১১ বার পিছিয়ে যেভাবে ঘোষণা হচ্ছে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদলের কমিটি

বয়সে ৫০ বছর ছুঁই ছুঁই অছাত্রদের হাতে থাকা চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদলের নেতৃত্বে পরিবর্তন এ পর্যন্ত ১১ বার পেছালেও যে কোন মূহূর্তে ঘোষণা হতে পারে নতুন আহ্বায়ক কমিটি। ওই কমিটি আগামী তিন মাসের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবে বলে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানালেন একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা। কেউ বলছেন যে কোন সময়, কেউ বলছেন চলতি সপ্তাহে আবার কেউ বলছেন চলতি মাসেই কমিটি ঘোষণা হবে।

তবে সময়ের ব্যাপারে নিশ্চিত না হলেও ছাত্রদলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে নতুন কমিটির প্রস্তাবনা জমা দিয়েছেন বলে সবাই নিশ্চিত করেছেন। তবে মূল কমিটির ঘোষণার আগে পদ-পরিচয়হীন বিবাহিত ছাত্রদল নেতাদের বিগত দিনের ত্যাগের মূল্যায়ন হিসেবে গাজী-বুলুর কমিটির আকার বড় হতে পারে সপ্তাহখানেকের জন্য।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের জ্যেষ্ঠ সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক জননেতা তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা চট্টগ্রাম নগর, উত্তর জেলা, দক্ষিণ জেলা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কমিটি গঠনে কাজ করছি। সবগুলো কমিটিই পূর্ণাঙ্গ হবে। চট্টগ্রাম নগর কমিটি নিয়ে আমরা একাধিকবার সবার সাথে বসেছি। আমাদের প্রস্তাবনাও আমরা লন্ডন জমা দিয়েছি। যে কোন মুহূর্তেই নগর কমিটির ঘোষণা আসতে পারে।’

ছাত্রদলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমেদ সাব্বির বলেন, ‘মূলত দীর্ঘদিন এই গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের কমিটি না থাকায় সবার সাথে আলাপ-আলোচনা করে কমিটি গঠন করতে দেরি হয়েছে। আমরা আমাদের প্রস্তাবনা জমা দিয়েছি। যাচাই বাছাই শেষে আমাদের অভিভাবক জননেতা তারেক রহমান আমাদের যে নির্দেশনা দেবেন সেই আলোকে আমরা কমিটি ঘোষণা দেবো।’

নতুন কমিটির প্রস্তাবনা জুলাই মাসে জমা হলেও দেরির কারণ হিসেবে জানা গেছে, বিবাহিত ছাত্রনেতারাই কেন্দ্রের মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়ান। কারণ ২০১৩ সালের ২১ জুলাই গাজী সিরাজ ও বেলায়েত হোসেন বুলুর নেতৃত্বাধীন ১১ সদস্যের কমিটি যখন গঠন হয়, তখন ওই কমিটিতে থাকা মোটামুটি সবাই এক বা একাধিক সন্তানের জনক। নগর বিএনপির মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের অনুকূলে থাকা এই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার যে প্রস্তাবনা ছিল তারাও অধিকাংশ বিবাহিত এবং বয়স ৪০ বছরের কোটায়। গেল সাত বছরে কমপক্ষে ১০ বার গাজী-বুলুর কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সর্বশেষ প্রক্রিয়ায় গাজী-বুলুকে বাদ দিয়ে নতুন মুখ এবং প্রকৃত ছাত্র নেতৃত্ব খোঁজেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

সে লক্ষ্যেই মূলত কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি মোসাদ্দেক সাফি, যুগ্ম সম্পাদক এবিএম মাহমুদ আলম সরদার এবং সহ-সম্পাদক মাঈন উদ্দিন নিলয় ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) ফারুক আহমেদ সাব্বিরের সমন্বয়ে গঠিত টিমের মাধ্যমে চট্টগ্রাম নগর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) শাখার কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়।

২৪ জানুয়ারি তারা চট্টগ্রাম সফরে এসে কাজও শুরু করেন। ২৭ জানুয়ারি উত্তর জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল আলম জনির অনুসারীরা সভাপতি জাহেদুল আফসার জুয়েলে উপর হামলা চালায়। পরদিন নাসিম ভবন থেকে পুলিশ কর্তব্যকাজে বাধাদানের অভিযোগ করে দুই কেন্দ্রীয় নেতাসহ ৫ জনকে আটক করা হয়। এরপর কমিটি গঠন কিছুটা গতি হারায় এবং করোনার কারণে তা আরও বিলম্বিত হয়। জুন থেকে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া পুরোদমে শুরু হয়ে জুলাইতে নগর কমিটির প্রস্তাবনাও চলে যায় লন্ডনে।

চট্টগ্রাম নগর কমিটির জটিলতা কাটাতে নগর কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা হয় ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে। আর অন্য চারটি ইউনিট কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় আগের চারজনের সাথে যুক্ত হন আরে সহ-সভাপাতি পাভেল শিকদার।

ছাত্রদলের কমিটি গঠনে দায়িত্বপ্রাপ্তদের একাধিকজনের সাথে আলাপ করে জানা যায়, যারা আগামী দিনে ছাত্রদলকে নেতৃত্ব দেবেন তাদের নিয়ে মূল আহ্বায়ক কমিটি গঠন হয়েছে। কমিটির সদস্যসংখ্যা রাখা হয়েছে ৩১ জন। তারেক রহমান চাইলে সংখ্যা আরও বাড়বে। তবে তার আগে বর্তমান কমিটির সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে বিবাহিত ছাত্রদল নেতাদের ২ থেকে ৭ দিনের জন্য সম্মানিত করা হবে বিভিন্ন পদ-পদবি দিয়ে। যা তাদের বিগত দিনে দলের জন্য শ্রম-ত্যাগের মূল্যায়ন। কারণ পদ-পদবির পরিচয় দিতে না পারলেও তাদেরকে মাঠে ব্যবহার করে গাজী সিরাজ ছাত্রদলের সভাপতি, বুলু সেক্রেটারি। এতে নতুন কমিটি নিয়ে আগের মতো দাঙ্গা-হাঙ্গামা বন্ধ থাকবে বলে ছাত্রদল নেতাদের ধারণা।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ১৭ মে ডা. শাহাদাত হোসেনের বাসার থেকে বের হয়ে বাদশা মিয়া সড়কে ট্রাকের ধাকায় আহত হয়ে মারা যান নগর ছাত্রদলের যুগ্ম-সম্পাদক জালাল উদ্দিন সোহেল। সেই থেকে নগর ছাত্রদলে আছেন ১০ জন। তাদের মধ্যে গাজী সিরাজের সমবয়সী সহ-সভাপতি জসিম উদ্দিন চৌধুরী ছাড়া বাকিরা সবাই যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও বিএনপির বিভিন্ন পদে আছেন। ছাত্রদলের নেতৃত্বে থাকা ছাত্রদের পিতাদের এই ১০ জনের কমিটিতে বিবাহিত অন্যান্য ছাত্রনেতাদের পূনর্বাসিত করে সম্মানিত করে মূলত নিয়মিত ছাত্রদের হাতেই ছাত্রদলের নেতৃত্ব তুলে দেওয়া বিএনপির রাজনীতির জন্য নতুন একটা অধ্যায়ের সূচনা বলে ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!