো। এরপর সে সাইকেল চুরি করে এবং একবার পুলিশের হাতে ধরাও খায়। বছরখানেক আগে বাইকমিস্ত্রি সাজ্জাদের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। এরপর সাজ্জাদের প্ররোচণায় বাইকচুরির মিশনে নামে সে। সাজ্জাদ প্রতিটি বাইক পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকায় কিনে নিতো শ্রাবণের থেকে। বাইক চুরির কৌশল ও যন্ত্রপাতিও সাজ্জাদের থেকে রপ্ত করে সে। তবে মাঝেমধ্যে চুরির বাইক অপর ক্রেতা আমানের কাছেও বিক্রির কথা জানায় সে।

চুরির টাকা কী করে−জানতে চাইলে শ্রাবণ জানায়, চুরির টাকা দিয়ে সে শহরের বিভিন্ন শিশুপার্কে ঘুরে বেড়ায়। ভালো রেস্টুরেন্টে খাবার খায়। টাকা শেষ হয়ে গেলে আবারও চুরি করে।

শহর ছেড়ে পটিয়ায় কেন মোটরসাইকেল বিক্রি করে−জানতে চাইলে শ্রাবণ বলে, সাজ্জাদ ও আমানই তার একমাত্র চোরাই বাইক ক্রেতা। তারা দু’জনই মোটরসাইকেল গ্যারেজের আড়ালে চোরাই গাড়ির ব্যবসা করে।

অপর দুই সহযোগী সাজ্জাদ ও আমান জানান, পটিয়াতে পুলিশের নজরদারি কম ও নিজেদের গ্যারেজ থাকার কারণে এসব চোরাই গাড়ি তারা কিনে থাকেন। গ্যারেজ থাকায় সুবাদে সাধারণ মানুষদের সন্দেহ থেকেও বেঁচে যান তারা।

এ ব্যাপারে অভিযান পরিচালনাকারী বন্দর থানার উপ-সহকারী পুলিশ কর্মকর্তা কিশোর মজুমদার বলেন, ‘ছয়দিন আগে উই আর চিটাগাং (We R chittagong) নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে শ্রাবণের চুরির ভিডিওটি দেখি। এরপরই অভিযান শুরু করি। মাত্র ছয়দিনের মধ্যেই শ্রাবণসহ চক্রটিকে আটক করি। চুরি যাওয়া সাতটি মোটরসাইকেল ও একটি বাইসাইকেল জব্দ করি।’

তিনি বলেন, ‘বয়সে ছোট ও চুরিতে দক্ষ হওয়ায় শ্রাবণকে দিয়ে চুরি করিয়ে ফায়দা লুটতো বাকি দু’জন। চুরি করতে গিয়ে কখনো পুলিশে ধরলে তাকে ছাড়িয়ে আনার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন সাজ্জাদ। কিন্তু এবার আমরা সেই সাজ্জাদকেও আটক করে নিয়ে আসি। বয়স কম হওয়ায় বারবার আইনের ফাঁক গলে বেঁচে যায় শ্রাবণ। তবে তাকে দ্রুত সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা না গেলে তার ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।’

বিএস/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!