হেপাটাইটিস শরীরে বাসা বাঁধে নিরবে, আক্রান্তরাই জানেন না রোগের উপস্থিতি

বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস ২৮ জুলাই। ২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস নির্মূলের লক্ষ্যে জনস্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানোই এর উদ্দেশ্য।

হেপাটাইটিস কী

লিভারের যে কোনো ধরনের প্রদাহ/ক্ষতকে হেপাটাইটিস বলা হয়। আর এই প্রদাহ ভাইরাসজনিত কারণে হলে সেটাই ভাইরাল হেপাটাইটিস। হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি ও ই—ভাইরাসই মূলত এজন্য দায়ী।

যেভাবে ছড়াচ্ছে হেপাটাইটিস

বিশ্বের প্রায় ৩৫ কোটি লোক হেপাটাইটিসে আক্রান্ত। তাদের মধ্যে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ অর্থাৎ আক্রান্ত প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই নিজের শরীরে এই রোগের উপস্থিতি সম্পর্কে জানেন না। সারাবিশ্বে প্রতি ৩০ সেকেন্ডে ১ জন হেপাটাইটিস রোগে মারা যায়। আমাদের দেশের প্রায় ১ কোটি মানুষ হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’তে আক্রান্ত এবং প্রতিবছর ২৫ হাজার মানুষ হেপাটাইটিসের নানারকম জটিলতায় মারা যান।

হেপাটাইটিসের জটিলতা

দীর্ঘদিন রোগভোগের কোনো এক পর্যায়ে হেপাটাইটিস-বি ও সি রোগীদের সিরোসিস, পেটে বা পায়ে পানি আসা, রক্তবমি, অজ্ঞান হওয়া, আবোল -তাবোল কথা বলা—এমনকি লিভার ক্যান্সারও হতে পারে। কেউ কেউ সারাজীবন উপসর্গবিহীন বাহক হিসাবে থাকতে পারেন।

হেপাটাইটিসের চিকিৎসা

হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসে আক্রান্ত নিরব বা নিষ্ক্রিয় বাহকদের দীর্ঘদিন কোনো ওষুধের প্রয়োজন হয় না। ‘ক্রনিক একটিভ বা সক্রিয়’ রোগীদের কিছু সুনির্দিষ্ট ওষুধ দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে হয়। গর্ভকালীন সময়ে খাওয়া যাবে মা ও শিশুর জন্য নিরাপদ এমন ওষুধ এখন সহজলভ্য। আক্রান্ত নির্দিষ্ট বয়সের শিশুদের জন্য দরকারি ওষুধও পাওয়া যায়। হেপাটাইটিসে ব্যবহৃত আন্তর্জাতিক মানসম্মত সবগুলো ওষুধই এখন সাশ্রয়ী মূল্যে বাংলাদেশে পাওয়া যায়।

যেভাবে হবে প্রতিরোধ

১. একবার ব্যবহৃত সিরিঞ্জ ও সুঁচ পুনরায় ব্যবহার করা যাবে না।
২. সঠিক ও নিশ্চিতভাবে পরীক্ষিত রক্ত গ্রহণ করতে হবে।
৩. দাঁতের চিকিৎসা, নাক-কান ফোরানো কিংবা শরীরের অন্য কোনো অপারেশনের সময় জীবাণুমুক্ত যন্ত্রপাতি ব্যবহারে সচেতন হতে হবে।
৪. নিরাপদ যৌন জীবনযাপন করতে হবে।
৫. সেলুনে ডিসপোজিবল ব্লেইড ব্যবহারে নিশ্চিত করতে হবে।
৬. শিরাপথে মাদক গ্রহণে বিরত থাকতে হবে।
৭. পায়ারসিং বা শরীরে ট্যাটু আঁকার কাজ করালে স্টেরিয়ালাইজড নিডল বা সূঁচ ব্যবহারে নিশ্চিত হতে হবে।
৮. হেপাটাইটিস ‘এ’ ও ‘বি’ রোগের ভ্যাকসিন/টিকা নিন।
৯. গর্ভকালীন সময়ের শুরুতে প্রতিটি গর্ভবতী মায়ের হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ রোগের রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে।
১০. হেপাটাইটিসে আক্রান্ত মায়ের সন্তানকে জন্মের ২৪ ঘণ্টার ভেতরে হেপাটাইটিস ‘বি’র টিকা দিন।

সচেতন হোন

আক্রান্ত না হতে এবং জীবন বাঁচাতে সচেতন হতে হবে। এজন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, রক্ত পরীক্ষা করান, হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হলে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসা নিন, সুস্থ থাকুন।

ডা. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ : এমডি (হেপাটোলজি), লিভার বিশেষজ্ঞ, সহকারী অধ্যাপক, হেপাটোলজি বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!