১১ বছরে দুধের উৎপাদন বেড়েছে চার গুণ, তবু শহরে দাম বেশি গ্রামে কম

দেশে প্রতি বছরই উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ছে দুধের উৎপাদন। তবে মাথাপিছু দুধের চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা এখনো অর্জিত হয়নি। একই সঙ্গে শহরে ও গ্রামে দুধের দামের পার্থক্য রয়েছে। আগামী ৪-৫ বছরের মধ্যে দুধের চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং শহরে ও গ্রামে দুধের দামের তারতম্য কমানোর জন্য কাজ করছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ।

আজ শনিবার (১ জুন) পালিত হল বিশ্ব দুগ্ধ দিবস ২০১৯। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘দুধ পানের অভ্যাস গড়ি, পুষ্টি চাহিদা পুরণ করি’। দিবসটি উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেলা ও বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অফিসের উদ্যোগে শনিবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় অতিরিক্ত কমিশনার শংকর রঞ্জন শাহা প্রধান অতথি ছিলেন। বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. ফরহাদ হোসেনের সভাপতিত্বে এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রেয়াজুল হক।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) মধ্যে যে ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তার মধ্যে নয়টি ডেইরি (দুগ্ধ) সেক্টরের সাথে সম্পর্কিত। এগুলো হলো ক্ষুধা নিবারণ, পুষ্টি নিশ্চিতকরণ এবং খাদ্য নিরাপত্তা; স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন; ব্যাপক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়ন; প্রাণবন্ত পরিকাঠামো ও ইনোভেশন; বৈষম্য দূরীকরণ; টেকসই ভোগ ও উৎপাদন; বাস্তু ও জীববৈচিত্র্য এবং গ্লোবাল পার্টনারশিপ।

শহরে দাম বেশি, গ্রামে কম
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, গত ১১ বছরে দেশে দুধের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৭০ লাখ মেট্রিক টন। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে দেশে দুধের উৎপাদন ছিল মাত্র ২৪ লাখ মেট্রিক টন। অন্যদিকে গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে মোট ৯৪ লাখ ৬ হাজার মেট্রিক টন দুধ উৎপাদিত হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে দুধের চাহিদা ছিল ১৫০ লাখ ২৯ হাজার মেট্রিক টন। এর বিপরীতে উৎপাদিত হয়েছে ৯৪ লাখ ছয় হাজার মেট্রিক টন। উৎপাদনে ঘাটতি আছে ৫৬ লাখ ২৩ মেট্রিক টন।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রেয়াজুল হক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী আমরা এখনো দুধে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারিনি। দেশে মাথাপিছু দুধের চাহিদা ২৫০ মিলি লিটারের বিপরীতে উৎপাদন হয় ১৫৮ মিলি লিটার। আগামী ৪-৫ বছরের মধ্যে দুধের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমরা কাজ করছি।’

তিনি বলেন, ‘শহর এলাকায় দুধের দাম বেশি। এটা খামারিদের দিক থেকে এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে ভালো। তবে গ্রামে দুধের দাম কম। গ্রামে ও শহরের দুধের দামের তারতম্য কমানোর জন্য আমরা কাজ করছি। কৃষকদেরকে সংগঠিত করে আমরা সমিতি গঠন করেছি।’

সস্তায় প্রোটিন মেলে দুধে
মাছ ও মাংসের চেয়ে সস্তায় প্রোটিন পাওয়া যায় দুধে। প্রতি ১০০ গ্রাম ইলিশ মাছে প্রোটিন পাওয়া যায় ২২ গ্রাম। এতে দাম পড়ে ৯০ টাকা। প্রতি ১০০ গ্রামে হাঁড়ছাড়া গরুর মাংসে প্রোটিন পাওয়া যায় ২৫ গ্রাম। এতে দাম পড়ে সাড়ে ৮৮টাকা। অন্যদিকে৭১৫ মিলি দুধে প্রোটিন পাওয়া যায় ২৫ গ্রাম, যার দাম পড়ে ৫৪ টাকা।

দুধ উৎপাদনে শীর্ষ দেশসমূহ
দুধ উৎপাদনে শীর্ষ দশ দেশের মধ্যে প্রথমে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ৯১ দশমিক ৩ বিলিয়ন কেজি দুধ উৎপাদন হয়। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত, এর উৎপাদন ৬০ দশমিক ৬ বিলিয়ন কেজি; তৃতীয় চীন ৩৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন কেজি; চতুর্থ ব্রাজিল ৩৪ দশমিক ৩ কেজি; পঞ্চম জার্মানি ৩১ দশমিক ১ বিলিয়ন কেজি; ষষ্ঠ রাশিয়া ৩০ দশমিক ৩ বিলিয়ন কেজি; সপ্তম ফ্রান্স ২৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন কেজি; অষ্টম নিউজিল্যান্ড ১৮ দশমিক ৯ বিলিয়ন কেজি; নবম তুরস্ক ১৬ দশমিক ৯ বিলিয়ন কেজি এবং ইংল্যান্ড ১৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন কেজি। অন্যদিকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ দুধের বার্ষিক মোট উৎপাদন ৯৪ লাখ ৬ হাজার মেট্রিক টন।

মাথাপিছু দুধ ভোগে শীর্ষ দেশসমূহ
প্রতি বছর মাথাপিছু দুধ ভোগে শীর্ষে রয়েছে ফিনল্যান্ড। ফিনল্যান্ডে একজন মানুষ প্রতি বছর ৩৬১ দশমিক ১৯ কেজি দুধ পান করে থাকে। সুইডেনে এই হার ৩৫৫ দশমিক ৮৬ কেজি: নেদারল্যান্ডে ৩২০ দশমিক ১৫ কেজি এবং গ্রিসে ৩১৪ দশমিক ৬৯ কেজি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!