হৃদয়বান চবি ছাত্র যখন অসহায় প্রতিবন্ধীদের আশার আলো

করোনা সংক্রমণের শঙ্কায় গেল মার্চের মাঝামাঝিতে বন্ধ ঘোষণা করা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) একাডেমিক কার্যক্রম ও আবাসিক হল। এর ফলে বাড়ি ফিরে গেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী। বাড়ি ফিরে অনেকেই যুক্ত হয়েছেন বিভিন্ন ধরনের মানবিক কাজে। তাদেরই একজন ইংরেজি বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আলী তানভীর।

জন্মের পর তিনি নিজেও ছিলেন প্রতিবন্ধী। কথা বলতে পারতেন না। পরে নানা চিকিৎসা নিয়ে তিনি সুস্থ হন, কথা বলতে পারেন। করোনায় মানুষের কষ্টে তাকে স্বাভাবিকভাবে টানলো অন্য প্রতিবন্ধীদের দুর্দশা। সেই থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সময়টা তিনি কাজে লাগাচ্ছেন গরিব ও অসহায় প্রতিবন্ধীদের সেবায়। কক্সবাজারের এই সন্তান গত ছয় মাসে জেলার প্রায় ৯০ জন প্রতিবন্ধীকে সাহায্য করেছেন বিভিন্নভাবে। এর মধ্যে ৪৫ জনকে দিয়েছেন হুইল চেয়ার, বাকিদের কাউকে দিয়েছেন ওয়াকার, আবার কাউকে দিয়েছেন সার্জিক্যাল জুতা, সেলাই মেশিন, ওষুধপত্র ও খাবার সামগ্রী। আর এসবের টাকা সংগ্রহ করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে।

এই জিনিসগুলো প্রতিবন্ধীদের কাছে পৌঁছাতে তাকে কখনও হাঁটতে হয়েছে মাইলের পর মাইল কাদামাটিতে, আবার কখনও পাড়ি দিতে হয়েছে নদী। আবার কখনও বা দুর্গম পথ হওয়ায় মাথায় নিতে হয়েছে ৫০ কেজিরও বেশি ওজনের বস্তা। তার এই কাজে সাহায্য করছেন তার দুই বন্ধু মুজিবুল হক ও হাফেজ ফয়েজ।

হৃদয়বান চবি ছাত্র যখন অসহায় প্রতিবন্ধীদের আশার আলো 1

আলী তানভীর তার এই মানবিক কার্যক্রমের পুরো গল্পটাই জানিয়েছেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে।

আলী তানভীর বলেন, ‘গত ২৩ জুন এই মানবিক কাজ শুরু করি। প্রাথমিক পর্যায়ে কোন অসহায় প্রতিবন্ধীর খবর পেলে আমি ও দুই বন্ধু গিয়ে সরেজমিনে দেখে আসি। পরে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের তালিকা নিয়ে সেগুলো কেনার জন্য সাহায্য চেয়ে আমার ফেসবুক টাইমলাইনে পোস্ট করি। তারপর ফেসবুক বন্ধুরা প্রয়োজনমাফিক টাকাটা আমাকে বিকাশে পাঠান। পরে আমরা তিন বন্ধু জিনিসপত্র কিনে তাদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসি।’

তানভীর আরও বলেন, ‘প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো প্রতিবন্ধীদের কাছে পৌঁছাতে আমাদের কখনও হাঁটতে হয়েছে মাইলের পর মাইল কাদামাটি, আবার কখনও পাড়ি দিতে হয়েছে নদী। আবার কখনও বা দুর্গম পথ হওয়ায় মাথায় নিতে হয়েছে ৫০ কেজিরও বেশি ওজনের বস্তা ও হুইল চেয়ার। তবে এসব কষ্ট প্রতিবন্ধী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মুখের হাসি দেখে মুহূর্তেই উধাও হয়ে যেতো।’

শুরুর গল্পটা যেভাবে…
তানভীর বলেন, ‘একটি মাধ্যমে জানতে পারি চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নে এক পরিবারে দুজন প্রতিবন্ধী মেয়ে রয়েছে। যাদের বাবা নেই। মা মানুষের ঘরে কাজ করে কোনমতে সংসার চালাচ্ছে। হুইল চেয়ারের অভাবে একটি মেয়ে নিদারুণ কষ্ট পাচ্ছে। আমি এই বিষয়টি জানতে পেরে তাদের জন্য সাহায্য চেয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিই। সেই পোস্ট থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকার মতো আসে বিভিন্ন মাধ্যমে। সে টাকা থেকে তাদের জন্য ২০ হাজার টাকার খাবার ও একটি হুইল চেয়ার কিনে দিই। এছাড়া খরচের জন্য নগদ ৭ হাজার টাকা দিয়ে আসি।’

তানভীর আরও বলেন, ‘প্রথম থেকেই ফেসবুক বন্ধুরা আমাদের পাশে ছিলেন। আমি তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। এভাবে নিজ নিজ জায়গা থেকে সবাই এগিয়ে আসলে দানশীলদের দানের সুষম বন্টন হবে। অসহায় প্রতিবন্ধী পরিবারগুলো দুরাবস্থা থেকে মুক্তি পাবে। সামান্য টাকার অভাবে যথাসময়ে যথোপযুক্ত চিকিৎসা না পাওয়ায় যারা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে, তাদের পাশে থাকার জন্য আমাদের ছুটে চলা।’

তানভীর বলেন, ‘জন্মের পর আমিও প্রতিবন্ধী ছিলাম। কথা বলতে পারতাম না। যথোপযুক্ত চিকিৎসার কারণে আজ আমি সুস্থ, কথা বলতে পারতেছি। আমি নিজে বুঝি তাদের কষ্ট। প্রাথমিকভাবে কক্সবাজার জেলায় এই কার্যক্রম চালালেও ধীরে ধীরে তা সারাদেশে ছড়িয়ে দেবো। আমার স্বপ্ন হলো, যখন নিজে কোনো কিছু করে টাকা রোজগার করবো তখন নিজের টাকা দিয়েই তাদেরকে সাহায্য করবো।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!