হ্যাপী থেকে আমাতুল্লাহ : ঢালিউড থেকে তাবলীগে

হ্যাপী থেকে আমাতুল্লাহ : ঢালিউড থেকে তাবলীগে 1বিনোদন ডেস্ক : ছিলেন ঢালিউডের উঠতি নায়িকা। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পেসার রুবেলের সাথে কেলেঙ্কারিতে টক অব দ্য কান্ট্রি। এবার আবার সারা দেশে আলোচনা সৃষ্টি করেছেন নাজনীন আক্তার হ্যাপী। এবার অবশ্য কোনো কেলেঙ্কারি নয়। তাকে নিয়ে লেখা বই ‘হ্যাপী থেকে আমাতুল্লাহ’ এখন পাঠকের হাতে হাতে। চাঞ্চল্যকর বইটি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি। এএফপির বরাতে ডেইলি মেইল, ব্রিটবার্ট হয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পরেছে বইটির কথা, হ্যাপীর কথা। সেই সব প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে কীভাবে হ্যাপী উঠতি নায়িকা ও শোবিজের আলো ঝলমল জগত থেকে তাবলীগের সাথে সম্পর্কিত হলো, মাদ্রাসায় ভর্তি হলো।

‘হ্যাপী থেকে আমাতুল্লাহ’ বইটি থেকে জানা যায়, মাত্র ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে মিডিয়ার দুনিয়ায় প্রবেশ করেছিলেন হ্যাপী। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন সিনেমার নায়িকা হবেন। বইয়ের বিভিন্ন জায়গায় গভীর অনুশোচনার সাথে তার ছোটবেলা ও কৈশোরের স্বপ্নের কথা উঠে এসেছে। পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছে জেনেছেন মাত্র তিন বছর বয়স থেকেই কীভাবে টিভিতে বিভিন্ন গান দেখে নাচানাচি করতেন।

পরিবারের সকলের প্রিয়ভাজন মেয়েটি যখন মিডিয়ায় নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছিল সেটা তাদের গর্বের কারণ হয়েছিল। কিন্তু কয়েক বছর আগে যখন পর্দা করা শুরু করলেন তখন পরিবারে বেশ কঠিন অবস্থায় পরেন তিনি। এমনকি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। সেটাকে তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় হিসেবে উল্লেখ করেন। পরিবার থেকে বলা হতো ‘তুমি নামায পড়তে চাও তো নামায পড়ো। আমরা তো নামায পড়তে নিষেধ করছি না। কিন্তু এর পাশাপাশি তুমি মিডিয়াতেও কাজ করো। অনেক মানুষ তো নামাযও পড়ে; আবার মিডিয়াতেও কাজ করে।’

পরিবারের কথা না শোনাতে তার উপর নির্যাতন করা হয়েছে, ঘর থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বিশেষ করে বোনের কথাতে অনেক কষ্ট পেতেন বলে জানান। ওই সময়টা নিয়ে বলতে গিয়ে হ্যাপী বলেন, ‘ওই সময়টা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃসময়। আমি তখন সবসময় ভয়ে কুঁকড়ে থামকতাম যে, এই বুঝি কেউ এসে আমাকে মারবে।’

সেই কঠিন সময়ে তার মনে ‘দ্বীনের বুঝ ফুটতে শুরু করে’ বলে জানান হ্যাপী থেকে আমাতুল্লাহ। তখন মাদ্রাসায় পড়া এবং দ্বীনের ‘আলেমা’ হওয়ার সংকল্প জাগে বলে জানান তিনি।

মাদ্রাসায় চলে আসেন শিক্ষা গ্রহণের জন্য। সেখানে তিনি যে বেশ কঠিন অবস্থায় পড়েছিলেন সেগুলো নিয়ে বলতে গিয়ে বলেন: ‘এখানে নতুন কিছু ভালো লাগার ব্যাপার ছিল; খারাপ লাগার মতোও কিছু ছিল। দেখা গেল, বাথরুমগুলো খুব নোংরা থাকত। অপরিচ্ছন্ন বাথরুম ব্যবহার করতে আমার খুব কষ্ট হত। আমি চোখ-কান বন্ধ করে ঢুকতাম। ওভাবেই বের হয়ে আসতাম। আবার বাথরুমে বেশিক্ষণ থাকা যেত না। দেখা যেত, আরেকজন এসে নক করছে। একটা বিব্রতকর অবস্থা ছিল।’

