১২ বছরে ‘কাউন্সিলর’ জসিমের অঢেল সম্পদ, মাঠে নেমেছে দুদক

চট্টগ্রামের ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের বাসিন্দা জহুরুল আলম জসিম। ২০০৭ সালে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সামান্য বেতনে চাকরি করা সাবেক এই কাউন্সিলর ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে জমি দখল, পাহাড় কেটে সরকারি জায়গা বিক্রি, কবর স্থানের জায়গা দখল, অটোরিকশা ও বাসস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার মালিক বনে যান। প্রায় ১২ বছর ধরে এমন সব অনিয়ম ও অপকর্মের মাধ্যমে ফুলেফেঁপে উঠেছে তার সম্পদ। সম্প্রতি এমন সব অভিযোগ পেয়ে তার সম্পদের খোঁজে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

জানা গেছে, দুই মাস আগে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ সাবেক কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের ব্যাপারে অনুসন্ধান শুরু করেছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের আসন্ন চসিক নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন তিনি।

দুদকে যাওয়া অভিযোগে জানা যায়, ২০০৭ সালের দিকে ইস্পাহানী মিলস লিমিটেডে সুপারভাইজার পদে সামান্য বেতনের চাকুরে ছিলেন জহুরুল আলম জসিম। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা আসার পর থেকে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে একচেটিয়া জবর-দখল, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন অপকর্মে আশ্রয় নিয়ে প্রচুর টাকার মালিক বনে যান তিনি।

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকায় মাদকের কারবার, দখলবাজি, শত শত একর পাহাড় কেটে সরকারি খাস জায়গা অবৈধভাবে বিক্রি, বিশ্বব্যাংক হাউজিং এস্টেটের কবরস্থান দখল করে জায়গা বিক্রি, অটোরিকশা-বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন চাঁদা আদায়, কৈবল্যধাম হাউজিং এস্টেটের ১৬০টি দোকানঘর দখলসহ নানা অপরাধমূলক কার্যক্রম চালানোর অভিযোগও গেছে জসিমের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, বিশ্বব্যাংক কলোনিতে ১৭টি প্লট, ফিরোজ শাহ কলোনিতে ছয়টি প্লট ও দুটি ছয়তলা বাড়ি, গিরিধারা হাউজিংয়ে সাত কাঠা সমমানের চারটি প্লট, জয়ন্তিকা আবাসিকে ১৩টি প্লট, লেকসিটি হাউজিংয়ে ছয়টি প্লট, লেকসিটি হাউজিংয়ের পাশে অবৈধভাবে পাহাড় কেটে বিভিন্ন দাগে মোট ২০ কানি (৪০০ গন্ডা) জায়গা দখল, হারবাতলী শাপলা আবাসিক এলাকায় অন্তত ২০ কোটি টাকার সম্পত্তি দৃশ্যমান রয়েছে।

এ ছাড়া পাহাড়তলী এলাকায় কৈবল্যধাম হাউজিং এস্টেটের মালিকানাধীন সেভেন মার্কেটে ১৬০টি দোকান কাউন্সিলর জসিমের দখলে রয়েছে বলে জানা যায়। প্রতিটি দোকানের দখল এককালীন এক লাখ টাকা করে মোট এক কোটি ৬০ লাখ টাকায় হস্তাস্তর করা হয়। এসব দোকানের প্রতিটি থেকে প্রতিদিন ১৫০ টাকা করে আট মাসে আদায় করা হয় ৯ লাখ টাকা। সেভেন মার্কেট অটোরিকশা স্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা চাঁদা তোলেন জসিম। এ হিসেবে মাসে যার পরিমাণ দাঁড়ায় তিন লাখ টাকা। একই এলাকায় জসিমের রয়েছে বিশাল ডেইরি ফার্ম।

জানা যায়, বর্তমান কাউন্সিলর পদপ্রার্থী জহুরুল আলম জসিমের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) পশ্চিম বিভাগের উপকমিশনারের (ডিসি) দপ্তরে অভিযোগ রয়েছে ১১৫টি। তার বিরুদ্ধে সিএমপির বিভিন্ন থানায় ২০টির বেশি চাঁদাবাজি, দখলবাজি, পাহাড় কাটা ও অস্ত্র মামলা ছিল। বর্তমানে বেশ কয়েকটি মামলা বিচার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ২০১৭ সালে পাহাড় কাটার একটি মামলায় জসিমকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জহুরুল আলম জসিম বলেন, ‘আমি নির্বাচন করছি। তাই আমার বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। কারা করছেন ষড়যন্ত্র, সেটা আপনি বুঝে নেন। আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপকর্মের যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা মিথ্যা। আমি কখনও চাঁদাবাজির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম না। দুদক অনুসন্ধান করুক। তদন্তে করলে জানতে পারবে।’

দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা বলেন, ‘সম্প্রতি সাবেক কাউন্সিলর প্রার্থী জরুহুল আলম জসিমের সম্পদের অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে তফশিলভুক্ত প্রতিষ্ঠানের খোঁজ নিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তার অনেক সম্পদের খোঁজও পেয়েছি। তদন্ত চলমান রয়েছে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!