১১ শিশুকে টিকা দেওয়ার পর স্বাস্থ্যকর্মী জানলেন তিনি নিজেই করোনা আক্রান্ত

দিনভর তিনি টিকা দিয়ে গেলেন শিশু ও কিশোরীদের। এর ঠিক দুদিন পর জানা গেল টিকা দেওয়া ওই স্বাস্থ্য সহকারী নিজেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। টিকা দেওয়ার দুই দিন আগে দেওয়া নমুনায় করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হন তিনি। টিকা দেওয়ার সময়েই করোনা পজিটিভ ছিলেন তিনি। সবচেয়ে বড় আতঙ্কের কথা হচ্ছে, উপযুক্ত সুরক্ষা ছাড়াই টিকা দেওয়ার পুরো সময়টাতে শুধুমাত্র একটি সার্জিক্যাল মাস্ক পরেই টিকাদান চালিয়ে গেছেন ওই স্বাস্থ্য সহকারী। করোনার নমুনা দেওয়ার কথা জানার পরও তাকে টিকা দিতে পাঠিয়েছিলেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

এর ফলে ইপিআই টিকাদান কর্মসূচির আওতায় রোগ প্রতিরোধের টিকা নিতে গিয়ে ঝুঁকির মুখে পড়ে গেছে টিকা নেওয়া অন্তত ৯ শিশু ও দুই কিশোরী।

আতঙ্কজনক এই ঘটনাটি ঘটেছে সাতকানিয়া উপজেলার ৮ নম্বর ঢেমশা ইউনিয়নে। করোনা আক্রান্ত হওয়া ওই স্বাস্থ্য সহকারী ঢেমশা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে টিকা দান কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

জানা গেছে, গত ১৩ জুন ঢেমশা ইউনিয়ন পরিষদে নিয়মিত টিকা প্রদান কার্যক্রম পরিচালনা করেন ওই স্বাস্থ্য সহকারী। এর দুদিন পর ১৫ জুলাই রাতে তার করোনা টেস্টের পজিটিভ ফলাফলের খবর জানা যায়। ১১ জুন দেওয়া নমুনায় এই ফলাফল এসেছে বলে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান ওই স্বাস্থ্য সহকারী নিজেই।

স্বাস্থ্য সহকারী জানান, একই সাথে করোনার নমুনা সংগ্রহ ও টিকাদান কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হচ্ছে তাদের। সর্বশেষ গত ২৬ মে নমুনা সংগ্রহের কাজ করেন তিনি। এর ১৪ দিন পর তার জ্বর দেখা দিলে ১১ জুন নিজের করোনা টেস্টের জন্য নমুনা জমা দেন তিনি। নমুনা জমা দেওয়ার দুই দিন পর ১৩ জুন ইউনিয়ন পরিষদে নিয়মিত টিকা প্রদান কাজেও অংশ নেন। দিনভর ৭ শিশুকে হামের টিকা ও ২ জনকে প্রথম ডোজ এবং দুই কিশোরীকে টিটেনাসের টিকা দেন তিনি।

করোনা টেস্টের নমুনা দেওয়ার পর আইসোলেশনে না গিয়ে টিকা দিতে যাওয়া ঠিক হয়েছে কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে ওই স্বাস্থ্য সহকারী বলেন, ‘দেখুন আমি চাকরি করি। টিকাদান কর্মসূচি বন্ধের কোনো নির্দেশনা না থাকায় আমাকে টিকা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হয়েছে। আমি নমুনা দিয়েছি এটা তো অফিসে জানতো। কিন্তু টিকা প্রদান বন্ধের কোন নির্দেশনা আমাকে দেওয়া হয়নি।’

এই ঘটনার ফলে নিয়মিত টিকা প্রদান কাজের সাথে জড়িতদের করোনা টেস্টের নমুনা সংগ্রহের সাথে যুক্ত করা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে সাতকানিয়া উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবদুল মজিদ ওসমানী বলেন, ‘আমাদের লোকবল সংকট আছে। সীমিত লোকবল নিয়ে এখন আমাদের অনেক কাজ করতে হচ্ছে। এই কারণে আসলে এগুলো আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। ঢেমশাতে যেটা হয়েছে এই বিষয়ে আমি আপনাকে এক্ষুণি কিছু জানাতে পারবো না। তবে আপনি যা বলছেন, তাতে পিপিই পরে টিকা দেওয়ায় টিকা গ্রহীতাদের সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’

তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা পিপিই পরে টিকা দেওয়ার কথা বললেও টিকা প্রদান করা কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী জানিয়েছেন, তারা শুধুমাত্র নমুনা সংগ্রহের কাজে গেলে তখন পিপিই দেওয়া হয়। অন্য সময়ে কোন নিরাপত্তা সামগ্রী দেওয়া হয় না তাদের। ফলে মূলত ব্যক্তিগত উদ্যোগে সংগ্রহ করা মাস্ক পরেই টিকা দিতে হয় তাদের।

এদিকে করোনায় সংক্রমিত স্বাস্থ্য সহকারীর কাছ থেকে টিকা নিতে গিয়ে ঝুঁকিতে পড়া শিশু ও কিশোরীদের বিষয়ে দ্রুত খোঁজখবর নিয়ে তাদের টেস্টের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন সাতকানিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর এ আলম।

চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বললেন, ‘আমি বিষয়টি জানতাম না। এখন জানলাম। আমি বিষয়টি খোঁজখবর নেবো। ওইদিন যাদের টিকা দেওয়া হয়েছে তাদের টেস্ট করানোর ব্যবস্থা করা হবে। বিষয়টি দুঃখজনক। তবে এখানে আসলে লোকবলের সংকট রয়েছে। ফলে পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে বিভিন্ন রকমের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।’

তবে লোকবল সংকটের এই অজুহাত মানতে চাইছেন না স্থানীয়রা। পুরো ঘটনাটার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দায়সারা মনোভাবকেই দায়ী করছেন তারা। ইপিআই কার্যক্রমের সাথে যুক্ত থাকা একজন স্থানীয় সমাজকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘লোকবল সংকটের কারণে এমন ভয়াবহ ঝুঁকি নিতে হয়েছে এটা মানি না। এখানে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার স্পষ্ট অবহেলা ছিল। আমি স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের সাথে যুক্ত থাকার সুবাদে জানি কয়জন ইপিআই কর্মী আছে। আর সব ইপিআই কেন্দ্রের কাজ একই দিনে পড়ে না। উনি চাইলে অন্য এলাকার একজনকে পাঠাতে পারতেন। এখানে মূল বিষয়টা হলো তিনি গুরুত্ব দেননি বা বুঝতে পারেননি।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!