হুমকি মাড়িয়ে মসজিদ-মাজারে মুসল্লিদের ঢল, ইবাদতে কাটল শবে কদর

মহিমান্বিত রজনী লাইলাতুল কদরে সারাদেশের মতো চট্টগ্রামের মসজিদ, মাজারে লাখো মুসল্লীর ঢল নেমেছিল। স্রষ্টার সন্তুষ্টির প্রত্যাশায় রাতভর নামাজ, তসবিহ-তাহলিল, জিকিরে মশগুল ছিল ধর্মপ্রাণ মুসলামরা।

শনিবার (১ জুন) দিবাগত রাতে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, হযরত আমানত খান (রহ) দরগাহ ও তৎসংলগ্ন মসজিদে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমানের উপস্থিতি। কেউ নামাজ পড়ছেন, কেউ কুরআন তিলাওয়াত করছেন, কেউ জিয়ারতে ব্যস্ত। জেল রোড ও দরগাহে প্রবেশের মুখে পুলিশের কড়া পাহারা। সন্দেহজনক যানবাহন এবং ব্যক্তিকে পুলিশ তল্লাশি করছে। বিষয়টি তদারকি করছিলেন কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান। তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, সমগ্র থানা এলাকায় তল্লাশি চলছে।’ কোতোয়ালী থানা এলাকার সকল মসজিদ, মাজার এবং শপিং মলসমূহের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

এর আগে পুলিশের সব ইউনিটে ৩১ মে শুক্রবারে জঙ্গি হামলার আশঙ্কার বার্তা যায়। বিশেষ করে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বর্ণনা করা হয় কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের ওই গোপন বার্তায়। এতে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দিন হিসেবে বলা হয় ৩১ মে শুক্রবার ও ১ জুন শবেকদরের সন্ধ্যাকে। ওই গোপন বার্তায় হামলার সম্ভাব্য সময়, স্থান বা লক্ষ্যবস্তুও বলে দেওয়া হয়। সর্তকতামূলক ব্যবস্থা নিতে পুলিশের সব ইউনিটকে ১৩টি নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ কারণে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই চট্টগ্রাম মহানগরীর সব থানায় বিশেষ তল্লাশি ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের প্রবেশ পথে পুলিশের সতর্ক অবস্থান ছিল। মসজিদে আসা মুসল্লী শাহজাহান জানান, এমন মহিমান্বিত রাতে মসজিদে ইবাদাতের যে গুরুত্ব তার বিবেচনা কোন হুমকিই আমাদের ঘরে আটকে রাখতে পারবে না। কারণ জঙ্গিগোষ্ঠী সমাজের বিচ্ছিন্ন অংশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের দাঁড়াতে দেবে না। এই বিশ্বাস ও মনোবল আমাদের আছে।

জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে গিয়ে দেখা যায় পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সতর্ক রয়েছে গোয়েন্দা পুলিশও। সিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মির্জা সায়েম মাহমুদ বলেন, কমিশনার স্যারের নির্দেশনায় সিএমপি নগরবাসীর নিরাপত্তায় সার্বিকভাবেই প্রস্তুত। কাউকে কোন সুযোগ নিতে দেওয়া হবে না।

গরীবুল্লাহ শাহ (রাহ) মাজারে গিয়েও একই চিত্র দেখা যায়। যে যার মতো ইবাদতে ব্যস্ত। স্বদেশ হাসনাত নামের এক মুসল্লী জানান, এই কবরস্থানে আমার পূর্বপুরুষ শুয়ে আছেন। এখানে এসে ইবাদত করার পাশাপাশি তাঁদের কবর জিয়ারত করি। কবরস্থানে যখন দাঁড়াই তখন শরীর মন জুড়িয়ে যায়।

নগরীর মেহেদীবাগের সিডিএ জামে মসজিদে এসে দেখা যায়, পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও মসজিদে এসে ইবাদত করছেন। ফাতেম বেগম নামে এক নারী মুসল্লী বলেন, এই মসজিদে নারীদের জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থা আছে। আমরা নিয়মিত নামাজ আদায় করতে মসজিদে আসি। শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা যথেষ্ট। আমরা কোন শঙ্কায় শঙ্কিত নই।

চান্দগাঁও জামে মসজিদের খতিব অধ্যাপক নিজাম উদ্দীন জানান, এই মহিমান্বিত রাতে মসজিদে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ঢল নেমেছে। বিপথগামীদের কোন হুমকিই কাউকে ঘরে বন্দি করে রাখতে পারেনি। তদুপরি বিকেল থেকে পুলিশ-র‌্যাব এলাকায় টহল দিয়েছে। মানুষের মাঝে কোন শঙ্কা কাজ করেনি। আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করেছে এই মহিমান্বিত, সম্মানিত রাত।

এফএম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!