১০ বছরে কারা ঢুকলো আওয়ামী লীগের ছায়াতলে, তালিকা করছে পুলিশ

সুনির্দিষ্ট তথ্যসংগ্রহ করা হবে ছয় বিষয়ে

ক্যাসিনোকাণ্ডের পর সরকারদলীয় চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসী ও কিশোর গ্যাংয়ের তালিকা প্রণয়ন শেষে এবার ২০০৯ সালের পর অন্য দল থেকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে যোগদান করা নেতাকর্মীদের তালিকা করছে পুলিশ।

সরকারের শীর্ষপর্যায়ের নির্দেশে সম্প্রতি দেশের সব ইউনিটকে এই নির্দেশ দেওয়া হয় গত ২২ অক্টোবর। এর পরপরই এই তালিকা প্রণয়নের জন্য প্রত্যেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে একই সময়ে অনুপ্রবেশকারীদেরও তালিকা করা হচ্ছে। সিএমপির একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সূত্রমতে, গত ২২ অক্টোবর সিএমপিতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক চিঠিতে জানানো হয়, ‘২০০৯ সালের পর থেকে অদ্যাবধি বিএনপি ও জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোট ও তাদের অঙ্গ সংগঠন হতে নেতাগণ (মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ) নিজ জোট ও দল ত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছে তাদের বিষয়ে যাবতীয় তথ্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে।’

তালিকা তৈরির সময় যে বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হবে, তার মধ্যে রয়েছে— সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা আওয়ামী লীগ নেতাদের নাম এবং পদ-পরিচয়। আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে কিংবা আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে তাদের নাম-ঠিকানা ও দলীয় পরিচয় চিহ্নিত করা। আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া এসব সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজের আগের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি-না। তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় মামলা থাকলে তার বিবরণ। সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের আগের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতার নাম-পদপদবি ও পরিচয়। তাদের বর্তমান আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতার নাম-ঠিকানা এবং তাদের বর্তমান সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিবরণ।

বিষয়টি অত্যন্ত গোপনীয় দাবি করে সিএমপির দায়িত্বশীল কোনও কর্মকর্তা এ নিয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী ডা. আফসারুল আমীন এমপি বলেন, ‘সারা দেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করছেন। এখন সেই শুদ্ধি অভিযানে নিজ দলের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা অনুপ্রবেশকারীদেরও চিহ্নিত করা হচ্ছে। বিষয়টি অত্যন্ত ইতিবাচক। কেননা যারা বিএনপির সময় বিএনপির সুবিধা নিয়ে এখন আওয়ামী লীগে ভিড়েছে তাদের অবশ্যই চিহ্নিত করা দরকার।’

আফসারুল আমীন বলেন, ‘ফ্রিডম পার্টি করে আসা লোক হয়তো কোনও কারণে নিজের স্বার্থে আওয়ামী লীগের ভিড়তে পারে কিন্তু সে কোনও দিনই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মী হতে পারেনা। তাই সুন্দর অট্টালিকায় যদি দুর্গন্ধ থাকলে কেউ প্রবেশ করতে আগ্রহী হয় না। তেমনি দলের ভেতর আগাছা থাকলেও দলে অস্বস্তি বিরাজ করে।’

তবে এই তালিকাটি যাতে যথাযথভাবে প্রণয়ন করা হয় সেটাই প্রত্যাশা করেন হালিশহর-ডবলমুরিংয়ের এ সংসদ সদস্য।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা উপ কমিটির সদস্য ও সাবেক ছাত্রনেতা আরশেদুল আলম বাচ্চু বলেন, ‘উদ্যোগটি অবশ্যই ইতিবাচক, যারা দলের দুঃসময়ের কর্মী তাদের জন্য। কেননা দলের সুসময়ে অন্য দল থেকে আসা লোকজনের কারণেই নানা সময়ে দল বিতর্ক হচ্ছে। এখন সময় এসেছে এদের তালিকা করে ব্যবস্থা নেওয়ার।’

দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে প্রথমবার সরকার গঠন করলে ভোল পাল্টে সেই দলে ভিড়ে যায় অনেক সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ। দলের নেতাদের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি চালায় তারা। এ নিয়ে অনেক সময় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় সরকারে থাকা দলকে। গত ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে যেমন বিএনপি ও জামায়াত থেকে অনেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিল, তেমনি দল ভারী করার জন্যও সংসদ সদস্য পদ প্রত্যাশী আওয়ামী লীগের অনেক প্রার্থী ও নেতা তাদের আওয়ামী লীগে যোগদানে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছেন। আবার কেউ কেউ ব্যবসা-বাণিজ্য বা অবস্থান টিকিয়ে রাখতে আওয়ামী লীগে আশ্রয় নিয়েছে। আধিপত্য, টেন্ডারবাজি, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে মূলধারার নেতাকর্মীদের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় এই দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!