১০৭ মণ্ডপের প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত আনোয়ারার মৃৎশিল্পীরা

যখন দেশে রোগ-মহামারির সৃষ্টি হয় তখন মা দুর্গা দোলায় আসেন ও যাওয়ার সময় গজে যান। দুর্গা পূজা শুরু হচ্ছে আগামী ২২ অক্টোবর থেকে। এদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব এটি। মন্ডপের প্রতিমা গড়তে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় রাতদিন কাজ করছেন মৃৎশিল্পীরা। পূজা উপলক্ষে মন্দিরগুলোতে চলছে সাজসজ্জা। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ মন্ডপে প্রথম মাটির কাজ শেষে এখন দ্বিতীয় দফার কাজ চলছে। এবার আনোয়ারা উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ১০৭টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।

মৃৎশিল্পীরা জানান, সাধারণত প্রতিমা তৈরির সাজসজ্জার জিনিস কেনেন কারিগররাই। কারিগরদের মজুরির সাথে সাজসজ্জার জিনিসের মূল্য যুক্ত থাকে। এবার একেকজন কারিগর ৫-৬টি করে মন্দিরের প্রতিমা তৈরি করছেন। প্রতিমা তৈরিতে মন্দিরভেদে ৫০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা করে নিচ্ছেন তারা। প্রতিমা তৈরির অন্যান্য উপাদান, মাটি, খড়, বাঁশ কিংবা অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করে মন্দির কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, প্রতিমালয়গুলোতে দুর্গা দেবীর প্রতিমা গড়ে তোলার ধুম পড়েছে। প্রতিমায় দেবীর মূল অবয়ব তৈরি হয়ে গেছে। প্রতিমায় মাটির প্রলেপ দেয়াও শেষ। এখন চলছে রং-তুলির কাজ। শিল্পীর তুলির আঁচড়ে মূর্ত হয়ে উঠছে দেবীর রূপ। এখন দম ফেলার সময় নেই মৃৎশিল্পীদের।

১০৭ মণ্ডপের প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত আনোয়ারার মৃৎশিল্পীরা 1

শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে আনোয়ারার জয়কালী বাজার এলাকায় জয়কালী প্রতিমালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিমা নির্মাণে ব্যস্ত মৃৎশিল্পী রাজেশ রায়, সুমন বিশ্বাস, রিংকু শীল ও কাজল দাশ। প্রতিবারের মতো এবারও নৈপুণ্যের সঙ্গে প্রতিমা বানানোর কাজ করছেন তারা। বাংলা শ্রাবণ মাসের শুরু করে আশ্বিন মাস পর্যন্ত এ তিনমাস ধরে চলে প্রতিমা তৈরির কাজ। কাজ এখন প্রায় শেষের পর্যায়ে। প্রতিটি প্রতিমায় বাঁশ-খড়খুটো দিয়ে দেবীর অবয়ব তৈরি করা হয়। তার ওপর দেওয়া হয় মাটির প্রলেপ। এখন চলছে রঙ তুলির কাজ। দেবী দূর্গার বাহন সিংহ, মহিষা সুর, দেবী লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ এবং তাদের বাহন পেঁচা, হাঁস, ইঁদুর আর ময়ূরের রঙের কাজ শেষ করছেন মৃৎশিল্পীরা।

জানতে চাইলে মৃৎশিল্পী রাজেশ রায় বলেন, উপজেলা থেকে ২০টি প্রতিমা তৈরির কাজ আমি পেয়েছি। মানভেদে ২০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। এখন প্রতিমায় রঙের কাজ করছি। পূজার ষষ্ঠীর মধ্যে প্রতিমা বুঝিয়ে দিয়ে দিতে হবে।

এদিকে শারদীয় দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলার মা কমিউনিটি সেন্টারে আনোয়ারা উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুগ্রীব মজুমদার দোলনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা পুজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ, প্রধান বক্তা ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও আনোয়ার সদরের চেয়ারম্যান অসীম কুমার দেব। সাধারণ সম্পাদক নিউটন সরকারের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন আনোয়ারা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মৃণাল কান্তি ধর, জেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সদস্য বিশ্বজিত পালিত, হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট হরিপদ চক্রবর্তী, প্রকৌশলী সুবোধ মিত্র, সাধারণ সম্পাদক সাগর মিত্র, হরিপদ চৌধুরী বাবুল, লায়ন অজিত কুমার নাথ, সজিব দেব নাথ, অনুপম চক্রবর্তী বাবু, গৌতম দাস, যীশু মিত্র, মাস্টার নারায়ন সরকার, দিলীপ শীল,ঝোটন মজুমদার, রাম লাল দেবনাথ, অনুপম দত্ত,সুবাস সিংহ, রতন কুমার শীল, মাস্টার রতন কুমার শীল, দেবরাজ শীল, সত্যজিত সিকদার, কাজল মিত্র, টিটু আইচ, রুপন দত্ত, ডা. বাবুল কান্তি শীল জোটন দাশ, আনন্দ মোহন দত্ত, অবিকল দাশ গুপ্ত, জহর লাল শীল,মাস্টার দ্বীপন কুমার শীল, দীপু দত্ত, রাজিব দেব নাথ, রিটন নাথ বাবু, আনন্দ মোহন দত্ত রনি সিংহ।

আনোয়ারা উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুগ্রীব মজুমদার দোলন বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এ বছর পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতাসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হচ্ছে। পূজায় ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ (এমপি) সার্বিক সহযোগীতার আশ্বাস দিয়েছেন। সরকারের স্বাস্থ্য বিধি মেনেই পূজা অনুষ্ঠিত হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ইতোমধ্যে পূজা উপলক্ষে মন্দিরে মন্দিরে কমিটি গঠন হয়েছে। কমিটির সদস্যরা নিয়মিত সার্বিক খোঁজ-খবর রাখেছেন যেন সুষ্ঠুভাবে উৎসব সম্পন্ন করা যায়।

আনোয়ারা থানার অফিসার ইনচার্জ দুলাল মাহমুদ বলেন, শারদীয় দুর্গা পূজায় যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য প্রশাসন সর্বদা সজাগ থাকবে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা যাতে নির্বিঘ্নে তাদের উৎসব পালন করতে পারে সে বিষয়ে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য বিধি মেনেচলাসহ মাদক ও ইভটিজিং বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে থাকবে।

এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!