১০ অস্ত্রের ভাণ্ডার আছে বাঁশখালীর এক চেয়ারম্যানের কাছে— চোখের জলে জানালেন ভুক্তভোগীরা

ইয়াছিন চেয়ারম্যানের অপকর্মের ফিরিস্তি উঠে এল সংবাদ সম্মেলনে

‘বাঁশখালীর শেখেরখীলের চেয়ারম্যান ইয়াছিন তালুকদার আমাকে বাঁচতে দেবে না। সে আমার ছোট বাচ্চাকেও মেরেছে। আমার পরিবারের কেউ তার হাত থেকে রেহাই পায়নি। বিচারের জন্য দেওয়া ৫০ হাজার টাকা দাবি করাতেই সে আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়েছে। অস্ত্র দিয়ে আমাকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। পুলিশ যদি সঠিক তদন্ত না করতো তাহলে এতদিন আমাকে জেলেই থাকতে হতো। আমি মুক্তি পেলেও চেয়ারম্যানের কোন শাস্তি হয়নি। যে কারণে সে প্রতিনিয়ত আমাকে হুমকি দিচ্ছে।’

রোববার (১৮ জুলাই) বিকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কথাগুলো বলেছেন বাঁশখালীতে চেয়ারম্যানের হাতে হয়রানির শিকার হওয়া অটোরিকশা চালক নুরুল কাদের।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নুরুল কাদের বলেন, ‘ইয়াছিনের সহযোগী সেলিমের গাড়িতে সবসময় অস্ত্র থাকে। তার ভাতিজা ইকবালও একজন অস্ত্রবাজ। আমাকে ৭ জুলাই যখন অস্ত্র গুঁজে দেওয়া হয় হাতে, তখন সেখানে আরও দশটির মতো অস্ত্র ছিল। সেখান থেকে আমাকে একটি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। অথচ আমি চেয়ারম্যানের মারধরের কবল থেকে বাঁচতে পাশের ইউনিয়ন পুঁইছড়িতে গিয়েও রক্ষা পাইনি।’

নুরুল কাদের বলেন, ‘আমাকে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার মারধর করা হয়েছে। অস্ত্রটি কোথা থেকে আসলো তার তদন্ত হোক। আমি অস্ত্রটির প্রকৃত মালিককে চিহ্নিত করার দাবি জানাচ্ছি। একইসাথে শেখেরখীল এলাকায় চেয়ারম্যানের অস্ত্র ও মাদক নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

ইয়াছিন চেয়ারম্যানকে ‘একজন মাদকাসক্ত জনপ্রতিনিধি’ বলে উল্লেখ করে তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘আমি চিকিৎসাধীন অবস্থায় জানতে পারি গত ১০ জুলাই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে। যার বাদি আমি। এই মামলা থেকে গত ১৫ জুলাই (বৃহস্পতিবার) চেয়ারম্যান ইয়াছিন জামিন পেয়ে আবারও আমার ঘরে হামলা করে। আমার সাথে গত ছয় মাস ধরে সংঘটিত ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যাবে চেয়ারম্যান আমার সাথে ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে এমন জঘন্য কাজ করে যাচ্ছে। এই মামলায় আমাকে তুলে নিয়ে মারধর ও অস্ত্র দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হলেও অস্ত্রটি কোথা থেকে এসেছে সে বিষয়টি রহস্যজনকভাবে এখনও অষ্পষ্ট।’

চেয়ারম্যানের অপকর্ম তুলে ধরে নুরুল কাদের বলেন, ‘আব্দুল্লাহর দোকানের মেম্বার জসিমকে তার পুত্রবধূসহ মাদকসহ সারারাত বসিয়ে রাখলে ওই মহিলার বাচ্চা রাস্তায় প্রসব করে। রমজানের শেষের দিকে সিটি কলেজের নৈশ জিএস মোহাম্মদ হেলাল স্ত্রীসহ বাড়ি থেকে আসার পথে মাতাল অবস্থায় হেনস্থা করে এবং তার সাথে থাকা বদি আলম নামে এক ব্যক্তিকে মাতাল অবস্থায় কানে কামড় দিয়ে কান ছিঁড়ে ফেলার মতো অভিযোগ আছে।’

তিনি বলেন, ‘এই চেয়ারম্যান কর্তৃক শেখেরখীল সরকার বাজার ঘাট ইজারা দেয়ার নিয়ম না থাকলেও জোরপূর্বক ইজারা দিয়ে চাঁদাবাজি করে আসছে, বাঁশখালীর আদালতের আইনজীবী সহকারী বদি আলম মুন্সির বাড়িতে হামলা চালিয়ে ঘরবাড়ি ভাংচুর ও সিএনজিতে আগুন দিয়ে ঘরে থাকা নারীদের শ্লীলতাহানী করার মতো অন্যায় যেন চেয়ারম্যানের নিয়মিত ঘটনা। ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ভেট্টার বোনের বাড়িতে গিয়ে হামলা ও গোলাগুলির ঘটনাও ঘটিয়েছে চেয়ারম্যান।’

সংবাদ সম্মেলনকালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, নুরুল কাদেরের মা লায়লা বেগম, বড় বোন আনোয়ার বেগম, ছোট ভাইয়ের স্ত্রী রোকসানা বেগম, ছেলে রমিজ উদ্দিন, স্ত্রী আছিয়া বেগম প্রমুখ।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!