১৩ টনের ওজন স্কেল চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের গলার কাঁটা, খরচ বাড়ছে পরিবহনে

চট্টগ্রাম বন্দরসহ খাতুনগঞ্জ থেকে ভোগ্যপণ্য শিল্পের কাঁচামাল পরিবহনে বাধার সৃষ্টি করছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড ও দাউদকান্দি এলাকায় স্থাপিত ১৩ টনের ওজন স্কেল। ফলে চট্টগ্রাম থেকে ১৩ টনের বেশি পণ্য পরিবহন করা যায় না। যার কারণে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বেশি ওজনের পণ্য পরিবহন করতে না পারায় নিত্যপণ্যের ওপর বেশি খরচ পড়ছে পরিবহনে। আর এ খরচ সরাসরি সাধারণ ক্রেতার ঘাড়ে গিয়ে পড়ছে। এ ওজন স্কেল এখন ব্যবসায়ীদের জন্য ‘গলার কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে এ ওজন স্কেল প্রত্যাহার চাইছেন চট্টগ্রামসহ দেশের শিল্প মালিকরা। তবে এবার প্রত্যাহার না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। এর জন্য দেওয়া হয়েছে একমাসের আল্টিমেটাম। আগামী এক মাস পরে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেবেন বলে এক সভায় জানান ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা বলেন, দেশের ৩৪টি মহাসড়ক রয়েছে, সবগুলো সড়কে যদি ১৩ টন পণ্য পরিবহন নিশ্চিত করা হয় তাহলে চট্টগ্রামেও স্কেল থাকুক। অন্যথায় চট্টগ্রামের সড়ক থেকে স্কেল তুলে দেওয়া হোক। চট্টগ্রামবাসীর জন্য ‘গলার কাঁটা’ এই ওজন স্কেল।

চিটাগাং চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশের আমদানি-রপ্তানির প্রধান বন্দর চট্টগ্রামে। এ বন্দর থেকে দেশের অন্যস্থানে পণ্য পরিবহন করতে হয়। অন্য কোনও মহাসড়কে ওজন স্কেল না থাকায় চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছেন। এ নিয়ন্ত্রণের ফলে চট্টগ্রাম থেকে পণ্য পরিবহন ব্যয় অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওজন স্কেলটি চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের গলার কাঁটা।’

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমদ বলেন, ‘৩৪টি মহাসড়ক রয়েছে, সবগুলো সড়কে যদি ১৩ টন পণ্য পরিবহন নিশ্চিত করা হয় তাহলে চট্টগ্রামেও স্কেল থাকুক। অন্যথায় চট্টগ্রামের সড়ক থেকে স্কেল তুলে দেওয়া হোক। এছাড়া এই ওজন স্কেল প্রত্যাহারে আগামী একমাস পর কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে সর্বস্তরের ব্যবসায়ীরা।’

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, ‘মহাসড়কে ওজন স্কেল স্থাপনের কারণে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে চট্টগ্রাম।’

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা সরকারের মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। এ স্কেলের কারণে ভুক্তভোগী শিল্প মালিকরাও।’

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘করোনার কারণে যা ক্ষতি হয়েছে তারচেয়ে ওজন স্কেলের কারণে আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আমরা। একইসঙ্গে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ স্কেলের কারণে নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিকের চেয়ে ৪-৫ টাকা বেশি। পণ্য পরিবহন খরচও দ্বিগুণ।’

চট্টগ্রাম ডাল মিল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিতোষ দে বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে ১৮-২০ টন পণ্য পরিবহনে যা খরচ পড়ে, ওজন স্কেলের কারণে মাত্র ১৩ টন পণ্য পরিবহন করতে একই অংকের টাকা খরচ হচ্ছে। অথচ চট্টগ্রামের বাইরে থেকে ১৩ টন পণ্য নিয়ে ট্রাক আসলে পরিবহন খরচ পড়ছে আমাদের তুলনায় অর্ধেক।’

চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম বলেন, ‘চালের বিষয় নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠকে ওজন স্কেলের বিষয় তুলে ধরা হলেও তারা কর্ণপাত করেনি। এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য এখন আগের মত নেই। কিছুদিন আগে একটা বিষয় নিয়ে চাক্তাইয়ে ব্যবসায়ীরা ২ ঘণ্টার কর্মববরতি ঘোষণা করেন।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!