১৫ সেকেন্ডের বিস্ফোরণের মাশুল গুণতে হবে বহু বছর, ধ্বংসযজ্ঞের আঁচ এলাকাজুড়ে

বিকট শব্দে শ্রবণশক্তি হারাতে বসছেন অনেকে

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকায় কুলিং কর্নার রয়েছে কবির হোসেনের। রোববার (৫ মার্চ) দুপুর আড়াইটার দিকে তিনি দোকান পরিস্কার করছিলেন। তার দোকানজুড়ে কাচের ভাঙা অংশের স্তূপ। শনিবার দোকানের পাশেই সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট বিস্ফোরণে সব শেষ হয়ে গেছে তার। সঙ্গে বিস্ফোরণের বিকট শব্দে তার ছেলে নাঈম পারভেজের কানের পর্দাও ফেটে গেছে।

১৫ সেকেন্ডের বিস্ফোরণের মাশুল গুণতে হবে বহু বছর, ধ্বংসযজ্ঞের আঁচ এলাকাজুড়ে 1

সীতাকুণ্ডের আরেক বাসিন্দা নাজু তার ছয় মাসের মেয়েকে নিয়ে উঠোনে হাঁটছিলেন। এমন সময় বিস্ফোরণ ঘটলে অক্সিজেন প্ল্যান্ট থেকে স্টিলের একটি বড় পাত উড়ে এসে পড়ে তার পেছনে। স্টিলের পাতের সঙ্গে তার ব্যবধান ছিল মাত্র এক হাত!

নাজু বলেন, ‘স্টিলের পাতটি যদি আমার মেয়ের মাথায় এসে পড়ত, কী হতো?

রোববার দুপুরে বিস্ফোরণস্থলে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টর পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে বিস্ফোরণের তাণ্ডব বেশি। সিলিন্ডারের টুকরো, বড় বড় স্টিলের পাত পড়ে রয়েছে। অক্সিজেন সিলিন্ডারগুলো পড়ে আছে যত্রতত্র। যে ট্রাকে সিলিন্ডারগুলো বহন করা হয় সেগুলোও বিধ্বস্ত। প্ল্যান্টের ভেতরের পুকুরে স্টিলের পাতের টুকরো ভাসছে। হেলে পড়েছে বাউন্ডারি দেয়াল।

আশপাশের বাড়ি-ঘরগুলো ঘুরে দেখা গেছে, অনেকের দেয়ালে ফাটল দিয়েছে। অনেকের জানালার কাচ ভেঙে গুঁড়ো হয়ে গেছে। আবার অনেকের ঘরের টিনের চাল দুমড়ে-মুচড়ে গেছে।

এমনই একজন ক্ষতিগ্রস্ত নূরু মিয়া। তার নতুন বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বিল্ডিংয়ের জানালার কাচ ভেঙে গেছে, দেয়ালে ফাটল ধরেছে। ঘরের ফ্যান খুলে পড়েছে।

ওই বাড়ির গৃহবধূ রেহেনা বেগম বলেন, ‘বিকালে আমার জায়ের সঙ্গে বাড়ির উঠানে বসে গল্প করছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ হলো। এরপর একটা স্টিলের পাত আমাদের উঠানের মধ্যে এসে পড়ে। ঘরের জানালার কাচ ভেঙে যায়।

বিস্ফোরণে নূরু মিয়ার পাশের বাড়ির সাদেক হোসেনের টিনের ঘরও দুমড়ে-মুচড়ে গেছে।

জানা গেছে, এক সপ্তাহ আগে প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৩০ জনের বেশি কর্মচারীকে ছাঁটাই করে কম বেতনের নতুন অপারেটর নিয়োগ দেয় কর্তৃপক্ষ।

এদিকে সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের পাশের প্রতিষ্ঠান এইচ স্টিল রি-রোলিং মিলেও লেগেছে ধ্বংসের আঁচ। বিস্ফোরণে কারখানা টিন, বিল্ডিংয়ের ছাদ, দরজা-জানালার কাচ ভেঙে গেছে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আব্দুল হামিদ মিঞা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের প্রথম ও প্রধান কাজ ছিল প্ল্যান্টের ভেতরে ধ্বংসস্তূপে জীবিত কিংবা মৃত কেউ রয়েছে কি-না। তবে আমরা রোববার কাউকে খুঁজে পাইনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটি অক্সিজেন সিলিন্ডারের ওজন ৩০ কেজির মতো। প্ল্যান্টের পশ্চিমে প্রায় ২০০ গজের মধ্যে প্রতিটি ভবনের জানালার কাচ ভাঙা পেয়েছি আমরা। কোনো কোনো বিল্ডিংয়ে ফাটলও ধরেছে।’

আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আব্দুল মালেক বলেন, ‘১৯৯৬ সালে সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টটি স্থাপন করা হয়েছিল। প্রায় ৩০ বছরের কাছাকাছি সময় প্ল্যান্টের কমপ্রেসার মেশিনে মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, থিকনেস চলে আসছে। প্রতিষ্ঠানের মালিক জানিয়েছেন, তারা ২০১৮ সালে রি-মডেলের করেছেন। কিন্তু আমরা তার কোনো ডকুমেন্টস পাইনি। আর প্ল্যান্টে অভিজ্ঞ লোকের ঘাটতি ছিল।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!