১২ দেশে যাচ্ছে সীতাকুণ্ডের শিমের বিচি, ১১২ কোটি টাকার শিম উঠল এবার

সমুদ্রপথ ও আকাশপথে ইউরোপসহ বিশ্বের ১২টি দেশে চট্টগ্রাম থেকে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার শিমের বিচি। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলা শিম উৎপাদনের জন্য আগে থেকেই বিখ্যাত। দেশজুড়ে এর চাহিদা ও সুনাম রয়েছে।

সীতাকুণ্ডের হাটে নিয়ে আসা শিমের বিচি এভাবে বস্তাবন্দি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।
সীতাকুণ্ডের হাটে নিয়ে আসা শিমের বিচি এভাবে বস্তাবন্দি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে শুধু চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডেই ৪৫ হাজার মেট্রিক টন শিম উৎপাদন হয়েছে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ১১২ কোটি টাকা। তবে এখন কৃষকদের উৎপাদিত শিমের বিচি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, জার্মানি, ইংল্যান্ড, কাতার, দুবাই, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিশ্বের অন্তত ১২টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে সমুদ্র ও আকাশপথে। শুধু তাই নয়, এখানকার শিমের বিচি ঢাকা হয়েও বিদেশের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে।

চলতি মৌসুমে শুধু চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডেই ৪৫ হাজার মেট্রিক টন শিম উৎপাদন হয়েছে
চলতি মৌসুমে শুধু চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডেই ৪৫ হাজার মেট্রিক টন শিম উৎপাদন হয়েছে

চট্টগ্রামের সংগনিরোধ রোগতত্ত্ববিদ ইমরুল হাসান বলেন, ‘চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত সমুদ্রপথে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্তত ১২টি দেশে সীতাকুণ্ডের শিমের বিচি রপ্তানি করেছে চট্টগ্রামের ১০টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। গড়ে ৮০ টাকা কেজি দরে ১৪৫ মেট্রিক টন শিম বিচি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে আসছে তারা। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি মৌসুমেও শুধু সমুদ্রপথে আনুমানিক ১ কোটি ১৬ লাখ টাকার শিম বিচি রপ্তানি হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আকাশপথে শিমবিচি রপ্তানি হলেও তার কোনো সঠিক তথ্য আমাদের কাছে নেই।’

এ বিষয়ে সীতাকুণ্ডের বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের বড় দারোগারহাট টেরিয়াইল ব্লকের কৃষক মিয়া খোকন বলেন, ‘এবার শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পিপাস কান্তি চৌধুরীর পরামর্শে আমি চলতি মৌসুমে ৬০ শতক জমিতে শিমের চাষ করি। এতে খরচ পড়েছে প্রায় ৫৫ হাজার টাকা। আর পাইকারিতে দুই লাখ টাকারও বেশি শিম ও শিমের বিচি বিক্রি করেছি।’

জানা গেছে, চট্টগ্রামের সিটি গেইট থেকে শুরু করে ভাটিয়ারীসহ সীতাকুণ্ড উপজেলার বড়দারোগার পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে চলতি মৌসুমে শিমের আবাদ হয়েছে।

সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন অঞ্চল সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকদের ক্ষেত ও বিভিন্ন হাট থেকে পাইকাররা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানে করে শিমের বিচি কিনে চট্টগ্রাম-ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছে পাইকারিতে। আর ওসব স্থান থেকে কিছু রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান শিমের বিচি কিনে সমুদ্র ও আকাশপথে বিদেশের দেশগুলোতে রপ্তানি করছে।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, চলতি মৌসুমে সীতাকুণ্ড উপজেলায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে ১৮ হাজার ২৩০জন কৃষক শিম চাষ করেছেন। প্রতি হেক্টরে ১৫ মেট্টিক টন হিসেবে এবছর ৪৫ হাজার মেট্রিকটন শিম উৎপাদন হয়েছে। যার বাজার মূল্য গড়ে ২৫ টাকা কেজি হিসেবে ১১২ কোটি টাকা।

তিনি বলেন, সীতাকুণ্ড উপজেলা ছাড়া দেশের আর কোথাও এতো বিপুল পরিমাণ শিমের উৎপাদন হয় না। শিমের মৌসুমে কৃষক পরিবারগুলো সাগরের বেড়িবাঁধ থেকে শুরু করে জমির আইল ও পাহাড়ি অঞ্চলসহ সর্বত্রই শিমের চাষ করে থাকে।

এই কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, শুধু চট্টগ্রাম নয়, সীতাকুণ্ডের শিমের বিচি চট্টগ্রামের সমুদ্রপথ ছাড়াও ঢাকার কারওয়ান বাজার হয়ে সমুদ্র ও আকাশপথে ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করছে বেশকিছু রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইপসার প্রধান নির্বাহী মো. আরিফুর রহমান বলেন, সীতাকুণ্ডকে শিমের রাজ্য বলা হয়। শিমের বিচির চাহিদা সারাবছর জুড়ে রয়েছে। সাধারণত রোদে শুকিয়ে রেখে গৃহস্থালিভাবে শিমের বিচি সংগ্রহ করা হলেও এটি বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাতের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। মৌসুমে কাঁচা শিমের বিচি সংগ্রহ করে প্রশিক্ষিত উদ্যোক্তাদের দ্বারা ডিহাইড্রেটর মেশিনের সাহায্যে শুকিয়ে মোড়কজাত করা হয়। আর এভাবেই আমরা উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে শিমের শুকনো বিচির বাজার চাহিদা পূরণ করতে সচেষ্ট রয়েছি। আর আমাদের উৎপাদিত পণ্য নিরাপদ,স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিমানসমৃদ্ধ।

এদিকে শিমের উৎপাদন ও বিদেশে শিম বিচি রপ্তানি বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আক্তারুজ্জামান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, সীতাকুণ্ডের মত শিমচাষ দেশের আর কোথাও নেই। সীতাকুণ্ডকে তাই শিমের রাজ্য বলা হয়। মাত্র একটি বাঁশের কঞ্চিতে কয়েক কেজি শিম উৎপাদন হয়। শিমের মৌসুমে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ছাড়াও ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে শিমের বিচি রপ্তানি করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। সীতাকুণ্ড অঞ্চল শিমচাষের উপযোগী বলে প্রতিবছর শিমের মৌসুমে শিম বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আয় করছেন অনেক কৃষক।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!