১৬৫ কোটি টাকার পাওনা নিয়ে ইঁদুর-বেড়াল খেলায় কাস্টমস ও বিপিসি

বিশেষ সুবিধা দাবি করে তিন বছর ধরে বকেয়া বড় অংকের টাকা

নানা অজুহাতে খোদ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনই ফার্নেস অয়েল আমদানির শুল্ক হিসেবে পাওনা ১৬৫ কোটি টাকা দিচ্ছেই না। পাওনা আদায় নিয়ে এই ইঁদুর-বেড়াল খেলা চলছে গত তিন বছর ধরেই।

জানা গেছে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সাথে বিপিসির চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ার পরবর্তী সময়ে ফার্নেস অয়েল আমদানির শতভাগ শুল্ক দাবি করে আসছে কাস্টমস হাউস। অপরদিকে বিপিসি এসআরও সুবিধা দাবি করেই ওই টাকা বকেয়া রেখে দিয়েছে তিন বছর ধরে। এ খাতে চট্টগ্রাম কাস্টমস ১৬৫ কোটি টাকা পাওনা হয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছে। বিদ্যুৎ কোম্পানির জ্বালানি তেল হিসেবে আমদানিকৃত ফার্নেস অয়েল খাত থেকে এই টাকা অনাদায়ী হিসেবে রয়েছে ২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর থেকেই।

চট্টগ্রাম কাস্টমস সুত্র জানায়, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড গত ২০১১ সাল থেকে রেয়াতি (এসআরও) সুবিধা পেয়ে আসছে ফার্নেস অয়েল আমদানির ক্ষেত্রে । এসআরও শর্ত মতে, সরকারি-বেসরকারি সব বিদ্যুৎ প্লান্ট বিপিসির সাথে চুক্তিসাপেক্ষে এসআরও সুবিধা ভোগ করেই ফার্নেস অয়েল আমদানি করতে পারবে। পক্ষান্তরে বিপিসির সাথে চুক্তি ছাড়া বাণিজ্যিকভাবে কোনো কোম্পানি আমদানি করলে তাতে প্রতি লিটারে ৪০ সেন্ট করে শুল্ক দেওয়ার নিয়ম রয়েছে।

কাস্টমসের কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৭ সালে ২৮ ডিসেম্বর পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড সিঙ্গাপুর থেকে ৬ লাখ ডলার এলসির মাধ্যমে ফার্নেস অয়েল কেনে। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে যার বিল অব এন্ট্রি নং ১৬০৪০১৯। এভাবে বিপিসির নিয়ন্ত্রণাধীন পদ্মা, মেঘনা, যমুনা এবং স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কম্পানির প্রায় ২৫০টি বিল অব এন্ট্রির অনুকূলে আমদানি হওয়া ফার্নেস অয়েলের শুল্ক জমা পড়েনি কাস্টমস হাউসে। যার পরিমাণ ১৬৫ কোটি টাকা বলে জানিয়েছে কাস্টমসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সরকারি-বেসরকারি কোনো বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তির অনুমোদন না থাকায় সঙ্গতকারণে এসআরও সুবিধাও পাওয়ার কথা নয়। এ কারণে কাস্টমস হাউস শতভাগ শুল্ক দাবি করে আসছে।

তবে পণ্যের চালান খালাস করে নিলেও শুল্ক আদায় করেনি কাস্টমস হাউস। ওই সময় থেকে বিপিসির কোন্ প্রতিষ্ঠান কী পরিমাণ ফার্নেস অয়েল আমদানি করেছে সেটির হিসাব নিকাশ করে এখন শুল্ক আদায় করার জন্য বিপিসিকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ফার্নেস অয়েল আমদানিতে এসআরও সুবিধা পাওয়া যাবে না বলে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। ফলে গত জুলাই থেকে কোনো প্রতিষ্ঠান রেয়াতি সুবিধা পাচ্ছে না।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার মোহম্মদ তফসীর উদ্দিন ভূইয়া বলেন, বিপিসির কাছে কাস্টমসের পাওনা আদায়ের জন্য কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। ২০১৭ সালে ২৮ ডিসেম্বর থেকে ফার্নেস অয়েল খাতের শুল্কায়ন বাকি রয়েছে। যা পুনরায় এসেসেমেন্ট করার জন্য কাস্টমসের সংশ্লিষ্ট শাখাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ বাবদ টাকার পরিমাণ প্রায় ১৬৫ কোটি টাকা।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন দুই পক্ষের গড়িমসির কারণে তিন বছর ধরে ওই টাকা বকেয়া পড়ে আছে। বিপিসি পেট্রোল, অকটেন, ডিজেল, কেরোসিনসহ অন্যান্য সব খাতের রাজস্ব কাস্টমসকে শোধ করে আসলেও ফার্নেস অয়েলের শুল্ক বাকি পড়ে আছে।

কাস্টমস সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ১৬ লাখ ২৯ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল আমদানি করা হয় । এ ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে ১৮ লাখ ২৫ হাজার ৪৪২ মেট্রিক টন, ২০১৯ সালে ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ৬২২ মেট্রিক টন, ২০২০ সালে ২০ লাখ ৭৪ হাজার ৪১ মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল আমদানি করা হয়। সবশেষ চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ২ লাখ ২৪ হাজার ৯৪০ মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল আনা হয়।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের মহাব্যবস্থাপক (হিসাব) এটিএম সেলিম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, এসআরও সুবিধার বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত না থাকায় কিছু টাকা হয়ত বাকি আছে। বিপিসির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা থেকে চূড়ান্ত হিসাব আমাদের কাছে এখনও আসেনি। তবে আমরা চলমান সব তরল অয়েল আমদানি খাতে যা পাওনা সব পরিশোধ করেছি কাস্টমসকে ।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!