১২০ কোটি টাকার ক্যান্সার হাসপাতালের বীজ রোপণ হল চট্টগ্রামে

প্রথম দিনেই ৫ কোটি টাকা দিলেন ভূমিমন্ত্রী, এমএ মালেক ১ কোটি

চট্টগ্রামে শুরু হয়ে গেল দীর্ঘ প্রত্যাশিত ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার যাত্রা। পুরো হাসপাতালটি মাথা তুলে দাঁড়াতে প্রয়োজন ১২০ কোটি টাকা। তবে আশার আলো জ্বালিয়ে প্রথম দিনেই উঠে গেল সাড়ে ছয় কোটি টাকা।

বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ব ক্যান্সার দিবসে এই ক্যান্সার হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ।

চট্টগ্রামে বিশ্বমানের এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার জন্য ভূমিমন্ত্রী জাবেদ ইউসিবিএল ব্যাংকের পক্ষ থেকে পাঁচ কোটি টাকা অনুদান ঘোষণা করেন। হাসপাতালের জন্য দৈনিক আজাদী পরিবারের পক্ষ থেকে সম্পাদক এমএ মালেক দিলেন এক কোটি টাকার অনুদান। এছাড়া আরও কয়েকজন মহৎহৃদয় মানুষ অর্থসাহায্য দিয়েছেন তাৎক্ষণিক। এরই মধ্যে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ শুনিয়েছেন অভয় বাণীও— ‘টাকার জন্য এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম আটকে থাকবে না। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকেও টাকা এনে দেবো। এই হাসপাতাল ইনশাল্লাহ হবেই।’

‘জনগণের টাকায় জনগণের জন্য’— এই মূলনীতি সামনে রেখে যাত্রা শুরু করা ক্যান্সার হাসপাতাল এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার মূল উদ্যোগ চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের।

ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, ‘অনেকে বলছেন শুঁটকি খেলে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আমি যেহেতু চট্টগ্রামের, তাই চট্টগ্রামের ভাষাতেই বলি— ‘উঁনি ছাড়া চলিত পারন ন যাইবো। উঁনি একটু হা’ পরিব। (শুঁটকি ছাড়া চলতে পারবো না। শুঁটকি একটু খেতেই হবে)। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও শুঁটকি পছন্দ করেন।’

তিনি বলেন, ২০১৯ সালে নেভির বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রীসহ লাঞ্চ করেছিলাম। কয়েকজন মন্ত্রী ছিলেন। আমিও ছিলাম। প্রধানমন্ত্রী ওই সময় শুঁটকি দিয়ে তৈরি করা খাবার খাচ্ছিলেন। হঠাৎ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে বললেন, ‘জাবেদ আমার জন্য শুঁটকি আছে, তোমার জন্য নাই…ই। তাই শুঁটকি আমি খাবো।’ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জানেন, আমি চট্টগ্রামের সন্তান, স্বাভাবিকভাবে শুঁটকি পছন্দ করবো। তাই পরক্ষণেই বললেন, জাবেদকে শুঁটকি দাও।’

হাসপাতালের কার্যনির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মোরশেদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ক্যান্সার হাসপাতাল বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান ও দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, সদ্য প্রাক্তন লায়ন গভর্নর লায়ন কামরুন মালেক, হাসপাতালের অন্যতম দাতা সৈয়দ মোহাম্মদ নুরুদ্দিন।

অনুষ্ঠানে দৈনিক আজাদী পরিবারের পক্ষ থেকে এক কোটি টাকা অনুদানের চেক তুলে দেন ক্যান্সার হাসপাতাল বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান আজাদী সম্পাদক এমএ মালেক। মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের হাতে এক কোটি টাকার চেক হস্তান্তরকালে সদ্য প্রাক্তন লায়ন গভর্নর মিসেস কামরুন মালেক, দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক, নির্বাহী সম্পাদক পারিহা মালেক, নির্বাহী সম্পাদক শিহাব মালেক উপস্থিত ছিলেন।

এমএ মালেক বলেন, ‘আমরা এক টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পরিমাণ অনুদানও নেবো। কেউ চাইলে এক টাকাও দিতে পারেন। পাঁচ টাকা দশ টাকা একশ টাকা দিতে পারেন। চট্টগ্রামের ৬০ লাখ মানুষ যদি ১০০ টাকা করেও দেন তাহলে ৬০ কোটি টাকা হয়ে যায়। এক টাকা করে দিলেও তাৎক্ষণিকভাবে ৬০ লাখ টাকা হয়। আমরা এক টাকাও নেবো।’

অনুষ্ঠানে তাৎক্ষণিকভাবে চট্টগ্রাম ক্লাবের সাবেক প্রেসিডেন্ট এসএম আবু তৈয়ব ১০ লাখ টাকা, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শফিক আহমেদ ৫ লাখ টাকা, এনআরবি গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের নাসিরাবাদ ব্রাঞ্চের ম্যানেজার এম নাসির উদ্দিন ১ লাখ টাকা, চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বারের পরিচালক মিসেস শায়লা আবেদীন ১ লাখ টাকা, হাসপাতালের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. কামরুন নাহার দস্তগীর ১ লাখ টাকা, বাংলাদেশ আনসার চট্টগ্রাম জোনের পরিচালক আজিম উদ্দিন ১ লাখ টাকা, হাসপাতালের আজীবন সদস্য কবির আহমেদ ৫০ হাজার টাকা, আজীবন সদস্য আদিল হাসনাত ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেন।

এই অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন কার্যনির্বাহী কমিটির জেনারেল সেক্রেটারি ডা. আঞ্জুমান আরা ইসলাম, জয়েন্ট জেনারেল সেক্রেটারি ডা. আরিফুল আমীন, ট্রেজারার ও ক্যান্সার হাসপাতাল বাস্তবায়ন কমিটির মেম্বার সেক্রেটারি রেজাউল করিম আজাদ, হাসপাতালের প্ল্যান ডেভেলপমেন্ট সাব-কমিটির চেয়ারম্যান ও অনারারি প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার এম আলী আশরাফ, চট্টগ্রাম ক্লাবের সাবেক চেয়ারম্যান ও ক্যান্সার হাসপাতাল বাস্তবায়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান এসএম আবু তৈয়ব, নগর আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট আলতাফ হোসেন বাচ্চু, দৈনিক আজাদীর চিফ রিপোর্টার হাসান আকবর, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসাপাতাল মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল প্রফেসর এএসএম মোস্তাক আহমেদ, হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. নূরুল হক এবং হাসপাতালের অনকোলজি ও রেডিওথেরাপি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. শেফাতুজ্জাহান।

এর আগে ক্যান্সার বিষয়ে একটি সায়েন্টিফিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডা. শেফাতুজ্জাহান। অনুষ্ঠানে ক্যান্সার থেকে সেরে ওঠা রোগীরা তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফাহিম হাসান রেজা এবং শিশু হেমাটোলজি এন্ড অনকোলজি বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. ইন্দিরা চৌধুরী।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!