মাদ্রাসা শিক্ষা সম্পন্ন করার ইচ্ছা সম্পর্কে সাক্ষাতকারগ্রহীতা প্রশ্ন করলে হ্যাপী থেকে আমাতুল্লাহ জানান. ‘মাদ্রাসাতে আমি কারিয়ানা (কুরআন সহীহ) করেছি। আগে মুহাম্মদপুরের একটি মহিলা মাদ্রাসায় ছিলাম। এখন মিরপুরের একটি মহিলা মাদ্রাসায় খুসুসি জামাতে ভর্তি হয়েছি। আরবি, উর্দু শিখছি।’

তিনি এখন দ্বীনের প্রচারক হতে ইচ্ছে পোষণ করেন। এরই মধ্যে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে বিয়ে করেছেন হ্যাপী থেকে আমাতুল্লাহ। বিয়েটা কিভাবে হলো সেটা নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন: ‘আমি যখন মাদ্রাসায় ছিলাম তখন তো আর ফেসবুক ইউজ করার সুযোগ ছিল না। মাসখানেক মাদ্রাসায় পড়ার পর আমি যখন বাসায় আসি তখন ফেসবুকে মাদ্রাসায় আটাশ দিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। আমার ‘উনি’ সেই পোস্ট পড়ে খুঁজে খুঁজে আমার মাদ্রাসায় চলে আসেন। সেখানে এসে তিনি আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। ওই সময় আমি মনে মনে চাচ্ছিলাম যে, যেন আমাকে একজন দ্বীনদার ছেলের সাথে বিয়ে হয়।’

বিয়ের প্রস্তাব কনের বাড়িতে গেলে প্রাথমিকভাবে সমস্যা হয়েছিল। হ্যাপীর ভাষায়-‘আমার আম্মু কখনো দাড়ি-টুপিওয়ালাদেরকে পছন্দ করতেন না। তিনি কোনোভাবেই এ বিয়েতে রাজি হচ্ছিলেন না। দাড়ি-টুপিওয়ালা মানুষ তার মেয়ের জামাই হবে, এটা তিনি কিছুতেই মানতে পারছিলেন না।ৃখুব কষ্ট করে আমার বাসার লোকজনকে রাজি করালাম। পুরোপুরি সুন্নত তরিকায় আমাদের বিয়ে হলো।’

এখন খুব সুখে আছেন বলে জানান। স্বামী তার খুবই খেদমত করে। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি থেকে বোরখা পড়েন হ্যাপী থেকে আমাতুল্লাহ। মাথা থেকে শুরু করে পায়ের আঙ্গুল পর্যন্ত কালো বোরখায় ঢেকে চলাফেরা করেন তিনি।

হ্যাপী থেকে আমাতুল্লাহ বইটির তিনটি পর্ব। প্রথম পর্বে হ্যাপী থেকে আমাতুল্লাহ হয়ে উঠার জার্নিটা উঠে এসেছে। আর দ্বিতীয় পর্বে আমাতুল্লাহর ব্যক্তিগত জীবন, শখ ও ভালোলাগার বিষয়গুলো তুলে এনেছেন। তৃতীয় পর্বে আমাতুল্লাহর জীবনকথা, শোবিজ জীবন, অবস্থান, স্বপ্ন, আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গী ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে বলা হয়েছে। বইটি সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে লেখা হয়েছে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাদিকা সুলতানা সাকী। বইটি সম্পাদনা করেছেন আবদুল্লাহ আল ফারুক।

প্রিয়-অপ্রিয় বিভিন্ন জিনিস নিয়ে দ্বিতীয় পর্বে কথা বলার সময় আমাতুল্লাহ বলেন তার সবচেয়ে প্রিয় বই হচ্ছে ‘মা’রেফুল কুরআন’ আর প্রিয় লেখক বাংলাদেশের মধ্যে মওলানা আবু তাহের মিসবাহ। ভবিষ্যতে হজ্জ ও ওমরা করার ইচ্ছা রয়েছে বলে জানান তিনি।

ফেসবুকে নিয়মিত আসা ও লেখার বিষয়ে বলতে গিয়ে জানান এর মাধ্যমে তিনি দ্বীনের প্রচার ও প্রসারের কাজ করছেন। যারা তাবলীগের সমালোচনা করে তাদের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন: ‘এই তাবলীগ অনেক বড় একটা কাজ। এই কাজের মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষ হিদায়াত পেয়েছে। পথভোলা মানুষগুলোকে আল্লাহর পথে ফিরিয়ে আনার জন্যে এর চেয়ে সহজ আর কোনো কাজ নেই।ৃএ জন্য যারা তাবলীগের সমালোচনা করে, তাবলীগ সম্পর্কে বিরূপ ধারণা রাখে আমি তাদের অনুরোধ করব-আপনি কষ্ট করে কিছু সময় তাবলীগে ব্যয় করুন। আমি আশাবাদী, যারা এখন তাবলীগ সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করছেন তারা তখন তাবলীগে সময় দেবেন।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!