১৬ বছর পর চট্টগ্রামে নারী কিলার কুলসুমী গ্রেপ্তার, তার বদলে ৩ বছর জেল খাটেন আরেকজন

২০০৬ সালে চট্টগ্রামের রহমতগঞ্জে পোশাক শ্রমিককে গলা টিপে হত্যার ঘটনায় যাবজ্জীবন সাজা হয় কুলসুম আক্তার কুলসুমীর। কিন্তু এ ঘটনায় কুলসুমীর বদলে ২ বছর ৯ মাস ১০ দিন জেল খাটে মিনু। সেই মিনু আইনী প্রক্রিয়ায় বের হয় জেল থেকে। ক’দিন পর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় মিনু। হারিয়ে যায় মিনুর ছেলেও। একের পর এক রহস্যজালে আবৃত হতে থাকে পুরো ঘটনা। অন্যদিকে সাজাপ্রাপ্ত ঘাতক কুলসুমী গ্রেফতার না হওয়ায় এই ঘটনার রহস্য উন্মোচন করতে পারছিল না পুলিশ।

তবে দীর্ঘ সময় পর কোতোয়ালী থানা পুলিশ ঘাতক কুলসুমীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) ভোরে চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। কুলসুমী ও তাকে সহযোগিতা করার অপরাধে মর্জিনা আক্তার নামে আরও এক নারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কুলসুমী লোহাগাড়া উপজেলার গৌরস্থান মাঝের পাড়া আহাম্মদ মিয়ার বাড়ির আনু মিয়ার মেয়ে। তার বর্তমান ঠিকানা কোতোয়ালী থানাধীন রহমতগঞ্জ সাঈদ ডাক্তারের ভাড়া বাড়ি।

এর আগে ২০০৬ সালে নগরীর রহমতগঞ্জে মোবাইলে কথা বলার অপরাধে পোশাক শ্রমিক কোহিনুরকে গলাটিপে হত্যা করে গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখে কুলসুমী। কুলসুমী এই হত্যাকাণ্ডকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও ময়নাতদন্তে বুঝা যায় ঘটনাটি পুরোপুরি হত্যা। দুই বছর তদন্তের পর পুলিশ আদালতে এই মামলার চার্জশীট জমা দেয়।

২০১৭ সালে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অপরাধে কুলসুমী আক্তারের যাবজ্জীবন সাজা হয়। ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম।

সেই আদেশে ২০১৮ সালের ১২ জুন সাজা ভোগের জন্য কারাগারে যান কুলসুমী। প্রায় তিন বছর সাজা ভোগের পর জানা যায়, কুলসুমীর বদলে জেল খাটছেন নিরাপরাধ মিনু।

চট্টগ্রামের আইনজীবী গোলাম মওলা মুরাদ বিষয়টি সর্বপ্রথম বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করে।

এরপর গত ২২ মার্চ চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঁইয়ার আদালতে মিনুকে হাজির করা হলে আদালত তাকে জামিন দিয়ে মুল আসামী কুলসুমীকে আটকের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেয়।

এ বিষয়ে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন বলেন, ‘সাজাপ্রাপ্ত আসামী কুলসুমী ও তার সহযোগী মর্জিনাকে বুধবার মধ্যরাত ৩টায় গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের আদালতে হাজির করা হবে।’

এদিকে জেল থেকে বের হওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় রহস্যজনকভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় মিনুর। এরপর গায়েব হয়ে যায় মিনুর ছোট ছেলেও।

এসব ঘটনার পিছনে কুলসুমি ও মর্জিনার হাত থাকতে পারে বলে সন্দেহ জানিয়ে আইনজীবী গোলাম মোওলা মুরাদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কুলসুমী ও মর্জিনা একটি অপরাধ ঢাকতে একাধিক অপরাধ করে বসেছেন। এই ঘটনার পিছনে কারা জড়িত ও এমন ঘটনার উদ্দেশ্য কী- তা বের করতে আদালতের নির্দেশনা পেলে ভাল হয়। এই দুইজনকে রিমাণ্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও অনেক তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে।’

বিএস/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!