হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যতিক্রমী সমাবেশ!

“অজানা রোগীদের খুঁজে বের করি। রক্ত পরীক্ষা করান, চিকিৎসা নিন, সুস্থ থাকুন।” শনিবার (২৭ জুলাই) রয়েল গার্ডেন কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত ‘২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে হেপাটাইটিস বি নির্মূলে অজানা রোগীদের খুঁজে বের করি’ শীর্ষক হেপাটাইটিস রোগী সমাবেশ আলোচনা সভায় চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ এসব কথা বলেন।

২৮ জুলাই বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবসকে সামনে রেখে হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সহযোগিতায় এ আলোচনা সভার আয়োজন করেন চমেক হাসপাতালের লিভার রোগ বিশেষজ্ঞ হেপাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ।

দেশের মোট জনসংখ্যার ৫ দশমিক ১ শতাংশ জনগোষ্ঠী হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত। সে হিসাবে, দেশের ৫৭ লাখ পুরুষ ও ২৮ লাখ নারী এ রোগে আক্রান্ত। এই প্রেক্ষাপটে হেপাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ টানা তিনবছর দিবসকে সামনে রেখেই হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে সমাবেশ করেন।

“আসুন খুঁজি অজানা রোগী” এ প্রতিপাদ্য নিয়ে নিজে সচেতন হতে এবং আশেপাশের মানুষকে সচেতন হওয়ার তাগিদে ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ আয়োজন করেন।

সমাবেশে তিনি বলেন, পাঁচ ধরনের হেপাটাইটিসের মধ্যে ‘এ’ এবং ‘ই’ ছড়ায় খাবারের মাধ্যমে। হেপাটাইটিস ‘বি’ এবং ‘সি’ প্রাণঘাতী। টিকা, চিকিৎসার পাশাপাশি সচেতনতাও খুব দরকার। টিকা দেয়ার পরও কার্যকর না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৫ শতাংশ। প্রায় চার লাখ শিশু হেপাটাইটিস বি-তে আক্রান্ত। যত কম বয়সে শিশুরা হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হবে, তত বেশি জটিলতা তৈরি হবে। এ থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় টিকা দেওয়া। যেকোনো রোগ চার ধাপে প্রতিরোধ করা হয়। শুরুতেই ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। রোগীদের অনেকেই এমন পর্যায়ে চিকিৎসকের কাছে আসেন, যখন আর চিকিৎসার তেমন সুযোগ থাকে না। তাই সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করলে ভালো ফল মিলবে সেই লক্ষ্যেই টানা তিনবছর এ আয়োজন করে আসছি।

হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যতিক্রমী সমাবেশ! 1

২০১৮ সালের গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রায় ৫০ শতাংশ, যা আগে ছিল ২৭ শতাংশ। ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী প্রজননক্ষম ১৮ লাখ নারী হেপাটাইটিস বি রোগে আক্রান্ত। অথচ মায়ের মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি এ রোগ ছড়ায়। ১৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী ২৫ লাখ চাকরিপ্রার্থী ও কর্মক্ষম তরুণ হেপাটাইটিস বি রোগে আক্রান্ত। এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে তাঁরা চাকরি পান না। অনিরাপদ রক্ত সঞ্চালন, ডায়ালাইসিস, অনিরাপদ দৈহিক সম্পর্ক, সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদক নেওয়ায় মূলত ভাইরাসটি ছড়িয়ে থাকে। তবে ছোঁয়াছুঁয়ির মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায় না। হেপাটাইটিস বি-তে আক্রান্ত ৭০ শতাংশ রোগী জানেন না যে তাঁরা আক্রান্ত। প্রতি বছর ২০ হাজার মানুষ হেপাটাইটিস বি ভাইরাস জনিত রোগে মারা যায় এবং ১০ শতাংশ লোকের এই রোগের চিকিৎসা ব্যয় হয় প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা।

অন্যদিকে জন্মের ২৪ ঘণ্টা বা যত দ্রুত সম্ভব হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত মায়ের শিশুকে অবশ্যই ইমিউনোগ্লোবিউলিন টিকা দিতে হবে। এতে পরবর্তী প্রজন্ম হেপাটাইটিস বি মুক্ত থাকবে। আর কোনোভাবেই বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা যাবে না বলে জানান ডাক্তার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!